গুল্লু থামিয়ে দিয়ে বলল, “কেন? আমাদের প্রজেক্ট পছন্দ হয় না? আমরা কি রাস্তা থেকে এসেছি? আমাদের প্রজেক্ট কি ফালতু প্রজেক্ট?”
“না, না, ফালতু কেন হবে?”
“তাহলে কেন ভিডিও করছেন না?” গুল্লু তখন ছাত্রছাত্রীদেরকে বলল, “তোরা দরজাটা বন্ধ করে দে। আমাদের সব কয়টা প্রজেক্ট ভিডিও না করে কেমন করে যায় আজকে দেখে নেব।”
সাংবাদিকদের মুখ একটু ফ্যাকাশে হয়ে গেল, এবং চারিদিক এক নজর দেখে তারা দ্রুত ভিডিও করতে শুরু করল।
এদিকে রিমি ক্লাশ নাইনের ইনকিউরেটর প্রজেক্ট থেকে দুটি মুরগির বাচ্চা নিয়ে এসেছে, একটা কালো আরেকটা লালচে। মিঠু দুটো স্ট্র নিয়ে এসেছে, মাঝখানে কেটে চার টুকরো করে সেগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে মুরগির ডানার সাথে লাগিয়ে দিল। তারপর ড্রয়িং বোর্ডে ছোটো ছোটো হাত এঁকে সেটা স্ট্রয়ের মাথায় স্বচ্ছ টেপ দিয়ে লাগিয়ে নিল। বিষয়টা খুবই হাস্যকর কিন্তু সাংবাদিকদের কিছুক্ষণ নিশ্চয়ই বিভ্রান্ত করে রাখা যাবে।
মুরগি দুটো তাদের এই বিচিত্র হাত দুটো মোটেও পছন্দ করল না এবং খুবই বিরক্ত হয়ে ঠোঁট দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুলে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে। মিঠু আর রিমি মিলে কালো কাপড় দিয়ে আবার ভালো করে খাঁচাটা ঢেকে রাখল।
মিঠু তখন রিমির ব্যাকপ্যাকটা তার হাতে তুলে দিয়ে বলল, “নে, তুই এটা নিয়ে বের হয়ে যা। সাইন্টিস্ট চাক্ষুর বাসার দিকে হাঁটতে থাক। আস্তে আস্তে হাঁটিস।”
রিমি জিজ্ঞেস করল, “তোরা আসবি না আমার সাথে?”
“আসব। সাংবাদিকেরা যখন কালাচান ধলাচানের ভিডিও করতে গিয়ে মুরগির ভিডিও করে ফেলবে তখন তাদের মুখের অবস্থাটা কী হয়। দেখতে চাই।”
“আমিও দেখতে চাই।”
মিঠু মাথা নাড়ল, “না, না, তোর দেখতে হবে না। তা হলে দেরি হয়ে যাবে–যদি বুঝে যায় তোর ব্যাকপ্যাকে কালাচান ধলাচান তাহলে মুশকিল হবে।”
রিমি তখন এত বড়ো মজার দৃশ্যটা নিজের চোখে দেখবে না বলে একটু হতাশ হয়ে তার ব্যাকপ্যাকটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
ঠিক তখন দরজা খুলে সাংবাদিকেরা ভিতরে ঢুকে পড়ল–তাদের সাথে গুলও আছে। গুল্লু বলল, “মিঠু, এই যে এদের কথা বলছিলাম, কালাচান ধলাচানের ভিডিও করতে এসেছে।”
রিমি তাদের পাশ কাটিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। সাংবাদিকেরা চোখ সরু করে রিমিকে সন্দেহের চোখে একবার দেখল কিন্তু কিছু বলল না। মিঠু গুল্লুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ভিডিও করার পারমিশন কে দিয়েছে? তুই?”
গুল্লু বলল, “আমি দেই নাই। এরা জোর করে চলে এসেছে।”
মিঠু বলল, “তুই জানিস না, আমরা সাইন্টিস্ট চাচ্চুকে কথা দিয়েছি কোনো সাংবাদিককে এটা দেখতে দেব না?”
গুন্তু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, বলল, “আমি বলেছি। আমি অন্য সব প্রজেক্টে নিয়ে গেছি কোনোটার ভিডিও করতে চায় না। শুধু এইটা ভিডিও করবে।”
মিঠু এই প্রথমবার সাংবাদিকদের দিকে তাকালো, বলল, “হুশ!”
দুইজন সাংবাদিক, মাইক্রোফোন হাতে মানুষটা ফর্সা, ক্যামেরা ঘাড়ে মানুষটা কালো। ফর্সা মানুষটা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “কী বললে?”
মিঠু বলল, “কিছু বলি নাই। বলতে চাচ্ছি যে কালাচান ধলাচানকে ভিডিও করা যাবে না। আমরা করতে দিব না, আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেখার জন্যে সাইন্টিস্ট চাচ্চু আমাদেরকে দিয়েছেন। বলে। দিয়েছেন কোনোভাবে যেন সাংবাদিকেরা না দেখে।”
ফসা মানুষটা বলল, “শোনো ছেলে, এই স্কুল থেকে আমাদের কাছে। চিঠি গেছে, এইখানে সায়েন্স ফেয়ার হবে সেটা কাভার করার জন্য। আমরা কাভার করতে এসেছি, আমাদের ভিডিও করতে করতে দেবে না মানে? ফাজলেমি পেয়েছ?”
“আমাদের স্কুল থেকে প্রত্যেক বছর চিঠি পাঠানো হয়, কোনো বছর কোনো সাংবাদিক আসে না, এই বছর চলে এসেছেন, ব্যাপারটা কী?”
মাইক্রোফোন হাতে ফসা মানুষটা খুবই বিরক্ত হলো, তার মুখটা কেমন যেন বিকৃত হয়ে গেল। মুখ খিঁচিয়ে বলল, “সেই কৈফিয়ত আমার তোমাকে দিতে হবে? পুঁচকে ছোঁড়া তোমার সাহস বেশি হয়েছে?”
মিঠু শীতল চোখে মানুষটার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমার এই একটাই সমস্যা সাহস বেশি।”
ফসা মানুষটা ক্যামেরা হাতে কালো মানুষটাকে বলল, “ক্যামেরাটা রাখ, রেখে দরজা বন্ধ কর।”
ক্যামেরা হাতে মানুষটা বলল, “ওকে বস।” তারপর ক্যামেরাটা টেবিলে রেখে দরজাটা বন্ধ করল।
মাইক্রোফোন হাতে ফর্সা মানুষটা তার মাইক্রোফোনটা ক্যামেরার পাশে রেখে শার্টটা উপরে তুলল, মিঠু আর গুল্প চমকে উঠে দেখল, প্যান্টে একটা রিভলভার খুঁজে রাখা আছে। ফর্সা মানুষটা হিসহিস করে বলল, “এখন বুঝছিস আমরা কারা? আমরা তোর কাউয়ার ছবি তুলতে আসি নাই তোর কাউয়ারে নিয়া যাইতে আইছি।”
ফর্সা মানুষটা যতক্ষণ সাংবাদিক হওয়ার ভান করেছে ততক্ষণ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে, এখন খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে। তাদের তুই তুই করে বলছে। মিঠু চুপচাপ থাকার চেষ্টা করল কিন্তু তার মুখ থেকে বের হয়ে এল, “হুশ!”
“কী বললি?”
মিঠু মাথা নাড়ল, “কিছু বলি নাই। হুশ!”
কালো মানুষটা বলল, “বাদ দেন বস। আমাগো কাম আমরা করি।”
ফসা মানুষটা বলল, “কালা কাপড়টা তুল, কোটি টাকার কাউয়ারে দেখি।”
গুল্লু চমকে উঠে বলল, “কোটি টাকা?”