মিঠু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “সাংবাদিক?”
“হ্যাঁ। এই এত বড়ো বড়ো ক্যামেরা!”
“তুই নিজে দেখেছিস?”
“হ্যাঁ।” গুল্লু বলল, “হেডস্যারের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ শুনলাম ভিতরে টেলিভিশন চ্যানেলের কথা বলছে। তখন দাঁড়িয়ে ভিতরের কথা শোনার চেষ্ট করেছি।”
“কী শুনেছিস?”
একজন হেডস্যারকে জিজ্ঞেস করছে, “আপনার স্কুলে নাকি দুইটা কাক আছে যার দুইটা করে হাত, সেই হাত দিয়ে নাকি সবকিছু করতে পারে, ছবি আঁকতে পারে, ড্রিংক খেতে পারে?”
“সর্বনাশ! কেমন করে খবর পেল?”
“কোনো ছেলে না হলে মেয়ে বাসায় গিয়ে বলে দিয়েছে।”
মিঠু দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “খুন করে ফেলব আমি।”
রিমি বলল, “খুন করার অনেক সময় পাবি, আগে সাংবাদিকদের কীভাবে ঠেকাবি সেটা ঠিক কর।”
গুরু বলল, “মারপিট না করে ঠেকানো যাবে না। হেডস্যার টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখে মহাখুশি। এক্ষুনি নিয়ে আসবে।”
মিতু নাক দিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “হুশ!”
গুল্লু বলল, “কী করব বল। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ল্যাং দিয়ে ফেলে। দেব? হেডস্যার সাথে থাকলে সমস্যা।”
মিঠু কয়েক সেকেন্ড কিছু-একটা চিন্তা করল, তারপর গুল্লুকে বলল, “তুই যা, সাংবাদিকদের কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রাখ।”
“কীভাবে ঠেকিয়ে রাখব, ভয় দেখিয়ে? চাকু আছে কারো কাছে?”
রিমি বলল, “না না চাকু ফাকু দিয়ে হবে না। তুই সাংবাদিকদের ভুল জায়গায় নিয়ে যা ভুলিয়ে ভালিয়ে দেরি করিয়ে দে।”
“তোরা কী করবি?”
“এই সময়ের মাঝে কালাচান ধলাচানকে সরিয়ে ফেলব।”
“পারবি?”
“পারতে হবে।”
মিঠু গলা উঁচিয়ে ভলান্টিয়ারদের বলল, “তোরা এখন কাউকে ভিতরে ঢুকতে দিবি না।”
দরজায় দাঁড়ানো ছেলেমেয়েরা আপত্তি করল, “কেন ঢুকতে পারব?”
মিঠু বলল, “কালাচান ধলাচানকে ভিটামিন খাওয়াতে হবে। দিনে একবার ভিটামিন ওয়াই এক্স খাওয়াতে হয়।”
রিমি নীচু গলায় বলল, “ভিটামিন ওয়াই এক্স নাই গাধা।”
মিঠু ফিস ফিস করে বলল, “না থাকলে তোর সমস্যা কী?”
ছেলেমেয়েদের মিঠুর কথা শোনার কোনো আগ্রহ ছিল না, কিন্তু ভলান্টিয়াররা তাদের ঠেলে বের করে দিল। ঘরটা খালি হওয়ার সাথে। সাথে মিঠু বলল, “রিমি, তোর ব্যাকপ্যাকটা কই?”
রিমি টেবিলের তলা থেকে তার ব্যাকপ্যাকটা বের করে দেয়, “এই যে।”
“খালি কর।”
“খালি করব?” রিমি আপত্তি করল, “আমার সব দরকারি জিনিস খাতাপত্র–”
“তোর দরকারি জিনিস খাতাপত্রের খেতাপুড়ি। হুশ! খালি করে সবকিছু টেবিলের নীচে রাখ।”
রিমি তার ব্যাকপ্যাক খালি করে খাতাপত্র টেবিলের নীচে রাখল। মিঠু। তখন সাবধানে খাঁচার ভেতর থেকে কালাচান ধলাচানকে বের করে ব্যাকপ্যাকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলল। কাক দুটো একটু আপত্তি করল, একটু ডানা ঝাঁপটালো কিন্তু মিঠু সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল না। ব্যাকপ্যাকের জিপ টেনে বন্ধ করার পর কালাচান ধলাচান একটু শান্ত হয়ে যায়।
রিমি বলল, “খাঁচা খালি দেখেই বুঝে যাবে।
মিঠু দুই এক সেকেন্ড কিছু-একটা চিন্তা করে কালো কাপড়টা দিয়ে যাচাটা ঢেকে দিয়ে বলল, “বলতে হবে এখন কালাচান ধলাচান রেস্ট নিচ্ছে।”
রিমি বলল, “কিন্তু ক্যামেরার লোকজন তোর কথা শুনবে না। টান দিয়ে এই কাপড় খুলে ফেলবে…”
মিঠু বলল, “হুশ! ভিতরে কিছু-একটা রাখতে হবে। ক্যামেরার লোকজনের যেন বুঝতে সময় লাগে।”
“কী রাখবি?”
মিঠু মাথা চুলকাচ্ছিল, তখন রিমি বলল, “দুই তালায় ক্লাশ নাইনের ইনকিউবেটর প্রজেক্ট আছে। সেইখানে দুইটা মুরগি আছে।”
“মুরগি?”
“হ্যাঁ।”
“কালো?”
“কালো কি না মনে নাই। যে রঙেরই হোক, সমস্যা কী?”
“কোনো সমস্যা নাই। তুই আনতে পারবি?”
“দেখি চেষ্টা করে।” বলে রিমি বের হয়ে গেল।
মিঠু খালি ঘরটার মাঝে একটু অস্থির হয়ে হাঁটে, গুল্লু সাংবাদিকদের বুদ্ধি করে আটকে রাখতে পেরেছে কি না কে জানে!
.
গুল্লু ঠিকই সাংবাদিকদের আটকে রেখেছিল, সিঁড়ির গোড়ায় সে সাংবাদিকদের ধরল, চোখে-মুখে একটা আনন্দের ভাব করে বলল, “আপনারা এসেছেন? কতক্ষণ থেকে আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করছি। আসেন আমার সাথে–“
সাংবাদিকেরা একটু থতমত খেয়ে গেল, গুল্লু তখন তাদের হাত ধরে টেনে নিতে থাকে। একটা ঘরের ভিতরে ঢুকে ছেলেমেয়েদের বলল, “এই যে দেখ! টেলিভিশনের লোকজন চলে এসেছে আমাদের প্রজেক্ট দেখতে।”
টেলিভিশন ক্যামেরার সাথে আরেকজন মানুষ, হাতে মাইক্রোফোন, সে ইতস্তত করে বলল, “আমরা এসেছি কাক–”
গুরু বলল, “কী বলছেন, কাক! এই প্রজেক্ট দেখেন এইখানে শুধু কাক, চিল শকুন সব আছে!” গুল্লু এক নজর প্রজেক্টটা দেখে নেয়, পরিবেশবান্ধব নগরের পরিকল্পনা–তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভিডিও শুরু করেন। আমি বলি এইটা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব নগর। মানুষের যেরকম বন্ধু-বান্ধব থাকে, শহরেরও বন্ধু-বান্ধব থাকে পরিবেশেরও বন্ধু-বান্ধব থাকে। পরিবেশের বন্ধু-বান্ধব কারা? আমরা! তার কারণ আমরা কোনোরকম কালো ধোঁয়া ছাড়া ইলেকট্রিসিটি বানাতে পারি। সামনে একটা টারবাইন থাকবে আর আমরা একসাথে হাঁচি দেব। হাঁচির বাতাসে টারবাইন ঘুরবে ইলেকট্রিসিটি তৈরি হবে–”
ক্যামেরা হাতে মানুষটা গুল্লুর কথা শুনে হকচকিয়ে গেল। মাইক্রোফোন হাতে মানুষটা বলল, “আমরা এই প্রজেক্ট ভিডিও করতে আসি নাই। দুইটা নাকি কাক আছে যারা হাত দিয়ে ছবি আঁকতে পারে?”