ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন, গ্রিন গ্রহপুঞ্জে আমার ভবিষ্যদ্বাণী যেভাবে কাজে লেগেছে, সেরকম অনেক জায়গায় আমার ভবিষ্যদ্বাণীর ভুল বের হয়েছে। আমি খুব আন্তরিকভাবে চাই, এবারে আমার আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক। তা না হলে—
তা না হলে?
এখানে যে ভয়ংকর রক্তারক্তি হবে, সেটি কোনো মহাকাশযানের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটে নি। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন সোজা হয়ে তার চেয়ারে বসে মনিটরটি উজ্জ্বল করতে করতে বললেন, এবং সেই রক্তের রঙ হবে লাল ও নীল।
রিরা কোনো কথা বলল না, কিন্তু নিজের অজান্তেই সে কেমন জানি শিউরে ওঠে।
নিথিলিয়াম গ্যাস সিলিন্ডারের ভাল্বটি খোলার সাথে সাথে নীলমানবদের একজন উপরের দিকে তাকাল। ক্যাপ্টেন দাতে দাঁত ঘষে বললেন, বুঝতে পেরেছে।
রিরা একটু অবাক হয়ে বললেন, কেমন করে বুঝতে পেরেছে? নিথিলিয়াম বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস।
নিথিলিয়াম আমাদের কাছে বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস। নীলমানরদের ইন্দ্রিয় আমাদের থেকে অনেক বেশি তীক্ষ। তাদের ইন্দ্রিয়ের সংখ্যাও আমাদের থেকে বেশি।
রিরা নিশ্বাস আটকে রেখে বলল, এখন কী হবে মহামান্য ক্যাপ্টেন?
কিছুই হবে না। আগে হোক পরে হোক ওরা বুঝতে পারত, আমরা নিথিলিয়াম বা অন্য কোনো গ্যাস দিয়ে তাদের অচেতন করে ফেলব।
রিরা রুদ্ধশ্বাসে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইল। যে নীলমানবটি উপরের দিকে তাকিয়েছিল সে উঠে দাঁড়াল এবং রিরা বুঝতে পারল সে একজন নারী। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন বললেন, এই মেয়েটি সম্ভবত অন্তঃসত্ত্বা—অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের ঘ্রাণশক্তি খুব প্রবল হয়।
মেয়েটি অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দুই পা হেঁটে হঠাৎ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলল এবং তখন একসাথে সবাই উপরের দিকে তাকাল। তারা বুঝতে পারছে এই ঘরের ভেতর নিখিলিয়াম গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। তাদের মুখে কোনো ধরনের অনুভূতির চিহ্ন ফুটে উঠল না, স্থির হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রইল।
ক্যাপ্টেন বৰ্কেন ফিসফিস করে বললেন, বাতাসে এক পিপিএম নিথিলিয়াম থাকলেই মানুষ অচেতন হয়ে যায়। এদের দেখ দশ পিপিএম দিয়েও কিছু হচ্ছে না।
ক্যাপ্টেন বকেনের কথা শেষ হবার আগেই দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকা একজন নীলমান কাত হয়ে পড়ে গেল। রিরা বলল, অচেতন হতে শুরু করেছে।
হ্যাঁ। কিছুক্ষণের মাঝেই আরো দু-একজন কাত হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিও একসময় হাঁটু ভেঙে নিচে পড়ে গেল। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন নিচু গলায় বললেন,
চমৎকার। নিথিলিয়াম কাজ করতে রু করেছে। কিন্তু–
কিন্তু কী মহামান্য ক্যাপ্টেন?
কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে এখানে।
রিরা একটু অবাক হয়ে বলল, কী অস্বাভাবিক ব্যাপার?
আমি বুঝতে পারছি না—কিন্তু কিন্তু ক্যাপ্টেন বৰ্কেনের ভুরু কুঁচকে উঠল, তিনি অবাক হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে থাকা নীলমানবদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই দৃশ্যে কিছু একটা অস্বাভাবিকতা আছে, ব্যাপারটি তিনি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারছেন, কিছু বুঝতে পারছেন না।
কন্ট্রোলরুমের বড় মনিটরে হঠাৎ করে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ক্রশের ছবি ভেসে উঠল। ক্রুশ মাথা তুলে ক্যাপ্টেন বর্কেনের কাছে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইলেন। বললেন, আমার দলটি প্রস্তুত মহামান্য বর্কেন। আমরা কি ভেতরে যেতে পারি?
একটু দাঁড়াও ক্রুশ।
কেন মহামান্য ক্যাপ্টেন?
আমার কাছে কিছু একটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
সেটা কী মহামান্য বর্কেন?
আমি এখনো জানি না।
আমরা কি অপেক্ষা করব? আহত নীলমানবটির কিন্তু অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে, তা ছাড়া নিথিলিয়াম খুব তাড়াতাড়ি অক্সিডাইজড হয়ে যায় আমাদের হাতে সময় বেশি নেই।
আমি জানি। ক্যাপ্টেন বৰ্কেন বললেন, তবুও একটু অপেক্ষা কর।
ক্রুশের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল, তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আপনি শুধু শুধু আশঙ্কা করছেন মহামান্য ক্যাপ্টেন। আপনি আমাদের ওপর ভরসা করতে পারেন। আমার দলটি অত্যন্ত সুগঠিত এবং দায়িত্বশীল। ভেতরে কোনো ধরনের অঘটন ঘটা সম্ভব নয়। তা ছাড়া নীলমানবেরা সবাই অচেতন হয়ে আছে। নিথিলিয়াম গ্যাসটি অত্যন্ত কার্যকর গ্যাস।
ক্যাপ্টেন বৰ্কেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বেশ। তোমরা ঢোকো।
রিরা ফিসফিস করে বলল, মহামান্য ক্যাপ্টেন, আপনি অনুমতি না দিলেই পারতেন। আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সাধারণত ভুল করে না।
ক্যাপ্টেন বৰ্কেন রিরার কথায় উত্তর না দিয়ে ভুরু কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রইলেন, ঘরের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নীলমানবেরা পড়ে আছে দৃশ্যটি দেখে মনে হয় কোনো পরাবাস্তব জগতের দৃশ্য।
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান শক্তিশালী আরগন লেজার দিয়ে বন্ধ ঘরের দরজা কেটে আলাদা করতে শুরু করতেই ক্যাপ্টেন বৰ্কেন লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন, চিৎকার করে বললেন, সর্বনাশ!
রিরা ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী হয়েছে? কী হয়েছে মহামান্য ক্যাপ্টেন?
ক্যাপ্টেন বৰ্কেন চিৎকার করে বললেন, থামো। থামো তোমরা–
কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, বিশাল দরজা হাট করে খুলে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। ভেতরের নিথিলিয়াম থেকে রক্ষা পাবার জন্য তাদের শরীরে বায়ুরোধক পোশাক, সেই পোশাকে তাদেরকে দেখাচ্ছে অতিকায় পতঙ্গের মতো। তাদের হতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলো দেখাচ্ছে খেলনার মতো।