রিরা কুশানের মাথাটা দুই হাতে চেপে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কুশানের দুই ঠোটের মাঝখানে নীল একফেঁটা রক্ত, সে স্থির চোখে রিরার দিকে তাকিয়ে আছে। কুশানের ঠোঁট দুটি নড়ে উঠল। কিছু একটা বলছে সে। রক্তের ফোঁটাটি চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। আবার ঠোঁট দুটি নড়ল কুশানের, কিছু একটা বলছে সে, রিরা শুনতে পাচ্ছে না।
রিরা কুশানের মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, না। না কুশান, না… না…
কুশান ফিসফিস করে বলল, মনে নেই রিরা—আমি তোমাকে আমার ভাগ্যটা দিয়ে দিয়েছিলাম! দেখেছ সত্যিই দিয়ে দিয়েছি।
রিরা চিৎকার করে বলল, না, না, না।
কুশান বলল, রিরা, তুমি আমার দিকে তাকাও।
রিরা কুশানের দিকে তাকাল। কুশান বলল, আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে আসছে। কিন্তু আমি যতক্ষণ দেখতে পারি, আমি তোমাকে দেখতে চাই রিরা। তুমি আমার হাত ধরে থাক—তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
রিরা কুশানের হাত ধরে তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে একদৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
ক্যাপ্টেন রিহান এবং তা উদ্ধারকারী দল অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল, অপরিচিত এই নীলমানবটি মারা যাবার পরও দীর্ঘ সময় মহাকাশচারী রিরা তার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
১৩. নাইনা গ্রহের জাতীয় সমাধিক্ষেত্র
নাইনা গ্রহের জাতীয় সমাধিক্ষেত্র যে সমাধিটিতে ফুল দেবার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এখনো মানুষ এবং নীলমানবেরা নিয়মিতভাবে উপস্থিত হয়, সেই সমাধিটি মহীয়সী রিরার। জনশ্রুতি আছে তার একক প্রচেষ্টায় চতুর্থ সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে মানুষ এবং নীলমানবের বিরোধের সমাপ্তি ঘটে। মানুষ এবং নীলমানবেরা এখনো গভীর আগ্রহ এবং ভালবাসা নিয়ে এই মহীয়সী মহিলার কথা স্মরণ করে।