সবাই শুয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনটি অত্যন্ত স্পষ্ট, হঠাৎ করে সে একটি ছেলেমানুষ চপলমতি বালিকায় পাল্টে গেছে। তাকে দেখে সবার এক ধরনের হিংসে হতে থাকে। ক্রিক এগিয়ে গিয়ে বলল, স্না, এবারে আমার অনুরন গোলকটি বের করে দাও!
শু ক্রিকের কথা শুনে আনন্দে খিলখিল করে হাসতে হাসতে ছেলেমানুষের মতো তার পিঠ চাপড়ে বলল, এই তো চাই! দেখি তোমার ভিতরে কী লুকিয়ে আছে। একটি তেজস্বী সিংহ নাকি একটা ধূর্ত ইঁদুর।
স্না ঠিক আগের মতো যত্ন করে ক্রিকের কনুইয়ের কাছের চামড়াটি চিরে অনুরন গোলকটি বের করে আনে। সাবধানে সেটি ক্রিকের হাতের তালুতে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার কেমন লাগছে ক্রিক?
সবাই ঝুঁকে পড়ে ক্রিকের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্রিক শুকনো মুখে বলল, একটু ভয় ভয় লাগছে!
ভয়?
হ্যাঁ।
ঠিক তখন তাদের মাথার উপর দিয়ে একটা নিশাচর পাখি উড়ে গেল, ক্রিক চমকে উঠে স্নাকে জড়িয়ে ধরে ফ্যাকাশে মুখে বলল, কী ওটা? কী?
শু খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, আমাদের ক্রিক মূষিক শাবকে পাল্টে গেছে। মূষিক শাবক!
ক্রিক ফ্যাকাশে মুখে বলল, সত্যিই আমার ভয়টা হঠাৎ বেড়ে গেছে। কেন জানি শুধু ভয় ভয় করছে।
স্না সাবধানে ক্রিকের শরীর থেকে বের করা অনুরন গোলকটি হাতে নিয়ে বলল, তোমার কি বেশি ভয় করছে? তাহলে এটা আবার তোমার শরীরে ঢুকিয়ে দিতে পারি।
ক্রিক মাথা নাড়ল, না, থাক! এটা আমার জন্যে সম্পূর্ণ নতুন একটা অনুভূতি। আমি একটু দেখতে চাই। তোমরা শুধু আমার কাছাকাছি থেকো, একটু শব্দ হলেই কেন জানি আঁতকে উঠছি।
ক্রিকের পর লনের শরীর থেকে তার অনুরন গোলকটি বের করা হল। লন এমনিতে চুপচাপ ভালো মানুষ কিন্তু অনুরন গোলকটি বের করার সাথে সাথে সে কেমন জানি তিরিক্ষে মেজাজের হয়ে গেল। যদিও সে নিজেই সবাইকে এখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনাটি দিয়েছে কিন্তু সে এখন এই ব্যাপারটি নিয়েই অসম্ভব বিরক্ত হয়ে উঠে অত্যন্ত রূঢ় ভাষায় সবাইকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। অনুরন গোলকের কারণে মানুষের মাঝে থেকে রূঢ় ব্যবহার মোটামুটিভাবে উঠে গেছে। ব্যাপারটি সবার কাছে এত বিচিত্র মনে হতে থাকে যে লনের রূঢ় ব্যবহারে কেউ কিছু মনে করে না, বরং বলা যেতে পারে সবাই ব্যাপারটি উপভোগ করতে শুরু করে!
রিফা তার অনুরন গোলক বের করতে রাজি হল না, হাতের এক চিলতে চামড়া কেটে শরীরের ভিতর থেকে গোলকটি বের করার কথা চিন্তা করতেই তার নাকি শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। স্নার পক্ষে তার নিজের অনুরন গোলকটি বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, কাজেই তাকে অন্যেরা সাহায্য করল। অভিজ্ঞতার অভাব বলে তার হাতের ক্ষতটি হল একটু গভীর এবং রক্তপাত বন্ধ করতে বেশ বেগ পেতে হল।
স্নার ভিতরে পরিবর্তনটি হল অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তার ভিতরে এক ধরনের বিষণ্ণতা এসে ভর করল। সে এমনিতেই স্বল্পভাষী, অনুরন গোলকটি বের করার পর সে আরো স্বল্পভাষী হয়ে। গেল। সে বিষণ্ণ চোখে আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ বসে রইল। শু খানিকক্ষণ স্নাকে হাসিখুশি করার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে রিফার দিকে মনোযোগ দিল। তাকে বলল, রিফা, আমরা সবাই আমাদের অনুরন গোলক বের করেছি। তোমাকেও বের করতে হবে।
আমার ভয় করে। রক্ত দেখলে আমার খুব ভয় করে।
দু ফোঁটা রক্ত দেখে ভয় পাবার কী আছে? আর যদি ভয় করে তাহলে চোখ বন্ধ করে থেকো।
রিফা জোরে জোরে মাথা নাড়ে, বলে, না, না, আমাকে ছেড়ে দাও!
লন খানিকক্ষণ রুষ্ট দৃষ্টিতে শু এবং রিফার দিকে তাকিয়েছিল, এবার মুখ বিকৃত করে ধমকে উঠে বলল, রিফা, তুমি পেয়েছটা কী? সবাই যদি তাদের অনুরন গোলক বের করতে পারে, তুমি পারবে না কেন?
ক্রিক নরম গলায় বলল,, রিফা, তুমিও বের কর, আমাদের খুব দেখার ইচ্ছে করছে আসলে তুমি কী রকম।
স্না কোনো কথা না বলে রিফার দিকে তাকিয়ে রইল। শু বলল, রিফা, রাজি হয়ে যাও। তোমার অনুভূতি যদি ভালো না লাগে সাথে সাথে অনুরন গোলকটি শরীরে ঢুকিয়ে দেব!
রিফা একটা নিশ্বাস ফেলে তার হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ঠিক আছে, বের কর। ব্যথা দিও না কিন্তু আমাকে।
স্না মাথা নেড়ে বলল, চিমটির মতো একটু ব্যথা পাবে তুমি। কিছু বোঝার আগেই তোমার অনুরন গোলক বের হয়ে আসবে।
স্না তার ধারালো চাকু দিয়ে সাবধানে এক চিলতে চামড়া চিরে রিফার গোলকটি বের করে আনে। রিফা দাতে দাঁত চেপে বসেছিল, এবারে সাবধানে বুকের ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দেয়। স্না জিজ্ঞেস করল, তোমার কেমন লাগছে রিফা।
বিফা মুখ তুলে তাকাল, বলল, একটু অন্যরকম লাগছে কিন্তু কী রকম বুঝতে পারছি।
রাগ? দুঃখ? আনন্দ?
না সেসব কিছু না। রিফা মাথা নাড়ল, একটু অন্যরকম।
কী রকম?
রিফা মুখ তুলে তাকিয়ে দুর্বলভাবে হাসার চেষ্টা করে বলল, খুব সুন্দর একটা গান শুনলে বুকের মাঝে যেরকম কাপুনি হয় সেরকম একটা কাঁপুনি হচ্ছে। এক রকমের উত্তেজনা!
উত্তেজনা?
হ্যাঁ। মনে হচ্ছে কিছু একটা কচকচ করে খেয়ে ফেলি!
শু আবার খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, সব সময় তোমার কচকচ করে কিছু একটা খেতে ইচ্ছে করে। খাওয়া ছাড়াও যে পৃথিবীর অন্য কিছু থাকতে পারে তুমি জান?
রিফা লজ্জা পেয়ে একটু হাসল, বলল, কিছু একটা ভালো লাগলেই আমার কচকচ করে খেতে ইচ্ছে করে!