লন একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ রিফা। আমরা জানি না প্রাচীনকালের মানুষের অনুভূতি কী রকম। আমাদের জায়গায় তারা থাকলে এতক্ষণে হয়তো ঝগড়া করত, খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করত, নিষ্ঠুরতা করত–তোমাকে নিয়ে মারামারি করত–
আমাকে নিয়ে?
হ্যাঁ। প্রাচীনকালে সুন্দরী নারী নিয়ে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে!
রিফা একটু হতচকিতভাবে লনের দিকে তাকাল এবং অন্য সবাই শব্দ করে হেসে উঠল।
হাসির শব্দ থেমে আসতেই মা একটু এগিয়ে এসে বলল, আমি একটা কথা বলি?
কী কথা?
আমরা গত দুদিন একটা অস্বাভাবিক কাজ করছি। ঠিক প্রাচীনকালের মানুষের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। এই কাজটা কি আরো একটু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি?
রিফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, কীভাবে?
আমাদের শরীরে যে অনুরন গোলক রয়েছে সেটা বের করে ফেলি।
স্নার কথা শুনে সবাই চমকে উঠে তার দিকে তাকাল, স্নার মুখ পাথরের মতো শক্ত। সে ব্যাপারটা নিয়ে ঠাট্টা করছে না, সত্যিই বলছে।
রিফা এক ধরনের আতঙ্কিত মুখে বলল, কী বলছ?
ঠিকই বলছি। এই আমাদের সুযোগ। বিশাল এক পাহাড়ের আড়ালে আমরা একত্র হয়েছি। মানুষজন সভ্যতা থেকে বহুদূরে! এখন আমরা আমাদের শরীর থেকে অনুরন গোলক বের করে সত্যি সত্যি প্রাচীনকালের মানুষ হয়ে যেতে পারি। যখন আমাদের মস্তিষ্কে অনুরন গোলক থেকে জৈব রসায়ন যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তখন আমরা আস্তে আস্তে আমাদের সত্যিকারের ব্যক্তিত্ব ফিরে পাব! কেউ হয়তো বের হব হিংসুটে, কেউ রাগী, কেউ অসৎ
রিফা এক ধরনের আহত দৃষ্টি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু কেন আমরা আমাদের ভিতরের খারাপ দিকটা বের করে আনব?
স্না মাথা নেড়ে বলল, খারাপ দিকটা বের করে আনব না রিফা, সত্যিকারের ব্যক্তিত্বটা বের করে আন। আর সেটা যে খারাপই হবে কে বলেছে? হয়তো দেখা যাবে কেউ একজন সামান্য একটু গোমড়ামুখী, কেউ একজন একটু বেশি লাজুক, কেউ একজন বেশি কথা বলে! এর বেশি কিছু নয়।
ক্রিক একটু এগিয়ে এসে বলল, কিন্তু তুমি শরীর থেকে অনুরন গোলক বের করবে কেমন করে? সেটা তো অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটা গোলক, শরীরের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হয়!
স্না একটু হেসে বলল, আমি হাসপাতালে কাজ করি, একজন শিশু জন্মানোর পর তার শরীরে প্রথম অনুরন গোলকটি আমি প্রবেশ করিয়ে থাকি। আমি জানি হাতের কনুইয়ের কাছে এটা স্থির হয়। ছোট একটা চাকু থাকলে আমি দুই মিনিটে অনুরন গোলকটা শরীর থেকে বের করে আনতে পারি।
সত্যি?
সত্যি। দেখতে চাও?
কেউ কোনো কথা না বলে চুপ করে স্থির দৃষ্টিতে স্নার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্না আবার বলল, আমরা এটা তো পাকাঁপাকিভাবে করছি না, যখন লোকালয়ে ফিরে যাব তখন আবার আমরা ঠিক ঠিক অনুরন গোলক শরীরে প্রবেশ করিয়ে নেব, আবার আমরা আগের মতো। হয়ে যাব।
শু একটু এগিয়ে এসে বলল, এটা পাগলামি এবং গোয়ার্তুমি। এর মাঝে বিন্দুমাত্র যুক্তি নেই। আমার ধারণা ব্যাপারটার মাঝে বেশ খানিকটা বিপদ রয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, আমি মানুষটা আসলে কী রকম আমার খুব জানার কৌতূহল হচ্ছে! তোমরা কে কী করবে জানি না, আমি আমার অনুরন গোলক বের করে নিয়ে আসছি।
শু এক পা এগিয়ে তার হাতটা মার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ব্যথা লাগবে না তো?
স্না পকেট থেকে চাকুটা বের করে বলল, তোমার চামড়াটা একটু কেটে ভিতর থেকে
গোলকটা বের করতে হবে, দুই ফোঁটা রক্ত বের হবে, একটু ব্যথা তো লাগবেই। মাটিতে বসে শুয়ের হাতটা চেপে ধরে কনুইয়ের কাছাকাছি একটা জায়গা হাত দিয়ে অনুভব করে অনুরন গোলকটির অবস্থানটা বের করে নেয়, তারপর চাকুর ধারালো ফলাটি দিয়ে খুব সাবধানে একটুখানি চিরে ফেলে, শু যন্ত্রণায় একটা শব্দ করে দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরল। স্না সাবধানে হাত দিয়ে জায়গাটা অনুভব করে কোথায় চাপ দিতেই টুক করে ক্ষুদ্র একটা গোলক বের হয়ে আসে। গোলকটি ছোট বালুর কণার মতো, স্না সেটাকে হাতের তালুতে নিয়ে শু’কে দেখিয়ে বলল, এই দেখ তোমার অনুরন গোলক।
শু তার কাটা জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে হঠাৎ খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। সবাই একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল, ক্রিক বলল, কী হল? হাসছ কেন?
শু হাসতে হাসতে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, জানি না হঠাৎ কেন জানি হাসি পেয়ে গেল। এইটুকু একটা জিনিস নিয়ে এত হইচই, হাসি পাবে না?
শু হঠাৎ আবার খিলখিল করে হাসতে থাকে।
স্না হাতের তালুর মাঝে রাখা অনুরন গোলকটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, মনে হয় শুয়ের ব্যক্তিত্ব পাল্টে যাচ্ছে। সে মোটামুটি জ্ঞানগম্ভীর মহিলা থেকে তরলমতি বালিকায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
শু হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যি?
তাই তো মনে হচ্ছে!
তুমি মনে হয় ঠিকই বলছ। আমার কেন জানি সবকিছুকেই মজার জিনিস বলে মনে হচ্ছে।
ক্রিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শুয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি তোমার ভিতরে কোনো ধরনের পরিবর্তন অনুভব করছ শু?
করছি! মনে হচ্ছে তোমরা সব বুড়ো মানুষের মতো গম্ভীর! মনে হচ্ছে তোমরা সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করছ, কোনোকিছু সহজভাবে নিতে পারছ না! মনে হচ্ছে জীবনটা এত গুরুত্ব দিয়ে নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই! জীবনটা হচ্ছে স্ফূর্তি করার জন্যে!