তাই নাকি?
হ্যাঁ। যাই হোক তুমি বল কী বলছিলে।
আমার নাম বব লাস্কি। তুমি আমাকে বব বলে ডেকো। আমি সান হোজের এরো কম্পিউটেশান থেকে এসেছি। আমি সফটওয়ার ডিভিশনের একজন ডিভিশন ম্যানেজার। তুমি আমাদের যে নমুনাটি পাঠিয়েছিলে আমি সেটা দেখেছি। এক কথায় বলা যায় অবিশ্বাস্য!
শওকত মাথা নেড়ে বলল, আমারও তাই ধারণা।
তুমি তার জন্যে যে দামটা চাইছ সেটা বলতে গেলে প্রায় বিনে পয়সা।
শওকত হাসল, বলল, আমি জানি।
বব লাস্কি টেবিলে হাত রেখে একটু এগিয়ে এসে বলল, ব্যাপারটা একটা রহস্যের মতো, তুমি কেমন করে এটা করলে? বিশেষ করে এই দেশে, যেখানে টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট বলতে গেলে নেই।
চেষ্টা করলে সব হয়। তাছাড়া ব্যাপারটা টেকনোলজিনির্ভর নয়, শ্রমনির্ভর। একজন মানুষের শ্রম, কিন্তু শ্রম সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তোমাদের দেশে থাকতে শুরু করেছিলাম কিন্তু সেখানে থাকতে পারলাম না।
যদি কিছু মনে না কর, জিজ্ঞেস করতে পারি কেন?
শওকতের কোমল মুখে হঠাৎ কাঠিন্যের ছাপড়ে। সে মাথা নেড়ে বলল, খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার অন্যকে বলার মতো কিছু নয়। তাছাড়া আমার ধারণা ব্যাপারটা তোমরা জান। এক মিলিয়ন ডলার দিয়ে তোমরা একটা জিনিস কিনতে এসেছ, সেই মানুষটি সম্পর্কে কি একটু খোঁজখবর নিয়ে আস নি?
বব লাস্কি একটু থতমত খেয়ে বিব্রত মুখে বলল, তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছ আমি আসলে ব্যাপারটা জানি। তুমি এত ছোট একটা ব্যাপারে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে চলে আসবে বিশ্বাস হচ্ছিল না।
শওকত বিষণ্ণ মুখে বলল, কোন ব্যাপারটি বড় কোনটি ছোট সেটা একজন মানুষের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। তুমি হয়তো জান আমার মানসিকতা খুব চড়া সুরে বাঁধা। তাছাড়া আমি আমার দেশকে খুব ভালবাসি, সেটাকে হেয় করে কিছু বলা হলে আমার শুনতে ভালো লাগে না। যাই হোক, আস আমরা কাজ শুরু করে দিই। কী বল?
হ্যাঁ। বব লাস্কি এটাচি কেটা টেবিলের উপর রেখে বলল, এই যে এখানে এক মিলিয়ন ডলার। এক শ ডলারের নোটে।
শওকত এটাচি কেসটা খুলে এক নজর দেখে বলল, তুমি একসাথে এতগুলো নোট কেমন করে যোগাড় করেছ আমি জানি না, কিন্তু এখানে হংকঙে ছাপানো জালনোটের খুব প্রাদুর্ভাব, জান তো?
জানি।
আমি যদি নোটগুলো জাল কি না পরীক্ষা করে দেখি তুমি কি খুব অপমানিত বোধ করবে?
বব লাস্কি হেসে বলল, হয়তো করব। কিন্তু তুমি যদি পরীক্ষা না কর আমি ভাবব তুমি খানিকটা নির্বোধ!
শওকত এক শ ডলারের নোটগুলোর মাঝে থেকে একটা তুলে নিয়ে পকেট থেকে কমলা রঙের একটা কলম বের করে তার মাঝে একটা দাগ দেয়। খানিকক্ষণ সেই নোটটার দিকে তাকিয়ে থেকে সে নোটটা ভিতরে রেখে এটাচি কেসটা বন্ধ করে নিচে নামিয়ে রাখে।
বব লাস্কি জিজ্ঞেস করল, দেখলে না?
দেখেছি। একটা পরীক্ষা করে দেখেছি, সেটাই যথেষ্ট। যদি শুধু সেই নোটটাই সত্যি হয়ে থাকে এবং অন্য সবগুলো জাল তাহলে আমার কিছু করার নেই। বুঝতে হবে তুমি খুব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। এ রকম সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে আমি কখনো চ্যালেঞ্জ করি না!
বব লাস্কি হঠাৎ ভুরু কুঁচকে বলল, তোমার কি মনে হয় আমি খুব সৌভাগ্যবান?
শওকত বব লাস্কির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, হয়তো বা। তবে সৌভাগ্য খুব আপেক্ষিক ব্যাপার। এমনও হতে পারে যে তুমি খুব সাধারণ মানুষ কিন্তু আমি খুব ভাগ্যহীন! আমার সামনে তাই তোমাকে দেখাবে অসাধারণ ভাগ্যবান। যাই হোক, জীবন খুব জটিল ব্যাপার, কথা বলে সেটা বোঝা যায় না। তার চাইতে চল পাশের ঘরে তোমাকে আমার ভারচুয়াল রিয়েলিটির ল্যাবটা দেখাই।
বব লাস্কি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চল যাই। এটাচি কেসটা কী করবে?
থাকুক এখানে। কেউ আসবে না। আমার বাসায় কখনো কেউ আসে না।
পাশের ঘরটি বেশ বড়, সেখানেও আসবাবপত্র বলতে গেলে নেই। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের উপর একটা ব্যাক। সেখানে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। নানা রঙের এল. ই. ডি. জ্বলছে। টেবিলের অন্যপাশে একটা বড় মনিটর সামনে একটা কি–বোর্ড এবং ট্র্যাক বল। টেবিলের সামনে একটা গদি–আঁটা চেয়ার; চেয়ারের উপর একটা হেলমেট, মোটরসাইকেল চালানোর সময় যেরকম হেলমেট পরে দেখতে অনেকটা সেরকম। চেয়ারটি থেকে নানা ধরনের তার বের হয়ে এসেছে। হাতলে হাত রাখার জায়গাতে বেশ কিছু সেন্সর। চেয়ারের নিচে পা রাখার জায়গা দেখে গাড়ির এক্সেলেটরের কথা মনে পড়ে। বব লাস্কি খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, এটাই সেই অসাধারণ হার্ডওয়ার।
শওকত মাথা নেড়ে বলল, এটাই সেই হার্ডওয়ার। অসাধারণ কথাটা আমি ব্যবহার করব না, এর মাঝে অসাধারণ কিছু নেই। সব আমি বাজার থেকে কিনেছি। রিস্ক প্রসেসর লাগানো বেশ অনেকগুলো স্পার্ক ইঞ্জিন স্ট্যান্ডার্ড বাস দিয়ে জুড়ে দেয়া হয়েছে। প্রসেসর যেটুকু মেমোরি নিতে পারে পুরোটাই দেয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টা করে ক্লক স্পিডটা দ্বিগুণ করে দিয়েছি। এর প্রসেসিং পাওয়ার এখন একটা ছোটখাটো সুপার কম্পিউটারের সমান।
সত্যি?
হ্যাঁ। চেষ্টা করে আমি দশ মিপস পর্যন্ত তুলতে পারি। কিন্তু হার্ডওয়ারটুকু তো সহজ, এর আসল কাজ হচ্ছে সফটওয়ারে। তোমাদের যে নমুনাটা পাঠিয়েছিলাম সেটা ছিল একটা ছোট অংশ। ইচ্ছে করলে তুমি আজকে পুরোটা দেখতে পার।