আমরা অতি দ্রুত রেফ নামের মানুষটির ধ্বংসের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম। মহান বিজ্ঞান কাউন্সিলের কাছে এটি খুবই তুচ্ছ বিষয়। বিজ্ঞান কাউন্সিলকে এই অধিকার দেয়া হয়েছে। চিকিৎসার-অতীত মানসিক রোগীকে ধ্বংস করার আইন আছে। একমাত্র বিজ্ঞান কাউন্সিলই এই আইন প্রয়োগ করতে পারে। কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনগত কোন জটিলতা নেই।
আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মানসিক রোগীদের বিষয়ে প্রবল ভীতি কাজ করছে। এক সময় ছিল যখন তাদের পুড়িয়ে মারা হত। আবার একটা সময় ছিল যখন তাদের বস্তায় ভরে সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হত। পরবর্তিতে মানবসমাজ সামান্য সহনশীলতা দেখায়, তারা মানসিক রোগীদের মেরে না ফেলে অপরাধীদের যেভাবে সমাজ থেকে আলাদা করে রাখা হত সেভাবে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করে। প্রায় একশ বছর এই ব্যবস্থাটি চালু থাকে। একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে আবারো মানসিক রোগীদের ধ্বংস করে ফেলার আইন পাস হয়। কিছুক্ষণ আগে আপনারা এই আইনই প্রয়োগ করলেন।
এমরান টি বললেন, তাতে সমস্যাটা কি?
সিডিসি বলল, কোন সমস্যা নেই।
সমস্যা না থাকলে দীর্ঘ বক্তৃতার কারণ কি?
দীর্ঘ বক্তৃতার কারণ হল, আমি শুধু বর্তমানের সমস্যা দেখি না, ভবিষ্যতের সমস্যাও দেখি আমার মধ্যে একটি সফটওয়ার আছে ফোর্থ অর্ডার প্রবাবিলিটি ভেক্টর এনালিসিস প্রোগ্রাম। এই সফটওয়ারের সাহায্যে আমি যে-কোন বর্তমান ঘটনাকে ভবিষ্যতের কো-অর্ডিনেটে ফেলতে পারি।
খুবই ভাল কথা।
শুধু এইটি ফেলতে পারছি না।
পারছ না কেন?
ফোর্থ অর্ডার প্রবাবিলিটি ভেক্টর এনালিসিস মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের ক্ষেত্রে কাজ করে না।
এটা জানা ছিল না।
সিডিসি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার কথা বলা শুরু করল। তবে এবারে সে ঠোট মুছল গাঢ় সবুজ রঙের রুমাল দিয়ে।
আমি আরেকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। আমি অতি প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত যত মানসিক রোগী আছে তাদের সবার কেইস হিস্ট্রি জোগাড় করেছি। সেখান থেকে একটি কৌতূহল-উদ্দিপক বিষয় বের করা গেছে। বিষয়টি হচ্ছে আমি লক্ষ করেছি মানসিক রোগীদের মধ্যে অনেকেই একই সঙ্গে অন্য কোন সময়ে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
এমরান টি বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ যে রেফ্ যা বলছে অতীতেও অনেক রোগী তা বলেছে।
হ্যাঁ আমি তাই বলতে চাচ্ছি।
এটাই কি স্বাভাবিক না। তারা সবাই বিশেষ কোন মানসিক রোগে ভুগছে।
আমি মনে করি রোগের এই বিশেষ প্যাটার্নটি নিয়ে আমাদের আরো চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
আমি তা মনে করি না।
আজ যদি রেফ্কে নষ্ট করে দেয়া হয় তাহলে এই বিশেষ দিকটি নিয়ে গবেষণার বড় একটা সুযোগ আমরা হারাব। এটা কি ঠিক হবে?
খুবই ঠিক হবে। কারণ তোমার কথার সূত্র ধরেই বলছি এ ধরনের রোগী অতীতে যেমন পাওয়া গেছে, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে। কাজেই গবেষণা করার জন্য রোগীর অভাব হবে না। আমাকেও রোগী হিসেবে পেতে পার। কিছুদিন হল আমার মনে হচ্ছে আমি একই সঙ্গে এই পৃথিবীতে আছি আবার একই সঙ্গে কৃষ্ণ গহ্বরের টানেলের ভেতর সঁতার কাটছি। কাজেই সভা সমাপ্ত।
বিজ্ঞানীরা সচরাচর সেন না। এমরান টির কথায় অনেকেই হেসে ফেললেন। সিডিসি সভা সমাপ্তির ঘঘাষণা দিল। এমরান টি সিডিসির দিকে ঝুঁকে এসে বললেন আমি লক্ষ করেছি যে কোন কাউন্সিল মিটিং-এ তুমি ঠোট মোছার জন্যে একটা লাল রুমাল ব্যবহার কর। এর কারণ কি?
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে করি। আজ অবশ্যি একটা সবুজ রুমালও ব্যবহার করেছি। আমার দিকে মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে এই কাজটা করা হয়।
আমিও তাই ভেবেছিলাম। এসো কফি খাওয়া যাক। ও আচ্ছা তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার মনেই থাকে না যে তুমি আমাদের কেউ না…
সিডিসি বলল, আমাদের বাহ্যিক গঠন এমন করা হয়েছে যে আমি ইচ্ছে। করলে আপনার সঙ্গে কফি খেতে পারি।
ও হ্যাঁ তা তো পারই। তাহলে এসো কফি খেতে খেতে গল্প করি।
আপনি কি সত্যিই আমার সঙ্গে গল্প করতে চাচ্ছেন?
না গল্প করতে চাচ্ছি না—তবে তোমার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানতে চাচ্ছি।
বলুন।
তুমি কি সত্যি মনে কর রেফ্ একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়?
আমি অবশ্যই সেরকম মনে করি।
আমি মনে করি না।
আপনিও মনে করেন। মনে করেন বলেই আবারো প্রশ্নটি এসেছে। শুধু আপনি না, আপনার বিজ্ঞান কাউন্সিলও মনে করে। তার চেয়েও বড় কথা বিজ্ঞান কাউন্সিল রেফ নিয়ে ভয়াবহ শংকার ভেতর আছে। বিজ্ঞান কাউন্সিল মনে করছে এই মানুষটি হুমকিস্বরূপ।
তুমি মনে করছ সে হুমকিস্বরূপ না?
সিডিসি সহজ গলায় বলল, মানুষটিকে যদি মেরে ফেলা যায় তাহলে সে হুমকিস্বরূপ না। আর যদি মেরে ফেলা না যায় তাহলে অবশ্যই হুমকিস্বরূপ।
মেরে ফেলা যাবে না কেন?
আপনাকে আমি এক বিশেষ শ্রেণীর মানসিক রোগীর কথা বলেছি যারা দাবি করত তারা দুটি ভিন্ন অবস্থানে বাস করে।
হ্যাঁ বলেছ।
এই শ্রেণীর মানসিক রোগীদের সবাই দীর্ঘদিন বেঁচেছেন। তাদের আয়ু স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। এবং এ রকম দুজনের কেইস হিস্ট্রি আছে যাদেরকে ভুলক্রমে এমন ওষুধ দেয়া হয়েছিল যাতে তৎক্ষণাৎ তাদের মৃত্যু হবার কথা। তা কিন্তু হয় নি। আরেকটি কেইস হিস্ট্রিতে পেয়েছি ওদের একজন ঝড়ে নৌকাডুবিতে পড়েছিল। নৌকার সমস্ত আরোহী মারা গেলেও সে মারা যায় নি।