তুমি মহামুর্থ।
হতে পারে। সেই সম্ভাবনাও আছে।
অধিবেশন শুরু হয়েছে
অধিবেশন শুরু হয়েছে।
হলঘরের মতো একটি গোলাকার কক্ষ। চক্রাকারে চল্লিশটি গদি,আটা চেয়ার সাজান। একটা সময় ছিল যখন চল্লিশ জন বৃত্তের মতো বসতেন। আজ এসেছেন ন জন। এদের একসময় একটা করে নাম ছিল। এখন এদের কোনো নাম নেই কারণ দীর্ঘ জীবনের এঘেয়েমি কাটাতে তাঁরা নাম বদল করতেন। কুড়ি-পঁচিশ বছর পর পর দেখা গেল সবাই নাম বদল করছেন। কাউন্সিল অধিবেশনগুলোতে তাই নামের প্রচলন উঠে গেছে। এখন সংখ্যা দিয়ে এঁদের পরিচয়।
অধিবেশনের শুরুতেই অনুষ্ঠান পরিচালনার সভাপতি নির্বাচিত করা হল। সভাপতি হলেন তৃতীয় মানব, একসময় যার নাম ছিল রুহুট। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। শপথ, বাক্য উচ্চারণ করলেন–
মানব সম্প্রদায়কে রক্ষা করা আমাদের প্রথম
কর্তব্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সঠিক পথে পরিচালনা
করা আমাদের দ্বিতীয় কর্তব্য।
শপথ-বাক্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আট জনের সবাই ডান হাত তুললেন। এর মানে হচ্ছে শপথ-বাক্যের প্রতি এঁরা আনুগত্য প্ৰকাশ করছেন। সভাপতি বললেন, এবার আমি মূল কম্পিউটার সিডিসিকে অনুরোধ করব তাঁর প্রতিবেদনটি পেশ করার জন্যে।
সিডিসির গলা প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই শোনা গেল।
আমি সিডিসি বলছি। অমর মানবগোষ্ঠীর সবাইকে অভিবাদন জানাচ্ছি। সমগ্ৰ বিশ্বের মোট মানবসংখ্যা হচ্ছে নয় কোটি একত্ৰিশ লক্ষ ছাপান্ন হাজার নয়। শত ছয় জন। এদের মাঝ থেকে দুজনকে আলাদা ধরতে হবে। কারণ এই দুজন আছে নিষিদ্ধ নগরে।
প্ৰথম শহরে আছে আট কোটি পঞ্চাশ লক্ষ। দ্বিতীয় শহরে পঞ্চাশ লক্ষ। বাকিরা তৃতীয় শহরে। বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন যে স্তরে আছে তাতে প্রথম শহরে আরো পাঁচ লক্ষ মানুষ বাড়ান যেতে পারে। আমি সুপারিশ করছি আরো পাঁচ লক্ষ বাড়ান হোক।
সিডিসি থামতেই প্ৰস্তাবটি ভোটে পাঠান হল। কোনো রকম সিদ্ধান্ত হল। না। তিন জন মানুষ বাড়াবার পক্ষে মত দিলেন। দুজন বিপক্ষে মত দিলেন। বাকিদের কেউ ভোট দিলেন না। সিডিসি আবার তার রিপোর্ট শুরু করল,
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিকিরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আমি এ বিষয়ে এর আগেও সর্বমোট চল্লিশটি অধিবেশনে বলেছি এবং প্রস্তাব করেছি। যেসব স্থানে বিকিরণের পরিমাণ দুই আর-এর কম, সেসব স্থানে মানব-বসতি স্থাপন করা যেতে পারে।
প্ৰস্তাবটি ভোটে পাঠানো হল। সবাই এর বিপক্ষে ভোট দিলেন। সিডিসি আবার শুরু করল,
আমাদের বেশ কিছু জটিল যন্ত্রপাতি উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বে অনেক বার করা হয়েছে। আমি আবারো করছি। আমি…
সভাপতি হাত দিয়ে ইশারা করতেই সিডিসি থেমে গেল। সভাপতি বললেন, সিডিসির রিপোর্টগুলো খুবই ক্লান্তিকর হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আমি একটা ভোট দিতে চাই। আপনাদের মধ্যে যারা মনে করছেন সিডিসির রিপোর্ট ক্লান্তিকর, তারা হাত তুলুন। সবাই হাত তুললেন, একজন তুললেন না। তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সভাপতি বললেন, সিডিসি, তোমার রিপোর্টে উপদেশের অংশ সব বেশি থাকে।
আমাকে এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ সমস্যার প্রতি আপনাদের সতর্ক করে দেয়া আমার দায়িত্ব।
আমরা তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না।
যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হবে। পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়। পৃথিবীর একমাত্র স্থায়ী জিনিস হচ্ছে আনন্দ।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন কোনো আবিষ্কার হচ্ছে না। তার কোনো প্রয়োজনও আমরা দেখছি না। পৃথিবী একসময় জ্ঞানবিজ্ঞানের স্বর্ণশিখরে ছিল। তার ফল আমরা দেখেছি। ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কথা তোমার অজানা থাকার কথা নয়।
আমি মনে করি সব সময় একদল মানুষ তৈরি করা উচিত যারা জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনা করবেন।
মূর্খের মতো কথা বলবে না। আমাদের দ্বিতীয় শপথ— বাক্যটিই হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সঠিক পথে চালান। এটা সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেয়ার বিষয় নয়। আমি এই প্রসঙ্গ ভোটে দিতে চাই। যাঁরা আমার সঙ্গে একমত, তারা হাত তুলুন।
দুজন হাত তুললেন না, তারা গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন। সিডিসি বলল, আমার রিপোর্ট এখনো শেষ হয় নি। আপনার অনুমতি পেলে শেষ করতে পারি। সভাপতি বললেন, তোমার বকবকানি শোনা কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না।
আমি কি তাহলে ধরে নেব। আমার রিপোর্ট শেষ হয়েছে?
তোমার যা ইচ্ছা তুমি ধরে নিতে পার।
বেশ তাই।
আমি যেসব প্রশ্ন করব, শুধু তার উত্তর দেবে। উত্তরগুলো হবে সংক্ষিপ্ত। সম্ভব হলে শুধু মাত্র হ্যাঁ, এবং নার মধ্যে সীমাবন্ধ। তোমার নিজস্ব মতামত জাহির করবে না। তোমার মূল্যবান মতামতের কোনো প্রয়োজন দেখছি না। বুঝতে পারছ?
পারছি।
প্রথম প্রশ্ন : তৃতীয় শহরের মানুষরা কি সবই সুখী?
হ্যাঁ সুখী। মহা সুখী। শারীরিকভাবে সুখী, মানসিকভাবে সুখী। তাদের খাবারের সঙ্গে মিওনিন মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা তাদের সুখী হবার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যা দেখছে তাতেই সুখী হচ্ছে। তারা যদি চোখের সামনে একটা হত্যাদৃশ্যও দেখে, তাতেও তারা সুখ পাবে।
বাঁকাপথে প্রশ্নের উত্তর দিও না। তুমি কি বলতে চাও, তাদের সুখের যথেষ্ট উপকরণ নেই, তবু তারা সুখী?
না, তা বলতে চাই না। সুখের উপকরণের কোনো অভাব নেই।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : প্রথম শহরের মানুষরা কেমন আছে?
তাদের আপনারা যেভাবে রাখতে চেয়েছেন, সেভাবেই আছে। সব সময় একটা চাপা আতঙ্কের মধ্যে আছে। তাদের জীবনের একটিই স্বপ্ন, কখন দ্বিতীয় শহরে যাবে। দ্বিতীয় শহরের কল্পনাই তাদের একমাত্ৰ কল্পনা। একদিন দ্বিতীয় শহরে যাবে, সেই আনন্দেই তারা প্ৰথম শহরের যন্ত্রণা সহ্য করে নিচ্ছে।