নাম পছন্দ হয়েছে?
পছন্দ হয়েছে। আপনি কী খাবেন?
কফি। আগুন-গরম কফি এবং বাদাম।
আগুন-গরম বলতে আপনি ঠিক কতটুকু গরম বোঝাচ্ছেন?
এমন গরম যে মুখে নেয়ামাত্র জিব পুড়ে যায়। কফির সঙ্গে তুমি আমাকে দেবে বাদাম। খোসাওয়ালা বাদাম। আমি খোসা ছাড়িয়ে খাব।
আপনাকে খুব আনন্দিত মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ আমি আনন্দিত। আনন্দের কারণ জানতে চাও?
আমার কৌতূহল কম। তবে আপনি যদি আনন্দের কারণ বলতে চান, আমি শুনব।
আনন্দের প্রধান কারণ হচ্ছে আমি তোমাদের সিডিসিকে তার মুখের উপর গাধা বলে দিয়েছি।
গাধা বলাটা কি খুব অসম্মানসূচক?
অসম্মানসূচক তো বটেই।
অন্যকে অসম্মান করছেন, এটাই কি আপনার আনন্দের উৎস?
না আমার আনন্দের আরো উৎস আছে। শুনতে চাও?
আপনি বললে শুনব। তার আগে আপনি যদি আমাকে তিন মিনিট সময় দেন আমি আপনার কফি এবং বাদাম নিয়ে আসতে পারি। আগুন গরম কফির ব্যাপারটা আমি এখননা বুঝতে পারছি না। কফি মুখে নেয়ামাত্র যদি জিব পুড়ে যায় তাহলে সেই কফি খাবেন কিভাবে?
খাব না। কফির মগ হাতে নিয়ে বসে থাকব। খাবার হাতে নিয়ে বসে থাকার মধ্যেও আনন্দ আছে।
এলা কফি আনতে গেল। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমার আনন্দ ক্ৰমেই বাড়ছে। কারণটা কী? আনন্দে অভিভূত হবার মতো তেমন কিছু আসলে ঘটে নি। তাহলে এত আনন্দিত হচ্ছি কেন? এলা কফির মগ এবং বাদাম এনে রাখল।
এলা!
বলুন।
আমি এত আনন্দিত কেন বুঝতে পারছি না।
যে সব কারণে মানুষ আনন্দিত হয়, সেই কারণগুলি এক এক করে বিবেচনা করে দেখুন।
এটা মন্দ বল নি। এস আমরা দুজন মিলে ভেবে দেখি, প্রথমত আমার অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয় নি। আগে যা ছিল এখনো তাই আছে।
এলা বলল, আপনি কোন একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, এখন সেই চিন্তা নেই।
এখানে তুমি ছোট্ট একটা ভুল করেছ এলা। আমি কখনোই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম না। তোমাকে একটা কথা বলা হয় নি, আমি মানুষ হিসেবে মোটামুটি সৌভাগ্যবান। ভয়াবহ বিপদ থেকেও আমি কিভাবে না কিভাবে রক্ষা পেয়ে গেছি।
শুনে আনন্দিত হলাম।
শুনে তুমি কিছুই হও নি। আনন্দিত বা দুঃখিত হবার ক্ষমতা তোমার নেই।
জ্বি ঠিক বলেছেন। কথার কথা বলেছি।
বলেছ ভাল করেছ। এখন আমার কথা শোন। একবার কি হল শোন–১৩২ নাম্বার টানেলে দুর্ঘটনা ঘটল। মোট কর্মী ছিল একুশ জন। সবাই মারা গেল বেঁচে রইলাম আমি। অদ্ভুত না?
হ্যাঁ।
আরো অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আমরা যেখানে থাকি সেই ক্যাম্প–ক্যাম্প নাম্বার একুশে আগুন লেগে গেল। একমাত্র মানুষ যে বেঁচে রইল সে আমি।
অদ্ভুত।
কাজেই আমি নিশ্চিত—এ ধরনের বড় বিপদ আমি পার করতে পারব। তুমি কী বল?
আমি এই বিষয়ে কিছু বলছি না। ভাগ্য ব্যাপারটা আমাদের ধারণার বাইরে।
ভাগ্য তুমি বিশ্বাস কর না?
ভাগ্য বিশ্বাস করার কোন ব্যাপার না।
জ্ঞানী গাধাটাকে জিজ্ঞেস করে দেখা যেতে পারে সে বিশ্বাস করে কি-না। কিংবা মহাজ্ঞানী কোন পদার্থবিদ নাকি আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে—সেই গাধাটাকেও জিজ্ঞেস করা যায়।
আপনি সবাইকে গাধা বলছেন কেন?
বুঝতে পারছি না কেন। তোমাকেও গাধা বলতে ইচ্ছা করছে।
ইচ্ছা করলে বলুন।
গাধা, গাধা, গাধা, মহিলা-গাধা।
আপনার জন্যে একটা সুসংবাদ আছে।
বল।
আপনার ঘরের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এখন ইচ্ছা করলে আপনি ঘর থেকে বের হতে পারবেন। মহাকাশযানে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। কিংবা মহাজ্ঞানী পদার্থবিদ সুরাকে জিজ্ঞেস করতে পারবেন, উনি ভাগ্য বিশ্বাস করেন কি না।
এলা তুমি গাধা না, তুমি লক্ষ্মী একটি মেয়ে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
ঐদিন তুমি যে আমাকে মজাদার একটা ড্রিংক দিয়েছিলে তা কি আজ আরেকটু দিতে পার?
পারি। কিন্তু দেয়া ঠিক হবে না।
আমার ভাগ্যের এই হঠাৎ পরিবর্তনটা কেন হল তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ?
না পারছি না।
কেন ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে তা নিয়ে এই মুহূর্তে মাথা না ঘামালেও হবে। আনন্দ করার কথা, আনন্দ করে নেই। আমি চন্দ্রগীতিটা গাইবার চেষ্টা করলাম। গলায় সুর বসছে না। তাতে কী?
দরজা খুলে গেল
দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল। আমাকে কোন বোতাম টিপতে হল। না, কোন হাতল ঘোরাতে হল না। আমি দরজা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। দরজা আবার বন্ধ হয়ে গেল। আবার দরজায় হাত রাখলাম—আবার দরজা খুলল। একধরনের খেলা। দরজা বন্ধ করা এবং দরজা খোলার খেলা। এই খেলাটায় কি বিখ্যাত জ্ঞান-গাধা সিডিসি বিরক্ত হচ্ছে? আমি যে কাণ্ডটা করছি তা সে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। তাকে বিরক্ত করার জন্যে আমি যে কোন উদ্ভট কাজ করতে পারি। একলক্ষবার দরজা খুলতে পারি, দরজা লাগাতে পারি। আমি আবার দরজা খুললাম, আবার বন্ধ করলাম এবং আবারো, আবারো।
সিডিসি।
বলুন শুনতে পাচ্ছি।
আমার এই খেলাটা তোমার কাছে কেমন লাগছে?
আপনার মধ্যে শিশুসুলভ কিছু ব্যাপার আছে।
দরজা খোলা এবং বন্ধ করার ব্যাপারটা তোমার কাছে শিশুসুলভ লাগছে?
হ্যাঁ লাগছে।
আমি যদি দরজা খুলে গম্ভীর-ভঙ্গিতে বের হয়ে যেতাম তাহলে ব্যাপারটা কি সুলভ হত, বৃদ্ধসুলভ?
সেটা হত স্বাভাবিক আচরণ।
তোমার ধারণা আমি অস্বাভাবিক?
না আমার ধারণা তা না।
তোমাকে খুবই জরুরি একটা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি। প্রশ্নটা করা যাক, তুমি কি ভাগ্য বিশ্বাস কর?
না সুবিধাজনক প্রবাবিলিটিকে ভাগ্য বলা হয়। এবং অসুবিধাজনক প্রবাবিলিটির আরেক নাম দুৰ্ভাগ্য। উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করব?