তুমি গন্ধ পাচ্ছ?
খবৰ্দার তুমি করে বলবে না। খবর্দার।
আমার মাথায় যন্ত্রণা হতে শুরু করেছে। যন্ত্রণাটা বড়তে থাকবে। ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার করা দরকার।
জ্ঞান-গাধা তুমি কি এখনো আছ?
অবশ্যই আছি। আমার ঘরটা অন্ধকার করে দাও।
মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে?
হ্যাঁ হচ্ছে।
তোমার যখন মাথায় যন্ত্রণা হয় তখন কি তুমি খারাপ ধরনের কোন গন্ধ পাও?
হ্যাঁ পাই। এখন পাচ্ছি গাধার বোটকা গন্ধ। এবং আবারো বলছি আমাকে তুমি করে বলবে না।
সিডিসি বলল, আচ্ছা আপনি করেই বলছি। আপনি বলছেন মাথায় যখন যন্ত্ৰণা হয় তখন আপনি গাধার বোটকা গন্ধ পান। আমার ধারণা গন্ধ পেলেও আপনি অপরিচিত কোন গন্ধ পান? কারণ গাধা নামক প্রাণীর শরীরের গন্ধের সঙ্গে আপনি পরিচিত নন। প্রাচীনকালের এই প্রাণী এখন আর পৃথিবীতে নেই।
চুপ। আর কথা না। ঘর অন্ধকার করে দাও।
ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। খিদেও পেয়েছে। গরম কফি এককাপ খেতে পারলে হত। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। আমাকে নিয়ে কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। বিরাট বড় বিজ্ঞানীদের একটা দল যাচ্ছে তাদের সঙ্গে আমিও যাচ্ছি। কেন যাচ্ছি? আমি কি কোন গিনিপিগ? আমাকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা গোপন কোন পরীক্ষা করবেন?
একসময় এধরনের পরীক্ষা অনেক হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মাথায় ঢুকল তারা মানবিক আবেগসম্পন্ন রোবট তৈরি করবেন। বায়ো-রোবট। অর্ধেক রোবট অর্ধেক মানুষ। যে রোবটের ব্রেইনের একটা অংশ মানুষের মস্তিষ্ক থেকে নেয়া। তখন প্রচুর মানুষ মারা গেছে। আমাকে নিয়েও কি তারা তাই করবে? ব্রেইনটা শরীর থেকে বের করে নেবে। সেখানে নানা তার-টার ফিট করবে। আই সি বসাবে। তারপর আমাকে তারা জুড়ে দেবে কোন কম্পিউটারের সঙ্গে? কে জানে তারা হয়ত আমাকে সিডিসির সঙ্গে জুড়ে দেবে। তখন যদি সিডিসিকে কেউ গাধা বলে তাহলে রাগ করে সিডিসি ফুড-মেশিন বন্ধ করে দেবে। মহাকাশযানের কেউ আর খাবার পাবে না। তখন তাকে গাধা বললে উল্টা সেও গাধা বলবে।
তবে আমার মনে হচ্ছে না বিজ্ঞানীরা আমাকে নিয়ে কোন পরীক্ষা করবেন। মানুষ নিয়ে পরীক্ষা বিশেষ অধিকার আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আমি মানুষ তো বটেই। টানেলে কাজ করি, কাজেই নিম্নস্তরের মানুষ। নিম্নস্তরের মানুষ হলেও মানুষ। আমার ডি এন এ প্রফাইল বিজ্ঞান কাউন্সিলে রাখা আছে। সব মানুষের থাকে। শুধু পশুদের থাকে না। বিশেষ অধিকার আইন বলছে—
যাদের ডি এন এ প্রফাইল বিজ্ঞান কাউন্সিলে রক্ষিত তাদের নিয়ে কোনরকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে না।
বিশেষ আইন অবশ্যি মানুষ এবং পশুদের কথা আলাদা করে কিছু বলে নি। কারণ এমনও দিন আসতে পারে যখন পশুদের ডি এন এ প্রফাইলও বিজ্ঞান কাউন্সিলে রাখা হবে। তখন তাদের নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মহাকাশযানের আইনকানুন হয়ত আলাদা। মহাকাশযানের জন্যে হয়ত আছে অন্যরকম আইন। এই আইনে যা ইচ্ছা তা করা যায়।
আবার এও হতে পারে প্রক্সিমা সেনচুরির গ্রহের অতি জ্ঞানী মানুষদের কাছে তারা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে উপহার হিসেবে। উপহার প্রদান উপলক্ষে একটা উৎসবের মতো হবে। গলা কাঁপিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা বলবেন, আজ একটা মহান দিন। এই দিনে উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুটি জ্ঞানী সম্প্রদায় কাছাকাছি চলে এল। তাদের টিভি-ক্যামেরা ছবি তুলতে থাকবে। সেই ছবিতে বার-বার আমাকে দেখানো হবে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসব। পরের দিন তাদের সব পত্রিকায় আমার সম্পর্কে নানান খবর ছাপা হবে। এবং তারা তাদের চিড়িয়াখানায় আমাকে রেখে দেবে। যে খাচায় আমাকে রাখা হবে সেই খাচার বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে।
মানব
সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীর
বুদ্ধিমান প্রাণী।
পুরুষ। বয়স ২৫। গড় আয়ু ৭০
এই প্রাণী নিরীহ। একই সঙ্গে তৃণভোজী এবং মাংসাশী।
সংগীত প্রেমিক এবং শিল্প রসিক।
শিশুদের অনুরোধ করা যাচ্ছে তারা যেন একে
খোঁচা না দেয়। একে বাইরের খাবারও না দেয়।
সেই গ্রহের অতি উন্নত প্রাণীর ছেলেমেয়েরা ছুটির দিনে দল বেঁধে মানুষ দেখতে আসবে। আমি লাফঝাঁপ দেব। আমার কাণ্ডকারখানা দেখে তারা মজা পেয়ে আসবে। আমাকে বাদামটাদাম খেতে দেবে। আমি মহানন্দে বাদাম খাব। আচ্ছা সেই গ্রহের বাদাম খেতে কেমন? নিশ্চয়ই মজাদার। বুদ্ধিমান প্রাণীর গ্রহের বুদ্ধিমান বাদাম। হা হা হা।
আমার হাসি পাচ্ছে এবং বুঝতে পারছি আমার মেজাজ ভাল হতে শুরু করেছে। আমার বাদাম খেতে ইচ্ছা করছে। খাবার-টেবিলে বসে গরম কফি এবং বাদাম খাওয়া যেতে পারে। আমি রাগ করে বা মন খারাপ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। আমার চরিত্রের এটা কি কোন গুণ না দোষ? সিডিসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে সে কি মনে করে। সে নিশ্চয়ই জ্ঞানীদের মতো কিছু বলবে।
কম্পিউটারকে কথা বলতে শেখানো উচিত হয় নি। কম্পিউটার থাকবে কম্পিউটারের মতো। সে কেন মানুষের মতো কথা বলবে?
আমি খাবার-টেবিলে বসলাম। মেয়ে-রোবটটা সঙ্গে সঙ্গে চলে এল। আমি আনন্দিত গলায় বললাম, কেমন আছ এলা?
তার নীল চোখ দুবার দপদপ করে উঠল। সে কি বিস্মিত হচ্ছে? এলা নামে তাকে কখনো ডাকা হয় নি।
তারপর তোমার খবর কী এলা? ভাল আছে?
আমি ভাল আছি। আপনি আমাকে যে নাম দিয়েছেন তার জন্যে ধন্যবাদ।