আমাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা বলা সম্ভব হচ্ছে না কেন?
আগেই বলা হয়েছে আমি সব প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই।
এই মহাকাশযানে আমি ছাড়া আর কে কে আছেন?
বত্রিশ জনের একটা দল আছে। আপনি জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যে আমাদের সঙ্গে মহান পদার্থবিদ সুরা এবং লিলিয়ান যাচ্ছেন। অংকশাস্ত্রের মহান দিকপাল ফেমর যাচ্ছেন। চারজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট যাচ্ছেন। যাদের পৃথিবীর মানুষ চেনে। তিনজন রেডিওলজিস্ট আছেন। এরা পৃথিবীর মানুষের কাছে তেমন পরিচিত না হলেও এদের মেধা তুলনাহীন। ছয়জন কম্পিউটার বিজ্ঞানী যাচ্ছেন। যাদের ভেতর আছেন মহামান্য কার। আরো যাচ্ছেন…
থাক আর শুনতে চাচ্ছি না। আমি এদের কাউকেই চিনি না। চিনতে চাচ্ছিও না। আমি যেখানে যাচ্ছি তারাও কি সেখানে যাচ্ছেন?
হ্যাঁ। যেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে জায়গাটা পৃথিবী থেকে কত দূর?
প্রায় চার আলোকবর্ষ দূর। আলো চার বছরে যতদূর যাবে ততদূর। আলোর গতিবেগ আশা করি জানা আছে।
জ্বি না জানা নেই। আমি মোটামুটি মূখ বলতে পারেন।
আলোর গতিবেগ হল সেকেন্ডে ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ কিলোমিটার। প্রক্সিমা সেনচুরির দূরত্ব ৪ x ১০১৩ কিলোমিটার। কাজেই আলোর গতিতে যাত্রা শুরু করলে আমরা গন্তব্যে পৌঁছব…
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আমরা কি আলোর গতিতে যাচ্ছি?
পদার্থবিদ্যার সূত্র অনুযায়ী আমরা আলোর গতিতে যেতে পারি না। যে বস্তু আলোর গতিতে যাবে তার ভর হবে অসীম। যা সম্ভব না। আমরা আলোর গতির চেয়ে অনেক কম, আলোর গতির তুলনায় প্রায় হাস্যকর গতিতে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদের গতিবেগ ঘন্টায় মাত্র ৪০০,০০০কিলোমিটার। এই গতিবেগ বেড়ে হবে ঘণ্টায় ২০,০০০,০০০ কিলোমিটার। এই হল আমাদের সর্বশেষ গতিবেগ। এরচে বেশি গতিতে যাওয়া সম্ভব না।
আমার তো মনে হচ্ছে আমরা কোন কালেই প্রক্সিমা সেনচুরিতে পৌঁছতে পারব না?
পারব। হাইপার ডাইভ বলে একটি রহস্যময় ব্যাপার আছে। সর্বশেষ গতিসীমায় যাবার পর আমরা হাইপার ডাইভের সাহায্য নেব।
হাইপার ডাইভটা কী?
আগেই বলেছি হাইপার ডাইভ একটা রহস্যময় ব্যাপার। প্রক্সিমা সেনচুরির নিকটবর্তী গ্রহের অতি উন্নত কিছু প্রাণী হাইপার ডাইভ পদ্ধতি জানে। তারাই সাহায্য করে। আমরা অকল্পনীয় দূরত্ব অতিক্ৰম করি তাদের সাহায্যে।
এখন তারাই আমাদের সাহায্য করবে প্রক্সিমা সেনচুরির কাছে যেতে?
আশা করা যায় করবে। কারণ অতীতে সবসময় করেছে।
অতি উন্নত সেইসব প্রাণীরা দেখতে কেমন?
আমরা জানি না তারা দেখতে কেমন? তাদেরকে আমরা কখনো দেখি নি। তারা যে গ্রহে বাস করে সেই গ্রহে আমরা কখনো নামার অধিকার পাই নি। সম্ভবত এই প্রথম আমরা নামার অধিকার পাব। বিজ্ঞানীদের বিশাল দল সেই কারণেই যাচ্ছে।
আমি কোন বিজ্ঞানীও না, কিছুই না। আমি কেন যাচ্ছি?
আমি আগেই বলেছি, এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারছি না।
আপনি কি জবাবটা জানেন?
হ্যাঁ জানি।
আমার সঙ্গে যারা যাচ্ছেন তারা কি আমার কথা জানেন?
হ্যাঁ জানেন।
তারাও কি আমার মতো একটা ছোট্ট ঘরে বন্দি, না তারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন?
তারা কথা বলতে পারছেন।
আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে কেন?
আপনার এই প্রশ্নের জবাব আমি দিচ্ছি না।
যারা আমার সঙ্গে যাচ্ছেন তাদের যে কোন একজনের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই।
সেটা সম্ভব নয়।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও আর আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী না। আপনি যেতে পারেন।
আমার কোথাও যাবার উপায় নেই। আমাকে কারোর পছন্দ হোক বা না হোক আমি এই মহাকাশযানের সবারই সার্বক্ষণিক সঙ্গী।
আমার আরো কিছু প্রশ্ন করার ইচ্ছা ছিল। করতে ইচ্ছা করছে না। সিডিসির ওপর রাগ লাগছে। সিডিসি একটা যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। যন্ত্রের উপর রাগ করার কোন অর্থ হয় না। কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে এবং রাগটা ক্রমেই বাড়ছে। এটা আমার একটা সমস্যা। আমার রাগ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। একসময় মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকতে হয়। মহাকাশযানের আমার এই ঘর অন্ধকার করা যায় না। আর গেলেও আমি তা জানি না। সম্ভবত সিডিসি জানে, তাকে বললে সে হয়ত বাতিটাতি নিভিয়ে ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করতে পারবে।
সিডিসি আপনি কি আছেন?
হ্যাঁ আমি আছি।
আমি ঠিক করেছি আপনাকে তুমি করে বলব।
ইচ্ছা করলে বলবেন। সম্ভোধন কোন জরুরি বিষয় নয়।
অবশ্যই জরুরি বিষয়। সম্বোধন থেকে বোঝা যায় যাকে সম্বোধন করা হচ্ছে তার অবস্থানটা কী? তুমি মহাজ্ঞানী হলেও আমার কাছে তোমার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ না। কারণ তুমি আমার কোন কাজে আসছ না।
তুমি রেগে যাচ্ছ।
আমাকে তুমি করে বলবে না। আমি কোন কম্পিউটার নই। আমি মানুষ। তুমি অবশ্যই আমাকে সম্মান করে কথা বলবে। এবং আরেকটা কথা শুনে যাও, আমার ধারণা তুমি জ্ঞান-গাধা।
ভাল কথা।
ভাল কথা কি মন্দ কথা তা জানি না। তবে তুমি অবশ্যই জ্ঞান-গাধা। আরেকটা কথা শোন, জ্ঞান-গাধাদের গাধামি কিন্তু বাড়তে থাকে। যত দিন যায় তত সে আরো বড় গাধা হতে থাকে। একটা সময় আসে যখন তার একমাত্র কাজ হয় জ্ঞানের বোঝা বয়ে বেড়াননা। জ্ঞানকে কাজে লাগানোর কোন ক্ষমতাই তার থাকে না। তুমি সেরকম হয়ে গেছ। তোমার গা থেকে গাধাদের মতো গন্ধও বের হচ্ছে। কেউ টের পাচ্ছে না, কিন্তু আমি পাচ্ছি।