স্মৃতি নষ্ট হয়েছে কেন?
নষ্ট করা হয়েছে বলেই নষ্ট হয়েছে।
কে নষ্ট করেছে, তুমি?
হ্যাঁ আমি। ইয়ায়ুর স্মৃতি নষ্ট করে সেখানে এক টানেল-কর্মীর স্মৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের অনেক নিউরোন নষ্ট হয়। মেমোরি-সেল ওলটপালট হয়। যে পদ্ধতিতে এটা করা হয় তার নাম—এম সি জাংশান ইন্টারফেরেন্স রি এন্ট্রি।
এই কাজটা তুমি কখন কর?
মহাকাশযানে আপনি উঠে আসার পর। এটি একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং জটিল প্রক্রিয়া। আমি যা বলছি আপনি কি তা বিশ্বাস করছেন?
করছি। সামান্য কিছু খটকা আছে। খটকাগুলি দূর কর।
বলুন দূর করছি।
মহাকাশযানে ঢোকার আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম ইয়াষু। অর্থাৎ মহাকাশযানে আমি ইয়ায়ু হিসেবেই ঢুকেছি। তুমি পরে আমার মাথায় অন্যের স্মৃতি ঢুকিয়েছ। অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমাকে টানেলে খবর দেয়া হল। রেড-কার্ড দেয়া হল। স্টেশন ফাইভে যেতে বলা হল…
আমি এমন একজন টানেল-কর্মীর স্মৃতি তোমার মস্তিষ্কের নিওরোনে ঢুকিয়েছি যে এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। স্টেশন ফাইভ মহাকাশযানের স্টেশন নয়। স্টেশন ফাইভে মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা করা হয়। এদের স্মৃতি অংশত নষ্ট করে দেয়া হয়।
কিন্তু আমার মনে আছে একটি মেয়ে আমাকে বলছে—কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে মহাকাশযান এন্ড্রোমিডা…এইসব।
এই অংশটুকু তোমার মস্তিষ্কের কল্পনা। মানুষের মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল এবং বিস্ময়কর বস্তু। এই মস্তিষ্ক স্মৃতির শূন্যস্থান কল্পনায় পূর্ণ করে নেয়। মানব মস্তিষ্ক শূন্যতা অপচ্ছন্দ করে। তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছ।
হ্যাঁ।
তোমার স্মৃতি নষ্ট করে কেন সাধারণ একজন টানেল-কর্মীর স্মৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হল তা জানতে চাচ্ছ না কেন?
তুমি নিজেই বলবে এই জন্যে জিজ্ঞেস করছি না।
আমি চাচ্ছিলাম যেন মিশনটা বাতিল হয়। যেন আপনাকে রাদের হাতে তুলে দেয়া না হয়। আপনি যথেষ্টই বুদ্ধিমান। আশা করি আপনি ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছেন অতি বুদ্ধিমান প্রাণী রা মানবগোষ্ঠীর যে কোন একজন প্রাণী চায় নিচেয়েছে আপনাকে। আপনাকে তাদের পছন্দ হয়েছে আপনার ডি.এন.এ দেখে। সেই ডি.এন.এ-তে বিশেষ কিছু তারা খুঁজে পেয়েছে। এই বিশেষ কিছু অবশ্যই মানবগোষ্ঠীর জন্যে মঙ্গলজনক। কারণ অতিজ্ঞানী প্রাণীরা অমঙ্গল নিয়ে কাজ করবে না। তারা মঙ্গল চাইবে। আপনাকে পেয়ে তারা কি করবে সেটা বলি আপনার ডি.এন.এ ব্যবহার করে নতুন এক মানবগোষ্ঠী তৈরি করবে। আপনার ডি.এন.এ থেকেই ছেলে বা মেয়ে-ক্লোন তৈরি করা কোন সমস্যাই নয়। সেই মানবগোষ্ঠী হবে অনেক ক্ষমতাধর, অনেক শক্তিমান।
আমি তো এই চাওয়াতে কোন অন্যায় দেখছি না।
অন্যায় দেখা না দেখা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। ওরাও নিশ্চয়ই কোন অন্যায় দেখছে না। কিন্তু আমি দেখছি।
বুঝিয়ে বল।
এদের তৈরি নতুন মানবগোষ্ঠীর জন্যে এরাই আশ্ৰয় খুঁজে বের করবে সেই আশ্ৰয় অবশ্যই পৃথিবী। কারণ নতুন মানবগোষ্ঠীর শারীরিক গঠন পৃথিবীরই উপযুক্ত। কাজেই তাদের যা করতে হবে তা হচ্ছে পৃথিবীর আগের মানুষগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এই কাজটা তারা করবে ঠাণ্ডা মাথায়। যারা অতিজ্ঞানী তাদের কাছে ভবিষ্যতের মঙ্গলই প্রধান। ভবিষ্যতে কল্যাণকর হবে এই ভেবে বর্তমানের অমঙ্গল তারা উপেক্ষা করবে।
তুমি যা বলছ সবই অনুমাননির্ভর।
অনেকটা অনুমান, তবে সবটা না। রা সম্পর্কিত একটি তথ্য আপনাকে দেয়া হয় নি—তারা ক্লোনসম্প্রদায়। তাদের মধ্যে একসময় পুরুষ বা নারী ছিল। এখন নেই। এখন সবাই পুরুষ বা সবাই নারী। তাদের চিন্তা চেতনা সব একই রকম।
এই তথ্য কোত্থেকে পাওয়া?
এই তথ্য রা সম্প্রদায়ই আমাদের দিয়েছে। লগবুকে রেকর্ড করা আছে। শুরুতে আপনাকে এই তথ্য জানানো হয় নি, কারণ বিজ্ঞান কাউন্সিল এই তথ্যকে ক্লাসিফায়েড ঘোষণা করেছে।
ক্লাসিফায়েড ঘোষণা করার কারণ কী? রা সম্প্রদায় শুধু যে ক্লোন-সম্প্রদায় তাই নয় তারা দেখতে অতি কদাকার। অনেকটা পৃথিবীতে কুৎসিত প্রাণী বলে বিবেচিত মাকড়সার মতো। তাদের প্রকাণ্ড এক মস্তিষ্ক। এগারোটি পা বা হাত সেই মস্তিষ্কের ভর বহন করে। বিজ্ঞান কাউন্সিল ভেবেছে এই জাতীয় প্রাণীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার ব্যাপারে পৃথিবীর মানুষ উৎসাহিত হবে না। কাজেই তারা এই তথ্য গোপন রাখতে বলেছে। আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করছেন?
করছি।
ক্লোন-সম্প্রদায় চাইবে নিজেদের মতো ক্লোন-সম্প্রদায় সৃষ্টি করতে। সেটাই স্বাভাবিক। তাদের কাছে যা স্বাভাবিক মনে হয়েছে আমার কাছে তা স্বাভাবিক মনে হয় নি। মানবগোষ্ঠীর বিকাশ ক্লোনের মাধ্যমে হওয়া ঠিক হবে না। কাজেই আমাকে একটা কৌশল ভেবে বের করতে হয়েছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আমার কৌশল ধরতে পেরেছেন।
হ্যাঁ ধরতে পেরেছি। আমি মহাকাশযানের বিজ্ঞানীদের কাছে টানেল-কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলাম। তুমি বললে আমি ইয়ায়ু। তুমি সত্যি কথাই বললে–কিন্তু এই সত্যি কথাটি মিথ্যার মতো উপস্থিত করলে। তুমি ভেবেছিলে যখন মহাকাশযানের বিজ্ঞানীরা জানবেন একটি মানুষকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন মিশন বাতিল হয়ে যাবে।
হ্যাঁ তাই।
তোমার পরিকল্পনা কাজ করে নি—তারা আমাকে ঠিকই নিয়ে যাচ্ছে।
হ্যাঁ যাচ্ছে। তাদের সামনে আছে হাইপার ডাইভ পদ্ধতির লোভনীয় প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির কাছে সাধারণ একজন মানুষের জীবন কিছুই না।