সিডিসি : জানি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারকে মানুষ কখনো বিশ্বাস করে নি। আমি বুঝতে পারছি আপনারা এখন এই বিশেষ প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে আমাকে কার্যত অকেজো করে দেবেন। তারপরেও আমি আপনাদের মিশন বাতিল করতে বলব।
লিলিয়ান : কেন?
সিডিসি : একজন মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য গ্রহের প্রাণীদের হাতে তুলে দেয়া—মহাবিজ্ঞান কাউন্সিল তা অনুমোদন করে না।
লিলিয়ান : তুমি তাহলে এখন স্বীকার করছ যে এই মানুষটিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সিডিসি: আমি কোনকিছু স্বীকার করছি না, আবার অস্বীকারও করছি। না। আমি মহান বিজ্ঞান কাউন্সিলের একটি নীতিমালা আপনাদের বললাম।
লিলিয়ান : তোমার কথাই আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। মানবগোষ্ঠীর বৃহত্তর কল্যাণের কথা ভেবেই আমরা এই অন্যায়টা করব। কারণ হাইপার ডাইভ প্রযুক্তি আমাদের প্রয়োজন।
সিডিসি কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা অংশত তোমাকে অকেজো করে দেব। তোমার যে অংশটি বুদ্ধিমত্তা তাকে আলাদা করে ফেলা হবে এবং নষ্ট করে দেয়া হবে। তুমি এখন সাধারণ কম্পিউটারের মতোই কাজ করবে। আজকের অধিবেশন এখানেই শেষ।
লিলিয়ান উঠে দাঁড়ালেন। অন্য সবাই উঠে দাঁড়াল। আমি বললাম, আমার কিছু জরুরি কথা বলার ছিল। অত্যন্ত জরুরি।
লিলিয়ান বললেন, কাউন্সিল আপনার কোন কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না। এখন থেকে আপনি আপনার কেবিনে থাকবেন। কেবিন থেকে বেরুতে পারবেন না।
আমি বললাম, ম্যাডাম আপনি কি আসতে পারেন? হাসলে আপনাকে কেমন লাগে তা দেখতে ইচ্ছা করছে। আমি নিশ্চিত আপনি সারাজীবনে একবারও হাসেন নি। আচ্ছা ম্যাডাম, আপনি যখন সম্মানসূচক সাত তারা পেলেন তখন কি হেসেছিলেন? না তখনো হাসেন নি?
লিলিয়ান আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে হেসে ফেললেন। আমি তাঁর হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
চুপচাপ বসে আছি
আমি চুপচাপ বসে আছি। এলা আমার সামনে মগভর্তি কফি রেখে গেছে। তাকে আমি কফি দিতে বলি নি। এই কাজটি যে সে করল তার পেছনে কি কোন মমতা কাজ করছে? আমি হাতে মগটা নিলাম কিন্তু চুমুক দিলাম না। আমার কফি খেতে ইচ্ছা করছে না। তবে কফির গন্ধটা ভাল লাগছে।
আমার মাথায় অস্পষ্টভাবে কিছু একটা খেলা করছে। আমি স্বস্তিবোধ করছি না। আমি সামান্য টানেল-কর্মী, কফি-নামক এই মহার্ঘ পানীয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় থাকার কথা না। কিন্তু এই পানীয় আমার এত পরিচিত লাগছে কেন? কেন মনে হচ্ছে ইমা এবং আমি সমুদ্রের কাছে একটা জায়গায় কফির মগ হাতে বসে থাকতাম। সমুদ্র দেখতাম। আমাদের সামনে বাদাম ছড়ানো থাকত। কফির সঙ্গে বাদাম খেতাম। বাদাম ভেঙে দিত ইমা। বাদাম ভাঙার শব্দটা নাকি তার খুব প্রিয়। এইসব কি আমার কল্পনা?
আমি একদিন এলাকে বলেছিলাম, আগুন-গরম কফি দাও এবং বাদাম দাও। কেন বললাম? টানেল-কর্মী হিসেবে বাদাম এবং কফির বিলাসিতা তো আমার ছিল না।
ইমার কথা মনে হলেই কেন তার নাকের বিন্দু বিন্দু ঘামের ছবি মনে আসে। কল্পনার মেয়ের ছবিতে নাকে ঘাম থাকবে না। নাকের ঘাম একটি বাস্তব ছবি। এই ছবি কল্পনার হতে পারে না।
আপনি এত চিন্তিত কেন?
আমি চমকে তাকালাম। এলা প্রশ্ন করছে। আচ্ছা এই প্রশ্নটিও কি সে অভ্যাস-বসে করেছে, না মমতা থেকে করেছে? নিজের উপর বিরক্তি বোধ করছি। মমতা নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছি কেন? মমতার জন্যে আমার এই ব্যাকুলতা কেন? টানেল-কর্মীর জীবনে মমতার স্থান নেই। টানেল-কর্মী মমতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমার সিডিসির সঙ্গে কথা বলা দরকার। মহাকাশযানের বিজ্ঞানীরা সিডিসিকে অকেজো করে ফেলার কথা। অকেজো করার পরেও কি আমার সঙ্গে সে কথা বলতে পারবে?
সিডিসি তুমি কি আছ?
আমি আছি।
তোমাকে অকেজো করে ফেলার কথা। এখনো করে নি?
করেছে।
তারা কিভাবে এই কাজটা করেছে?
আমি জানি না কিভাবে করেছে। আমি যা বুঝতে পারছি তা হচ্ছে অসংখ্য মেমরি-সেলে আমি ঢুকতে পারছি না। আমি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারছি না। আমি নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তুমি কি এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে?
তোমার গলার স্বর এমন বিষন্ন শোনাচ্ছে কেন?
আমার গলার স্বর আগের মতোই আছে—কোন কারণে তুমি বিশ্ন হয়ে আছ বলে আমার গলার স্বর বিষন্ন লাগছে। তুমি কি বিষন্ন?
হ্যাঁ। সিডিসি তুমি আমার বিষন্নতা দূর কর। তুমি দাবি কর তুমি মানবগোষ্ঠীর বন্ধু। আমি সেই মানবগোষ্ঠীরই একজন। আমার প্রতি কি তোমার মমতা নেই?
আছে। এলা তোমাকে কফি দিয়ে গেল। কেন দিল? আমি দিতে বলেছি বলেই দিল।
সিডিসি আমি আসলে কে?
তুমি ইয়ায়ু।
এখনো বলছ আমি ইয়ায়ু?
হ্যাঁ এখনো বলছি। মহাকাশযানের বিজ্ঞানীরা ভুল করে আমাকে মিথ্যাবাদী সাজিয়েছেন। কম্পিউটার মিথ্যা বলে না। আমি মানুষদের মধ্যে যা ভাল তা শেখার চেষ্টা করি।
আমি তাহলে ইয়ায়ু?
হ্যাঁ।
পৃথিবীতে আমি কোথায় ছিলাম?
সমুদ্রের পাশে ছোট্ট একটা শহরে। শহরের নাম সিন্টো।
ইমা কে?
ইমা বিজ্ঞান কাউন্সিলের একজন সদস্যা। তার দায়িত্ব ছিল তোমার দেখাশোনা করা।
ইমার নাকে কি সবসময় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকত?
তা তো আমি বলতে পারব না। ইমার ব্যাপারটা আমি জানি তোমার স্মৃতি থেকে। তোমার স্মৃতির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। খুব সামান্যই আছে।