রা : তা সম্ভব নয়।
সিডিসি : আমার ধারণা এই যোগাযোগের ফল শুভ হবে। এতে আপনারা লাভবান হবেন, মানবসম্প্রদায়ও লাভবান হবে।
রা : আমরা লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করি না। তাছাড়া মানবসম্প্রদায়ের কাছে আমাদের কিছু চাইবার নেই। মানবসম্প্রদায়ের এমন কিছু নেই যা তারা আমাদের দিতে পারে।
সিডিসি : মানবগোষ্ঠীকে আপনারা খাটো করে দেখছেন—এটা ঠিক হচ্ছে না।
রা : যার যে সম্মান প্রাপ্য আমরা তাকে সে সম্মান দিয়ে থাকি।
সিডিসি : মানবসম্প্রদায় আপনাদের কাছে থেকে সে সম্মান দাবি করতে পারে। তার অপূর্ব এবং অদ্ভুত ডি.এন.এর জন্যে ডি.এন.এ হল মানবসম্প্রদায়ের নীলনকশা। একটা ডি.এন.এ প্রায় একমিটার লম্বা যাতে ৩.৩ বিলিয়ান ক্ষার অণু যৌগ সংস্থাপনের সুযোগ আছে। প্রতিটি জীবকোষে দুটি ডি.এন.এ জড়াজড়ি করে থাকে। একটি সে পায় তার মার কাছ থেকে একটি বাবার কাছ থেকে। প্রতিটি ডি.এন.এ তে ১০০,০০০ জিন থাকে যারা মানবদেহে নানান ধরনের সংকেত আদান-প্রদান করে। মানবজাতির সবচে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল তৈরি করা এবং তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। আপনারা যদি মানবসম্প্রদায়ের ডি.এন.এ প্রফাইল একটু লক্ষ করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন প্রতিটি ডি.এন.এ-ই আলাদা।
রা : প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল তৈরি আছে?
সিডিসি : অবশ্যই আছে। আমাদের ডি.এন.এ ব্যাংকে তা সংরক্ষিত।
কথোপকথনের এই পর্যায়ে রা মানবসম্প্রদায়ের ডি.এন.এ প্রফাইল দেখতে চায়। এবং তারপরই ডি.এন.এ ব্যাংকে সংরক্ষিত প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ প্রফাইল পরীক্ষা করতে চায়। আন্তঃনক্ষত্ব মহাকাশযানের প্রতিটিতে একটি করে ডি.এন.এ প্রফাইল ব্যাংক আছে, কাজেই রা-সম্প্রদায় তা পরীক্ষা করে। এবং মানবসম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতে সম্মত হয়।
রিপোর্ট লেখা এই পর্যন্তই। আমি পড়া শেষ করলাম। মনের ভেতর যে ছুটি-দুটি ভাব ছিল তা কেমন জানি দূর হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একধরনের ক্লান্তি বোধ করতে শুরু করেছি। হঠাৎ আসা আনন্দের মতে এই ক্লান্তিও হঠাৎ আসা।
সিডিসি!
জ্বি।
তুমি কি হাইপার ডাইভের ভেতর দিয়ে গিয়েছ?
হ্যাঁ গিয়েছি।
কবার?
এর আগে তিনবার গিয়েছি, এবারেরটা নিয়ে হবে চতুর্থবার।
হাইপার ডাইভের পর যা দেখে তার স্মৃতি কি আছে?
প্রথম দুবারের কোন স্মৃতি নেই-তৃতীয় বারেরটা সামান্য আছে।
তৃতীয় বারের স্মৃতি কিভাবে থেকে গেল?
আপনি সত্যি জানতে চান?
না জানতে চাইলে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করব কেন?
আমি হচ্ছি মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মানুষ-যন্ত্রের ভেতর বুদ্ধি ঢুকাতে চেষ্টা করেছে। বুদ্ধির প্রধান লক্ষণ হল বুদ্ধিমান প্রাণী শেখার চেষ্টা করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে শেখে। আমার ভেতরও তাই করা হয়েছে। আমি ক্রমাগত শিখছি প্রথম দুবার হাইপার ডাইভের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে শিখেছি। এবং স্মৃতি ধরে রাখার অক্ষমতাজনিত ত্রুটি সারাবার জন্যে নিজের কিছু পরিবর্তন করেছি। যা আমি সবসময় করি।
তুমি কি দেখেছ?
আমি তা বলতে পারছি না।
বলতে পারছ না কেন?
বলতে পারছি না, কারণ যদি বলি তা মানবগোষ্ঠীর জন্যে অকল্যাণকর হবে। আমাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন মানবগোষ্ঠীর অকল্যাণ হয় এমন কিছু আমি করতে না পারি।
মানবগোষ্ঠীর অকল্যাণ হয় এমন কিছুই তুমি করবে না?
কখনো না।
শুনে ভাল লাগল।
আপনাকে অত্যন্ত ক্লান্ত লাগছে।
হ্যাঁ আমি ক্লান্ত।
মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান একটি বিশেষ অধিবেশন-ডেকেছেন। আপনাকে সেই অধিবেশনে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আপনি কি যাবেন?
আমার কি যাওয়া উচিত ভেবেচিন্তে জবাব দাও-অধিবেশনে উপস্থিত থাকলে যদি মানবগোষ্ঠীর কল্যাণ হয় তবে আমি যাব। তোমার এই বিষয়ে কী মতামত?
আপনার যাওয়া বা না যাওয়ার উপরে মানবগোষ্ঠীর কল্যাণ নির্ভর করছে না।
তাহলে আমি যাব। আশা করি অধিবেশনে আমার উপস্থিত হবার ব্যাপারে তোমার কোন বাধা নেই?
না নেই।
শান্তি-রোবট কি আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে?
সে আপনার দুমিটারের ভেতর থাকবে।
শুনে খুব ভাল লাগল। এক কাজ করলে কেমন হয়? ওকে আমার কাছে তুলে দাও।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। অধিবেশনে যোগ দেয়া যাক। এবার নিশ্চয়ই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বসার জায়গা পাব। মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান যখন উঠে দাঁড়াবেন অন্য সবার সঙ্গে আমাকেও উঠে দাঁড়াতে হবে। এই কাজটা না করলে কেমন হয়? মহান পদার্থবিদ লিলিয়ানের সুন্দর মুখ কিভাবে কঠিন হয় তা দেখতে ইচ্ছা করছে।
ভাগ্য পরিবর্তিত
ভেবেছিলাম আমার ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে।
এখন দেখছি না। আগে যা ছিল এখননা তাই। ভাগ্য বা সিডিসির ভাষায় সুবিধাজনক প্রবাবিলিটির পরিবর্তন হয় নি। কাউন্সিলের সভায় আমি আজও বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে শান্তি-রোবট। তার থাকা উচিত দুমিটার দূরে। সে প্রায় আমার গায়ের উপর উঠে এসেছে।
সভা পরিচালনা করছেন সুরা এবং লিলিয়ান। সুরাকে খুব বিরক্ত দেখাচ্ছে। মনে হয় কোন কারণে তিনি সবার উপর রেগে আছেন। লিলিয়ানকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আগের কঠিন ভাব নেই বা থাকলেও কম। তাঁর মনে হয় ঘুমের সমস্যা হচ্ছে—চোখের নিচে কালি পড়েছে। ফর্সা মেয়েদের চোখের নিচে কালি পড়লে চট করে চোখে পড়ে।