আপনি সামান্য ভুল করছেন। মহাকাশযানে সাপ্তাহিক হিসেব রাখা হয় না। গ্যালাকটিক ক্যালেন্ডার রাখা হয়। টাইম ডাইলেশন হিসেবের মধ্যে ধরে সময় রাখা হয়। গ্যালাকটিক ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ 32116012. অবশ্যি এই হিসেবে মহাকাশযানের যাত্রীদের জৈবসময় ধরা হয় নি।
খামোকা বকবক করবে না। মানুষ যে কোন দিনকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। আমি ঘোষণা দিচ্ছি আজ ছুটির দিন—আজ রোববার।
জ্বি আচ্ছা। আমি রিপোর্ট এনে দিচ্ছি।
আমি যখন ঘুমে ছিলাম তখন কেউ কি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল?
মহান পদার্থবিদ লিলিয়ান করেছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে আপনি ঘুমুচ্ছেন, আপনাকে এখন বিরক্ত করা যাবে না।
ভাল বলেছ। তাকে বলে দেয়া উচিত ছিল আমি যখন জেগে থাকি তখনও আমাকে বিরক্ত করা যাবে না। আমাকে যখন-তখন বিরক্ত করার অধিকার শুধু একজনকেই দেয়া হয়েছে তার নাম ইমা।
আপনি বলেছেন ইমার কোন অস্তিত্ব নেই।
তাতে কী হয়েছে? আমি যদি গভীর ঘুমেও থাকি ইমা খবর দিলেই তুমি আমাকে ডেকে দেবে।
আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। যা-ই হোক আপনাকে যা বলার আমি বলে যাচ্ছি-মহান পদার্থবিদ সুরাও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁকে খুবই উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল।
বেশি রকম উদ্বিগ্ন?
জ্বি। উনি বলছিলেন অত্যন্ত জরুরি ব্যাপারে উনি কথা বলতে চান।
তুমি এক কাজ কর। রিপোর্টটা আমার হাতে দাও এবং আমি যেন সুরার সঙ্গে কথা বলতে পারি তার ব্যবস্থা করে দাও। কোন্ বোতাম টিপতে হবে, কোন্ ডায়াল ঘুরাতে হবে কিছুই তো জানি না।
আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আপনি শুধু সিডিসিকে বলবেন আপনি মহান সুরার সঙ্গে কথা বলতে চান।
আজ ছুটির দিন তো আমি খুবই ক্লান্ত। আমি কাউকে কিছু বলতে পারব না। যা বলার আমার হয়ে তুমি বলে দাও।
জ্বি আচ্ছা। আপনি কি আগে কথা বলবেন, না রিপোর্ট পড়বেন? আগে কথা বলব।
আমার কথা শেষ হবার আগইে পর্দায় সুরার মুখ দেখা গেল। তাঁকে আসলেই খুব চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে।
আমি হাসিমুখে বললাম, মহান সুরা! আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন?
হ্যাঁ চেয়েছি—তুমি ঘুমুচ্ছিলে। আমি বললাম, তবু তোমার ঘুম ভাঙাতে, সিডিসি রাজি হল না।
এখন ঘুম ভেঙেছে, বলুন ব্যাপারটা কী? তুমি যা ভেবেছ তা না।
আমি কী ভেবেছি যা ঠিক না।
ঐ যে তুমি বললে ল্যাঝিম সমীকরণের সমাধান চুরি করেছে। আসলে সে তা করে নি। পদার্থবিদ ভদ্ৰলোকও তোমার মতো ভেবেছিলেন। তিনি ল্যাঝিমের কপোট্রন খুলে পরীক্ষা করেছেন। ল্যাঝিম নির্দোষ।
তাহলে তো ব্যাপারটা জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
জট পাকাচ্ছে মানে? খুবই জট পাকিয়ে গেছে। আমি ভয়ংকর টেনশান বোধ করছি।
বই শেষ হতে কত বাকি? আর চল্লিশ পৃষ্ঠার মতো আছে।
আপনি দয়া করে দ্রুত বইটা শেষ করে আমাকে ব্যাপারটা কী জানান। আমার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
সত্যি কথা বলেছ। মন দিয়ে যে বইটা পড়ব তাও পারছি না। লিলিয়ান একটু পর-পর যোগাযোগ করছে। সে মিটিং-এর পর মিটিং করছে। মহাউত্তেজিত।
উত্তেজিত কেন?
তার ধারণা হয়েছে কম্পিউটার সিডিসি বিগড়ে গেছে। মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু তার হাতে সেহেতু যে কোন সময় একটা বড়রকমের দুর্ঘটনা ঘটবে। লিলিয়ান চাচ্ছে হাইপার ডাইভে যাবার আগেই পুরো ব্যাপারটা নিষ্পত্তি থোক।
আমরা কতক্ষণে হাইপার ডাইভে যাচ্ছি?
আমাদের হাতে সময় অল্পই আছে। এত অল্প সময়ে সবকিছুর সমাধান হওয়া প্রায় অসম্ভব। আমি নিজেও এই বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দিতে পারছি না—কারণ আমি ব্যস্ত।
জ্বি বুঝতে পারছি।
বইটা যে দ্রুত পড়ে শেষ করব তাও পারছি নাসাবধানে পড়তে হচ্ছে।
অবশ্যই সাবধানে পড়বেন। আপনি তো আর পদার্থবিদ্যার সূত্র পড়ছেন। না যে হুড়হুড় করে পড়ে যাবেন। আপনি পড়ছেন উপন্যাস। মন লাগিয়ে পড়তে হবে তো?
ঠিক বলেছ।
স্যার আমি তাহলে বিদায় নিচ্ছি। আপনি বইটা পড়ে শেষ করুন। তারপর কথা হবে।
সিডিসি তোমার কোন সমস্যা করছে না তো?
জি না করছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে। আমার ধারণা সে আমায় অতিরিক্ত খাতির করছে।
তুমি কি এতে বিস্মিত হচ্ছ?
না আমি বিস্মিত হচ্ছি না।
স্রুরা হাসিমুখে বললেন, আমিও বিস্মিত হচ্ছি না। এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে পরে কথা হবে।
কম্পিউটার সিডিসির তৈরি করা রিপোর্টটা আমি পড়তে শুরু করেছি। বেশ গুছিয়ে লেখা রিপোর্ট। পড়তে ভাল লাগছে। সিডিসি হয়ত আমার ডিএনএ প্রফাইল থেকে জেনে নিয়েছে আমি কী ধরনের লেখা পড়তে পছন্দ করি। সে সেভাবেই তৈরি করেছে। আমি কী ধরনের খাবার পছন্দ করি তা যদি তারা ডিএনএ প্রফাইল থেকে বের করতে পারে তাহলে কী ধরনের লেখা পছন্দ করি তাও বের করতে পারবে। আমি রিপোর্টটা পড়তে শুরু করলাম।
প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের
বুদ্ধিমান প্রাণী বিষয়ক
তথ্যাবলি
সারসংক্ষেপ :
১. প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের প্রাণীদের বিষয়ে আমাদের কাছে গবেষণা নির্ভর কোন তথ্য নেই।
২. প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহ সম্পর্কে আমাদের কাছে গবেষণা নির্ভর কোন তথ্য নেই।
আমরা তাদের সম্পর্কে কী জানি?
তারা আমাদের যা জানিয়েছে আমরা তাই জানি। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার তারা আমাদের তেমন কিছু জানায় নি। তারা নিজেদের সম্পর্কে কিছুই জানাতে আগ্রহী নয়। তারা শুধু জানতেই আগ্রহী। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রথম যোগাযোগ হয় মহাকাশযান স্টার ম্যাপ টুর মাধ্যমে। আপনার অবগতির জন্যে জানানো হচ্ছে মহাকাশযান স্টার ম্যাপ টু মানুষের তৈরি দ্বিতীয় নিউক্লিয়ার ফিউশন-নির্ভর মহাকাশযান। প্রথমটি মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। নিম্নলিখিত ফিউশান রিএকশান ছিল এই মহাকাশযানের ক্ষমতার উৎস ডিউটেরিয়ামট্রিটিয়াম⇒হিলিয়াম৪+ নিউট্রন+১৭.৬মিলিয়ান ইলেকট্রন ভোল্ট