জ্বি ধরে নিতে পারেন। যুক্তিবিদ্যা তাই বলে।
আমরা কি ধরে নিতে পারি না যে একটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলে সে তার প্রয়োজনে যে কোন ক্ষেত্রেই মিথ্যা কথা বলতে পারে।
জ্বি ধরে নিতে পারেন।
সুরা বললেন, আমার আসলে আর কিছু বলার নেই। আমার মাথা ঘুরছে। আমি এখন অবজারভেশন ডেকে চলে যাব। বইটা শেষ করব। হাতের বইটা শেষ না করা পর্যন্ত আমি আসলে কোন দিকেই মন দিতে পারছি না। কাজেই লিলিয়ান সিদ্ধান্তের দায়িত্ব আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। এখন তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই আমার সিদ্ধান্ত।
লিলিয়ান প্রায় বাচ্চামেয়েদের মতো অনুনয়ের গলায় বলল, আপনি এখন যেতে পারবেন না।
সুরা বললেন, কে বলল যেতে পারব না। এই দেখ যাচ্ছি।
তিনি স্টেজ থেকে নেমে হেঁটে চলে গেলেন। আমি হাত উঁচিয়ে বললাম, ম্যাডাম আমি কি একটা কথা বলতে পারি? কথাটা অত্যন্ত জরুরি।
লিলিয়ান গম্ভীর গলায় বললেন–বলুন।
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আমার পা ধরে গেছে। আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি আমার কেবিনে গিয়ে শুয়ে থাকতে পারি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অধিবেশন আপনাকে কেন্দ্র করেই আর আপনি কোন্ বিবেচনায় চলে যেতে চাচ্ছেন?
আমাকে নিয়ে অধিবেশন হলেও আমার এখানে কথা বলার সুযোগ নেই। আমি শুরুতে কিছু বলতে চেয়েছিলাম আপনি বলতে দেন নি। কঠিনভাবেই আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এখানে থেকে আমি কী করব।
এখন আমরা আপনার বক্তব্য শুনব।
এখন আমি নিজে কিছু বলব না। এবং কিছু মনে করবেন না আপনি মহান পদার্থবিদ হলেও আমার ধারণা আপনার বুদ্ধিবৃত্তি নিম্নপর্যায়ের। কম্পিউটার সিডিসিকে আমি গাধা বলে ডাকি। আপনি একজন মহিলা, আপনার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারি না। তবে আমার মতে আপনারই চলে যাওয়া উচিত হিমাগারে। এখন আমি কি কেবিনে ফিরে যেতে পারি?
পারেন। আমি চলে এলাম। আমার পেছনে পেছনে শান্তি-রোবটও চলে এল।
জট পাকিয়ে যাচ্ছে। সব কেমন জানি জট পাকিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশ্রেণীর দার্শনিক চিন্তা আমার মাথায় এসেছে। চিন্তাটা হচ্ছে—আমাদের জীবন লম্বা একখণ্ড রঙিন সুতা। এই সুতা আমরা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করি। তার নামই জীবনযাপন। কারো সুতা রঙিন, কারোটা আবার কালো। নাড়াচাড়া করার সময় অসাবধান হলেই সুতা জট পাকিয়ে যায়। কেউ-কেউ সেই জট খুলতে পারে, কেউ-কেউ পারে না। আর একবার যদি জট পেকে যায় তাহলে জট পাকাতেই থাকে।
বিছানায় শুয়ে
আমি বিছানায় শুয়ে আছি। ঘরের ভেতরটা আরামদায়ক। সামান্য শীত-শীত লাগছে। হালকা একটা চাদরে শীত কাটবে। আবার না হলেও চলবে। এই অবস্থাটাই আসলে আরামদায়ক। শুয়ে-শুয়ে গরম কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটা কোন বিজ্ঞানী এখন পর্যন্ত করেন নি কেন বুঝতে পারছি না। তারা কত কিছুই পারেন, এটা পারেন না কেন? মহাকাশযানে কোন মধ্যাকৰ্ষণ শক্তি থাকার কথা না, তারপরেও কিভাবে যেন ঠিক পৃথিবীর মতো lg মধ্যাকৰ্ষণ তৈরি করা হয়েছে। যারা এটা পারেন তারা আরাম করে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে গরম কফি খাবার ব্যবস্থাও করতে পারেন।
প্রক্সিমা সেনচুরির নবম গ্রহের মহা-মহা জ্ঞানী প্রাণীরা নিশ্চয়ই এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। আচ্ছা এই প্রাণীরা দেখতে কেমন? মানুষের মতো নিশ্চয়ই না। মাকড়সার মতো না হলেই আমি খুশি। যদি দেখা যায় ওরা মাকড়সার মতো তাহলে ভাল সমস্যা। হাজার হাজার মাকড়সা চারদিকে কিলবিল করছে। কেউ গায়ে উঠছে, কেউ গা থেকে নামছে, খুব কৌতূহলী একজন আমার কানের ফুটো দিয়ে তার একটা ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিল। কী সর্বনাশ!
উন্নত প্রাণীদের বিষয়ে মানুষের কাছে কোন তথ্য নেই, তা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিছু তথ্য অবশ্যই আছে। এবং এই তথ্য জানার অধিকার আর কারোর থাকুক বা না থাকুক আমার আছে। অবস্থাগতিকে মনে হচ্ছে আমার বাকি জীবনটা ওদের সঙ্গেই কাটাতে হবে। যাদের সঙ্গে কাটাব তাদের বিষয়ে আগে কিছুই জানব না তা হয় না।
শান্তি-রোবটটা আমরা দুমিটার দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একেবারই নড়ছে না। এখন তাকে লাগছে ঘরের আসবাবের মতো। তাকে কাপড় রাখার স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করলে কেমন হয়?
কাউন্সিলের সভায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে বুঝতে পারছি না। প্রথম সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত শান্তি-রোবটের হাত থেকে আমার মুক্তি। রোবটটা যখন যাচ্ছে না তখন ধরে নিতে হবে কাউন্সিলের সভা এখনো চলছে। জ্ঞানীদের সভা এত দ্রুত শেষ হয় না। সবাই সবাইকে জ্ঞান দিতে থাকবেন। জ্ঞানের পিচকিরি খেলা চলতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত সভা শেষ হবে সিদ্ধান্ত ছাড়া।
সিডিসিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারি সভা শেষ হল কি না। তাছাড়া সিডিসির সঙ্গে কিছুক্ষণ পোশগল্প করা যেতে পারে। অতি উন্নত প্রাণীরা মাকড়সার মতো কি না তাও জানা দরকার।
সিডিসি।
জ্বি।
কাউন্সিলের সভা কি চলছে না চলছে না?
সভা শেষ হয়েছে!
সভার সিদ্ধান্ত কী?
আপনার উপর থেকে শান্তি-রোবটের খবরদারি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবং চার ঘণ্টা পর আবার সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় আমার উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মনে হচ্ছে তারা তোমার বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকাচ্ছে।
হ্যাঁ সেরকমই মনে হচ্ছে। এবং এটাই স্বাভাবিক।
স্বভাবিক কেন?
স্বাভাবিক কারণ তাদের ধারণা আমি মিথ্যা বলেছি। এবং ওদের প্রথম সিদ্ধান্ত –তোমার উপর থেকে শান্তিবাহিনীর খবরদারি উঠিয়ে নিতে হবে, তা মানি নি।