তুমি মহাজ্ঞানী, তুমি জ্ঞান দান করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন আর শুনতে ইচ্ছা করছে না। আমি বরং এই প্রশ্নটা অন্যদের জিজ্ঞেস করব, এই মহাকাশযানে তোমার মত আরো কিছু মহাজ্ঞানী যাচ্ছেন-পদার্থবিদ অপদার্থবিদ কী জানি তাদের নাম বললে?
মহান পদার্থবিদ সুরা এবং মাহান পদার্থবিদ লিলিয়ান।
তাদের নামের আগে মহান বলাটা কি নিয়ম?
অবশ্যই নিয়ম। না বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
শুধু মহান বললেই হবে? নাকি মহান বলে পায়ে উপুড় হয়ে পড়ে যেতে হবে।
মহান বললেই হবে।
আমি যদি মহান না বলি তাহলে আমাকে কী ধরনের শাস্তি দেয়া হবে?
একহাজার ইউনিট পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে।
বল কি?
তাদের সাথে কথা বলতে হবে অত্যন্ত সাবধানে।
তাতো বটেই। একহাজার ইউনিট তো সহজ কথা না।
সবচে ভাল হয় তাঁদের সঙ্গে কথা না বলা। তাঁরা ডুবে থাকেন তাঁদের নিজের ভুবনে। অসাধারণ সব বিষয় নিয়ে তাদের মস্তিষ্ক সব সময় চিন্তা-ভাবনা করে, সেখানে যদি তাদের অতি সাধারণ কিছু জিজ্ঞেস করা হয় তখন সমস্যা হয়।
কী সমস্যা?
তাঁরা অতি সাধারণ প্রশ্নটাকেও মনে করেন জটিল প্ৰশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নানান জটিল চিন্তা করেন। তাঁদের বিরাট চিন্তাশক্তি সামান্য বিষয়ে প্রয়োগ করেন। এতে তাদের মেধার অপচয় হয়। এটা ঠিক না।
কাজেই তুমি বলছ ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস না করতে।
অবশ্যই। শুধু ভাগ্য কেন, কোন বিষয়েই তাদের কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক না।
রাতে ঘুম কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করতে পারি? না তাও জিজ্ঞেস করা যাবে না?
এ জাতীয় প্রশ্ন হয়ত-বা করা যেতে পারে। আপনি বরং একটা কাজ করুন, অবজারভেশন ডেকে চলে যান। সেখান থেকে নক্ষত্রপুঞ্জ দেখুন। মহান পদার্থবিদদের সঙ্গে আলাপের চেয়ে এটা আনন্দময় হবে।
আমি নিজের খুপরি থেকে বের হলাম। করিডোরের মতো লম্বাটে জায়গা। সবু করিডোর দুজন রোগা মানুষ একসঙ্গে হাঁটতে পারে এমন। করিডোরে নরম সিনথেটিক কার্পেট বিছানো। কার্পেটের রঙ সবুজ। হাঁটতে খুব আরাম। পা ডেবে যায়, আবার যেন ডাবে না। দুপাশে লোহার দেয়ালের মতো দেয়াল। দেয়ালের রঙও হালকা সবুজ। কিছুদূর হাঁটার পর আমার মনে হল সবুজ রঙের প্রতি এদের বিশেষ কোন দুর্বলতা আছে। চারপাশে যা দেখছি সবই সবুজ। কোনটা গাঢ়, কোনটা হালকা। আমি কোন্ দিকে যাচ্ছি তা বুঝতে পারছি না। অবজারভেশন ডেকে যাবার উপায় কী তা সিডিসিকে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিল।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সিডিসি তুমি কি আছ?
অবশ্যই আছি।
অবজারভেশন ডেকে যাবার পথটা জিজ্ঞেস করা হয় নি।
জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। আপনি ঘর থেকে বের হয়ে যে দিকেই যাবেন অবজারভেশন ডেকে উপস্থিত হবেন।
এখন যেদিকে যাচ্ছি সেদিকে গেলে অবজারভেশন ডেক পাব?
অবশ্যই পাবেন? উল্টোদিকে যদি হাঁটা দেই তাহলে?
তাহলে পাবেন। মহাকাশযানের ডিজাউনটাই এরকম। সমস্ত নদী যেমন সমুদ্রে মেশে, সমস্ত পথ তেমন অবজারভেশন ডেকে শেষ হয়।
সবুজ রঙের এমন ছড়াছড়ি কেন? তোমাদের কাছে অন্য কোন রঙ ছিল না? যা দেখছি সবই সবুজ।
মহাকাশযানের ভেতরের স্ট্রাকচার ফাইবারগ্লাসের। এর কোন রঙ নেই। আলো এমনভাবে ফেলা হয়েছে যে বুজ দেখাচ্ছে। সবকিছু সবুজ দেখাচ্ছে তার মানে আমরা নিরাপদে ভ্রমণ করছি। একসময় দেখবেন সবকিছু লাল দেখাচ্ছে তখন বুঝতে হবে আমাদের ভ্রমণ তেমন নিরাপদ নয়।
বিপজ্জনক ভ্ৰমণ কখন শুরু হবে?
আমরা একটা নিউট্রন স্টারের পাশ দিয়ে যাব। সে সময়ের ভ্ৰমণ খুব নিরাপদ নয়।
বল কি?
নিউট্রন স্টার ব্যাপারটা কি আপনি জানেন?
জানি না এবং জানার কোন আগ্রহও বোধ করছি না। বিপজ্জনক ভ্ৰমণ এইটুকু জানাই আমার জন্যে যথেষ্ট।
আপনার ভীত হবার কোন কারণ নেই। নিউট্রন স্টারের পাশ দিয়ে আমরা অনেকবার গিয়েছি। আমাদের সবকিছুই হিসেব করা আছে।
মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন সাহেবকে তারপরও বলবে সাবধানে চালাতে। হিসেবে ভুল হতে পারে।
কোন ভুল হবে না।
ক্যাপ্টেন সাহেবের নাম কী?
আমরা সে জাতীয় মহাকাশযানে করে যাচ্ছি যাতে কোন ক্যাপ্টেন থাকে না।
আপনা-আপনি চলে?
তাও না। মহাকাশযানটি আমি নিয়ন্ত্ৰণ করি।
বল কি?
মনে হচ্ছে আপনি খুবই বিস্মিত হয়েছেন।
হ্যাঁ বিস্মিত হয়েছি। তুমি তো কথাবার্তা বলেই সময় কাটাচ্ছ। জাহাজ চালাবে কখন?
আমার অনেকগুলি ইন্টারফেস। মাত্র একটা ইন্টারফেস আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছ আমি উল্টোপাল্টা কথা বলে রাগিয়ে দিলেও তোমার জাহাজ চালাতে কোন অসুবিধা হবে না?
না তা হবে না। নিউট্রন স্টার ব্যাপারটা কি আপনাকে বলব?
তুমি নিউট্রন স্টার ব্যাপারটা কী তা বলার জন্যে এত ব্যস্ত হয়েছ কেন? আমাকে জ্ঞানী বানানোর কোন দরকার নেই। একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কথা তোমাকে বলি-এই জগতে যত কম জানা যায় ততই ভাল।
আপনাকে এই তথ্য কে বলেছে?
কেউ বলে নি। আমি নিজেই ভেবেচিন্তে এই তথ্য বের করেছি। ভাল। কথা, আমরা কি অবজারভেশন ডেকে চলে এসেছি?
আপনি চলে এসেছেন। আমি আগে থেকেই ছিলাম। আমি মহাকাশযানের সর্বত্রই ছড়িয়ে আছি। যদিও আমাকে দেখা যায় না।
তুমি তাহলে ঈশ্বরের মতো সব জায়গাতেই আছ—আবার কোথাও নেই।
সিডিসি কিছু বলার আগেই আমি অবজারভেশন ডেকে ঢুকে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম মজাদার কোন দৃশ্য দেখব। ঝিকমিক নক্ষত্রদের পাশ দিয়ে আমরা ছুটে যাচ্ছি। গ্রহট্ৰহ দেখা যাচ্ছে। গ্ৰহদের ঘিরে চাঁদ ঘুরপাক খাচ্ছে। শাই করে একটা ধুমকেতু আমাদের পাশ কাটিয়ে গেল। যাবার পথে মহাকাশযানে লেজের একটা বাড়ি দিয়ে গেল। আলোর ছড়াছড়ি। লাল আলো, হলুদ আলো, সবুজ আলো। তেমন কিছু না। বাইরের আকাশ ঘন কালো। এমন কালো রঙ আমি জন্মে দেখি নি। মনে হচ্ছে কালো ভেলভেটের পর্দায় তারা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাগুলি স্থীর হয়ে আছে। আমাদের মহাকাশযান নড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। এমন কোন আকর্ষণীয় দৃশ্য না। থ্রিডি মুভি হাউজে গেলে এরচে অনেক মজাদার দৃশ্য দেখা যায়। তবে তারার সংখ্যা দেখে কেউ যদি ভিরমি খেতে চায় খেতে পারে। আমার ভিরমি খেতে ইচ্ছা করছে না। আকাশের তারার চেয়ে আমার বরং অবজারভেশন ডেকের সাজসজ্জা ভাল লাগছে।