“ঠিক দশ বছর বছর পর 3010 সালের জানুয়ারি মাসের এক তারিখ হঠাৎ দেখি গর্জন করে আকাশের মহাকাশযানটি আমার বৈঠকখানার কাছে নেমে এসেছে। আমি ছুটে গিয়েছি দেখি মহাকাশযানের ভেতরে আকাশ একজনের হাত ধরে বসে আছে। আমার দশ বৎসর বয়স বেড়েছে কিন্তু আকাশের বয়স বেড়েছে মাত্র বারোঘণ্টা। আমি আকাশকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কার হাত ধরে রেখেছ? সে বলল, কেন তোমার? আমি মহাকাশযান ওঠে তার ওয়ার্মহোলের মুখে উঁকি দিয়ে দেখি সত্যি সত্যি সে একজন মানুষের হাত ধরে রেখেছে। মানুষটি আর কেউ নয়, মানুষটি স্বয়ং আমি। দশ বৎসর আগে যেমন ছিলাম!
“আমি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে বৈঠকখানায় এসে হাজির হয়েছি। আমি দেখছি আমার নিজেকে। দশ বৎসর আগে আমি ফিরে গেছি আমার নিজের কাছে!”
আমি জানি পুরো ব্যাপারটি একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়–কিন্তু এটা ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন একটি জার্নালে প্রকাশিত একটা প্রবন্ধের মূল বিষয়। সেখানে যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটা আসলে ঠিক এ-ধরনের একটা সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
বলা বাহুল্য এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হবার পর সারা পৃথিবীতে প্রবল হইচই শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু দেখছেন। এটি আসলে সম্ভব নাকি অন্য কিছু ঘটে যেতে পারে সেটা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা পাল্টা আলোচনা চলছে। স্টিফেন হকিংও এর উপরে মন্তব্য করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন একটি ওয়ার্মহোল ঠিক যখন টাইম মেশিন হিসেবে কাজ করতে শুরু করে তখন ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশান (Vacuam Fluctuation) এর ক্রম আবর্তনের কারণে সেটি ধ্বংস হয়ে যাবে! সেটি কি সত্যি, নাকি আসলেই টাইম মেশিন তৈরী করা সম্ভব সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো কেউ জানে না। কোয়ান্টাম গ্রেভিটি সম্পর্কে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা আরো ভালো করে না জানা পর্যন্ত কেউই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না!
আমাদের সেই জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
————-
১. Black Holes and Time warps, Kip S. Thorne. (আমি যখন ক্যালটেকে ছিলাম কিপ থর্ন ঠিক আমার ফ্লোরের কাছাকাছি ছিলেন, আমার অফিসের খুব কাছেই ছিল তার অফিস। কিপ থর্ন বাজী ধরতে খুব পছন্দ করতেন। তার অফিসের দেওয়ালে পৃথিবীর বিখ্যাত সব বিজ্ঞানীদের সাথে বাজী ধরে বিচিত্র সব অঙ্গীকারনামা তৈরি করে টানিয়ে রাখতেন। কিপ থর্ন খুব আমুদে একজন মানুষ!)
.
31. আমরা কি একা?
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষ ছাড়াও অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কিনা এই বিষয়টি থেকে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে নিউট্রিনোর ভর আছে কিনা এবং যদি থেকে থাকে সেটা কত। কিন্তু আমি বাজী ধরে বলতে পারি নিউট্রিনোর ভর বিষয়ক আলোচনা হলে সাধারণ মানুষ হাই তুলে অন্য একটা বিষয়ে চলে যাবেন। কিন্তু এই সৃষ্টিজগাতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কী না সেটা নিয়ে আলোচনা হলে নিশ্চিতভাবে কৌতূহলী হয়ে আলোচনাটি শুনবেন।
পৃথিবীর মানুষের এই বিষয় নিয়ে কৌতূহল অনেক দিনের। একসময় ধারণা করা হতো সূর্যের প্রখর উত্তাপ বাইরে, ভেতরে পৃথিবীর মতো শান্তিময় পরিবেশ। সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণীরা বসবাস করে। সূর্যের গঠনটা বুঝে নেবার পর এখন আর সেটা কেউ বিশ্বাস করে না। পৃথিবীর কাছাকাছি ছোট গ্রহগুলো হচ্ছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। পৃথিবীতে আমরা সবাই আছি এবং সব সময়েই কল্পনা করছি অন্য গ্রহগুলোতে হয়তো আমাদের মতো কেউ আছে। এখন আমরা জেনেছি ভয়ংকর উত্তপ্ত বুধ গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটা সম্ভব না। শুক্র গ্রহও মেঘে ঢাকা উত্তপ্ত প্রাণ সৃষ্টির অনুপযোগী একটা গ্রহ। মঙ্গল গ্রহ প্রতিযোগিতায় খুব দুর্বলভাবে টিকে আছে। বড় বড় চোখ, কিলবিলে হাত পা, ধারালো দাঁত এই ধরনের পূর্ণ বিকশিত প্রাণীর আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু জীবাণু আকারের কিছু একটা আছে কী না কিংবা এখন না থাকলেও অতীতে কখনো ছিল কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা মাঝে মাঝেই চাঙ্গা হয়ে উঠে।
মানুষ ছাড়া সৃষ্টি জগতে অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কিনা সেটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল যুক্তিসম্মত এবং সেটা বের করার জন্যে একটি প্রতিষ্ঠানও আছে, তার নাম Search for Extra Terrestrial Intelligence সংক্ষেপে SETI এবং তারা কোটি কোটি ডলার খরচ করে মহাজগতে ক্রমাগত প্রাণের সন্ধান করে যাচ্ছে। মূলত মহাজগৎ থেকে যে বিভিন্ন ধরনের সংকেত আসে তার মাঝে কোনো প্যাটার্ন বা বুদ্ধিমত্তা আছে কিনা সেটাই খোঁজা হয়। ধারণা করা হয়, যদি সেরকম কিছু পাওয়া যায় বুঝে নিতে হবে সেটা পাঠাচ্ছে।
কোন বুদ্ধিমান প্রাণী। এটা নিয়ে অনেক বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখা হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু পাওয়া যায় নি। তবে বিজ্ঞানীরা যে মহাজাগতিক প্রাণী বলে কিছু নেই সেটা পুরাপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তা নয়। ভয়েজার মহাকাশযানগুলো আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করে সৌরজগতের বাইরে চলে গেছে। সেখানে মানব-মানবীর ছবিসহ আরও অনেক কিছু পাঠানো হয়েছে, কোনো একটি বুদ্ধিমান প্রাণী কোনো একদিন সেটা খুঁজে পাবে সেই আশায়!