সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে যাওয়ার বিষয়টি বোঝার আগে ওয়ার্ম হোল নামের বিষয়টি আগে বুঝতে হবে। ওয়ার্ম হোল হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গার ভেতরে একটি শর্ট কাট। ত্রিমাত্রিক জগতের ভেতরে একটি ওয়ার্মহোল কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু আমরা যদি বোঝার সুবিধার জন্যে ত্রিমাত্রিক জগৎটিকে দ্বিমাত্রিক জগৎ হিসেবে কল্পনা করে নিই তাহলে বিষয়টা বোঝা সহজ হয়। 30.2 নং ছবিতে এ-রকম একটি ওয়ার্মহোল দেখানো হয়েছে। সব ওয়ার্মহোলের দুটি মুখ থাকে, ছবিতে দেখানো হয়েছে এই ওয়ার্মহোলের একটি মুখ পৃথিবীর কাছাকছি। অন্য মুখটি 26 আলোকবর্ষ (সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে আলো এক বৎসরে যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে সেটি হচ্ছে এক আলোকবর্ষ দূরে ভেগা নক্ষত্রের কাছাকাছি। ওয়ার্মহোল ব্যবহার না করে কেউ যদি পৃথিবী থেকে ভেগা নক্ষত্রে যেতে চায় তাহলে তার ছাব্বিশ আলোকবর্ষ দূরে যেতে হবে। কিন্তু সে যদি ওয়ার্মহোলের ভেতরের টানেলটি দিয়ে যেতে চায় সে হয়তো মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে সেই একই জায়গায় পৌঁছে যাবে। এই টানেলটা হাইপার স্পেস ব্যবহার করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দুটি ভিন্ন জায়গার ভেতর একই শর্টকার্ট তৈরি করে দিয়েছে।
কেউ যেন মনে না করে ওয়ার্মহোলের এই বিষয়গুলো গালগল্প। আইনস্টাইনের সূত্রের সমাধান করে 1916 সালে প্রথমে এর অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। আইনস্টাইন, রোজেন, হুইলারের মতো বড় বড় বিজ্ঞানীরা এর উপর গবেষণা করেছেন। টাইম মেশিন তৈরি করতে এ-রকম একটা ওয়ার্মহোল তৈরি করতে হবে। এই মুহূর্তে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব হয়তো কাগজ-কলমে (বড় জোর কম্পিউটারের) সীমাবদ্ধ কিন্তু দূর ভবিষ্যতে মানুষ যখন জ্ঞানে বিজ্ঞানে প্রায় লাগাম ছাড়া উন্নতি করে ফেলবে তখন হয়তো তারা ইচ্ছেমতো ওয়ার্ম হোল তৈরি করতে পারবে। মানুষ যখন সেরকম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন তারা একটা টাইম মেশিন তৈরি করার কথা ভাবতে পারবে।
এটা তৈরি করার জন্যে প্রথমে দরকার হবে একটা মহাকাশযানের। তারপর একটা ওয়ার্ম হোল তৈরি করে তার একটা মুখ রাখতে হবে মহাকাশযানের ভেতরে, অন্যটা থাকবে ধরা যাক কারো ঘরের বৈঠকখানায়। টাইম মেশিন তৈরি করার প্রস্তুতি শেষ এখন সেটা ব্যবহার করা শুরু করা যেতে পারে। বিষয়টা বোঝার জন্যে আমরা কল্পনা করে নেই ঘরের বৈঠকখানায় একজন এসে বসেছে, তার নাম মৃত্তিকা। আর যে মহাকাশযানে বসে আছে তার নাম হচ্ছে আকাশ। এখন আমরা দেখি টাইম মেশিন চালু করার সময় মৃত্তিকা আর আকাশ কে কী বলবে :
মৃত্তিকা : “আমি বসে আছি আমার বৈঠকখানায়। ঘরের বাইরেই দেখতে পাচ্ছি মহাকাশযানটি দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আছে আকাশ। সত্যি কথা বলতে কি আমি আমার বৈঠকখানার ভেতরে ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে মহাকাশযানের ভেতরে দেখতে পাচ্ছি। এই ওয়ার্মহোলটা কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা। আমি এর ভেতর দিয়ে আমার হাতটা ঢুকিয়ে আকাশকে ধরতে পারি। আমি আর আকাশ ঠিক করেছি মহাকাশযানটা যখন রওনা দেবে আমরা একজন আরেকজনের হাত ধরে রাখব।”
আকাশ : “আমি আর মৃত্তিকা একজন আরেকজনের হাত ধরে রেখেছি। আজকে 3000 সালের জানুয়ারি মাসের এক তারিখ । ঠিক সকাল নয়টার সময় মহাকাশযানটি রওনা দেবে। আমি ঠিক করেছি প্রচণ্ড গতিবেগে, প্রায় আলোর গতিবেগের কাছাকাছি ছয়ঘণ্টা ছুটে যাব। তারপর পৃথিবীর দিকে ফিরে আসতে থাকব পরের ছয় ঘণ্টায়। অর্থাৎ, সকাল নয়টায় রওনা দিয়ে ঠিক রাত নয়টার মাঝে ফিরে আসব।”
মৃত্তিকা : “এখন বাজে ঠিক নয়টা, মহাকাশযানটি আকাশকে নিয়ে মহাকাশে ছুটে যেতে শুরু করেছে। যেহেতু ওয়ার্মহোলটি মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা আমি এখনো আকাশকে
ধরে রাখতে পারছি কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি আমি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে তাকিয়ে আকাশকে দেখতেও পাচ্ছি। আকাশ মহাকাশ ভ্রমণ করে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি তার হাত ধরে রাখব। অর্থাৎ, বারো ঘণ্টা তার হাত ধরে থাকতে হবে।”
আকাশ : “আমি ছয় ঘণ্টা আলোর বেগের কাছাকাছি গতিবেগে আমার মহাকাশযানে ছুটে গিয়েছি। তারপর মহাকাশযানের দিক পরিবর্তন করে আবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছি। আমি যখন রওনা দিয়েছিলাম তখন আমার মহাকাশযানের ঘড়িতে বেজে ছিল সকাল নয়টা। আমি যখন ফিরে এসেছি তখন আমার ঘড়িতে বাজে রাত নয়টা।”
মৃত্তিকা : “আমি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আকাশ যে মহাকাশযান দিয়ে ভ্রমণ করে এসেছে সেই ঘড়িটাতে এখন বাজে রাত নয়টা। বারো ঘণ্টা টানা আমরা হাত ধরে রেখেছিলাম। এখন হাতটা ছেড়ে দিই। আমার হাতের ঘড়িতেও বাজে রাত নয়টা। এতক্ষণ আমি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে আকশকে দেখছিলাম। এখন তার হাত ছেড়ে দিয়েছি, ঘড়িতে বাজে রাত নয়টা এক মিনিট, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছি। কী আশ্চার্য! মহাকাশযানটি তো নেই, গেল কোথায়?
“আমার একটি খুব ভালো টেলিস্কোপ আছে, সেটা দিয়ে মহাকাশে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে দেখলাম মহাকাশযানটি ছুটে যাচ্ছে!”
“তারপর অনেকদিন কেটে গেছে। শুধু দিন নয়, সপ্তাহ কেটেছে মাস কেটেছে এমনকি বহুর কেটেছে। আমার বয়স বেড়েছে দশ বছর। চুলে একটু পাক ধরেছে, মুখের চামড়ায় বয়সের রেখাও পড়েছে।