বিজ্ঞানীরা কিছু-কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে শুরু করেছেন। একসময় মনে করা হতো এটি বুঝি মস্তিষ্কের সেরেবেলাম নামক অংশের একটি ত্রুটি, এই অংশটি অনুভূতি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এখন বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, আসলে মস্তি ষ্কের ভেতরটুকু কিভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে সেটার অস্বাভাবিকতাই হচ্ছে অটিজমের কারণ। জন্মের সময় একজন অটিস্টিক শিশুর মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আকারের হলেও দুই বছরের ভেতরে সেটি খুব দ্রুত বড় হতে শুরু করে। অনেক সময় দেখা গেছে চার বছরের একজন অটিস্টিক শিশুর মস্তিষ্কের আকার তেরো-চৌদ্দ বছরের একজন কিশোরের সমান। শুধু তাই নয়, মস্তি ষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশ অন্য অংশ থেকে বড়। যেমন যে অংশটি দুশ্চিন্তা, ভয় বা এ ধরনের অনুভূতিটি নিয়ন্ত্রণ করে (এমিগডালা) সেই অংশটুকু আকারে বড় থাকার কারণে অনুমান করা হয় অটিস্টিক শিশুরা সম্ভবত সাধারণ শিশুদের থেকে বেশি ভয় বা দুর্ভাবনা অনুভব করে। যে অংশটুকু স্মৃতির জন্যে ব্যবহার করা হয় সেই অংশটুকুও আকারে বড়। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্ক যেহেতু স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে না তাই তাদের অনেক সময়েই স্মৃতির উপরে নির্ভর করে কাজ করতে হয়। স্মৃতির উপর বেশি নির্ভর করতে করতে সেই অংশটুকু তুলনার থেকে বেশি বিকশিত হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আরও কিছু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় বের করেছেন, মস্তিষ্কে স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ অনেক বেশি কিন্তু মস্তিষ্কের দূরবর্তী অংশের ভেতর যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে কম। শুধু তাই নয় একজন স্বাভাবিক মানুষ বা শিশু যে কাজের জন্যে মস্তিষ্কের যে অংশ ব্যবহার করে অটিস্টিক শিশুরা তা করে না। যেমন সাধারণ মানুষ তাদের মস্তিষ্কের যে অংশ আকার আকৃতি বোঝার জন্যে ব্যবহার করে, অটিস্টিক শিশুরা সে অংশটি ব্যবহার করে অক্ষর বোঝার জন্যে। তাই আমরা যেভাবে একটা জিনিস বুঝি, যেভাবে চিন্তাভাবনা করি কিন্তু তারা বোঝে অন্যভাবে চিন্তাভাবনাও করে অন্যভাবে। তাদের ভাবনার জগৎটি কীভাবে কাজ করে সেটি আমরা এই মুহূর্তে কল্পনাও করতে পারি না।
অটিস্টিক শিশুদের স্বাভাবিক একটা জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে নানা ধরনের চেষ্টা করা হয়। দেখা গেছে খুব শৈশবে যখন বোঝা যায় বাচ্চাটি অটিস্টিক তখন তাকে যদি বিশেষ পদ্ধতিতে চেষ্টা করা যায় তখন তারা অনেকাংশেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক স্কুলে গিয়ে পড়তে পর্যন্ত পারে। এধরণের একটি স্কুলে আমার একবার যাবার সুযোগ হয়েছিল। যে বিষয়টি প্রথমেই চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে তাদের বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। মানুষের সাথে সামাজিকভাবে যোগাযোগ করার খুব সাধারণ বিষয়টুকু আমরা করি অনায়াসে। এই শিশুগুলোর জন্যে সেটি অসম্ভব কঠিন একটি কাজ, তাই সেই বুদ্ধিদীপ্ত চোখের পিছনে লুকিয়ে থাকা মেধাবী, প্রতিভাবান, কৌতুকপ্রিয় সৃজনশীল হাসি খুশি মানুষটিকে আমরা বুঝতে পারি না।
বিজ্ঞানীরা একদিন এই রহস্যের জটাজাল উন্মুক্ত করবেন আমরা সবাই তার জন্যে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
০৭. পদার্থবিজ্ঞান
17. কোয়ান্টাম মেকানিক্স
একটা কাল্পনিক পরীক্ষা করা যাক। ধরা যাক আমি একটা ঘরে বসে আছি এবং এই ঘরের আলো আস্তে-আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে? উত্তরটি খুব সহজ, আমাদের চোখ কতটুকু আলো দেখতে পারে তার একটা হিসেব আছে, যখন ঘরের আলো তার থেকে কমে আসবে তখন আমি আর কিছু দেখতে পারব না। মনে হবে ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে বসে আছি। আমাদের চোখের সংবেদী ক্ষমতা একটুর জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় একটি বিষয় দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে! যদি আমাদের চোখের সংবেদী ক্ষমতা আর মাত্র দশ গুণ বেশি হতো তাহলে আলো কমিয়ে আনা হলে আমরা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতাম। আলো যখন খুব কমে আসতো তখন আমরা আলোর একধরনের ঝলকানি দেখতে পেতাম! আলো যখন বেশি থাকে তখন সেই ঝলকানিগুলো আলাদা করে দেখা যায় না, যখন কমে আসে তখন দেখা সম্ভব হয়। বোঝানোর জন্যে এর সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হচ্ছে পানির ধারা। পানির ট্যাপ ভোলা হলে ঝরঝর করে পানি বের ততে থাকে, এখন যদি ট্যাপটা বন্ধ করে পানির ধারা কমিয়ে আনতে থাকি তাহলে হঠাৎ করে আমরা ধীরে ধীরে দেখব পানির ধারা কমে এসে ফোঁটা ফোঁটা করে পড়তে শুরু করেছে। প্রথমে ফোঁটাগুলো পড়বে ঘনঘন, যদি ট্যাপ আরও বন্ধ করে দিই তাহলে ফোঁটাগুলো পড়বে আরও ধীরে ধীরে। আরও বন্ধ করে দেয়া হলে আরও ধীরে। আলোর বেলাতেও সেই একই ব্যাপার যখন আলো কমে আসবে তখন আমরা দেখব কমসংখ্যক আলোর ঝলকানি, যখন আরও কমিয়ে দেয়া হবে তখন সেটি হবে আরও কমসংখ্যক আলোর ঝলকানি। একটা জিনিস এখানে খেয়াল করতে হবে পানির ফোঁটার কিন্তু একটা নির্দিষ্ট আকার আছে, বড় পানির ফোঁটা বা ছোট পানির ফোঁটা হয় না। পানির ট্যাপ যখন বন্ধ করে দেয়া হতে থাকে তখন কিন্তু পানির ফোঁটার আকার কমে যায় না, শুধু মাত্র কমসংখ্যক ফোঁটা পড়তে থাকে। আলোর বেলাতেও তাই, আলোর ঝলকানি একটা নির্দিষ্ট উজ্জ্বলতার। ঘরের আলো যখন কমিয়ে দেয়া হয় তখন ঝলকানির উজ্জ্বলতা কমে যায় না, একই ঔজ্জ্বল্যের কমসংখ্যক ঝলকানি দেখা যায়।