প্রিয় বন্ধুগণ! আপনারা শুনে অবাক হবেন, আমরা যখন অত্যন্ত কৌশলে বংশবিস্তার করার জন্যে একজন মানুষের আচার ব্যবহার, শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন করি, মানুষ সেটাকে মনে করে রোগের উপসর্গ। তারা ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করে না বিবর্তনের ভেতর দিয়ে কোটি কোটি বৎসরের প্রচেষ্টায় আমরা এই কৌশলগুলো আয়ত্ত করেছি।
প্রিয় বন্ধুগণ! আপনারা মনে করবেন না, আমাদের। বংশবিস্তারের এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ। মানুষের শরীর প্রতিনিয়ত আমাদের বংশবিস্তারে বাধা দিতে চেষ্টা করছে। আমরা যখনই একজন মানুষের শরীরে অবস্থান নেই, মানুষের শরীর প্রায় সব সময়েই তার দেহের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তুলে। এই উঁচু তাপমাত্রার কারণে আমাদের প্রিয় জীবাণু বন্ধুদের অনেক সময়েই অকাল মৃত্যু ঘটে থাকে। মানুষ অনেক সময়েই বুঝতে পারে না আমাদের আক্রমণের জন্যে তার দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা সেটাকে বলে জ্বর এবং নানাভাবে এই জ্বর কমানোর চেষ্টা করে।
মানুষেরা আমাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যে শুধু যে তাদের দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলে তাই নয়, অনেক সময়েই তার দেহের শ্বেত কণিকাগুলোকে আমাদের প্রতিরোধ করার জন্যে লেলিয়ে দেয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আমাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। যখন প্রতিরোধ করতে পারে তখন তাদের শরীরে আমাদের প্রতিরোধ করার জন্যে বিশেষ প্রতিষেধক তৈরি হয়ে যায়, ভবিষ্যতে তখন আমরা বিশেষ সুবিধে করতে পারি না। প্রিয় বন্ধুগণ! মানুষের দেহের এই চাতুর্যপূর্ণ চক্রান্তকে আমরা মাথা নিচু করে মেনে নিই নি। আমাদের সংগ্রামী সর্দিকাশির ভাইরাসের কথা আমরা গর্ব করে বলতে চাই। তাদের পরাস্ত করে যখন শরীরে একধরনের প্রতিষেধক বা এন্টিবডি তৈরি হয় তখন আমাদের এই সর্দিকাশির সংগ্রামী ভাইরাসেরা তাদের রূপ পরিবর্তন করে ফেলে। যখন তারা নূতন করে মানুষকে আক্রমণ করে তখন আগের প্রতিষেধক কোনো কাজে আসে না। তাই মানুষের শরীরে একবার জলবসন্ত হাম বা মাম্পস হলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে যায় এবং সে আর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় না। কিন্তু মানুষের শরীর কখনোই সর্দিকাশিকে পরাস্ত করতে পারে নি।
প্রিয় বন্ধুগণ! আপনারা ধৈর্য্য ধরে আমার বক্তব্য শুনেছেন সে জন্যে আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধু এইডস ভাইরাসের কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করব। এই ভাইরাস মানুষের শরীরে বসে মানুষের নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই ধ্বংস করে দেবার ক্ষমতা রাখে। শুধু তাই নয় এই প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ভাইরাস মায়ের শরীরে অবস্থান নিতে পারলে তার গর্ভের সন্তানের দেহে পর্যন্ত আক্রান্ত করতে পারে। পৃথিবীর মানুষ এই ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা। সরাসরি ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে মানুষ তাদের জীবন ধারণ পদ্ধতির মাঝে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছে। আমাদের সাথে এই সংগ্রাম চলবেই তো, দেখা যাক কে বিজয়ী হয়।(১)
১. Guns, Germs and Steel, Jared Diamond এর বই থেকে সংগ্রহিত তথ্য ব্যবহৃত।
০৬. মস্তিষ্ক
11. মস্তিষ্কের ডান বাম
আমার একজন ছাত্র একবার মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে মারা গিয়েছিল। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করলেও আমাদেরকে বলেছিলেন সে বেঁচে গেলেও কখনো দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে না, মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশটুকু দেখার কাজে ব্যবহৃত হয় তার সেই অংশটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ডাক্তারদের আশঙ্কা সত্যি কি না সেটা আমরা কখনো জানতে পারি নি কারণ হতভাগ্য ছাত্রটি কখনো জ্ঞান ফিরে পায় নি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন মস্তিষ্কের বিশেষ বিশেষ অংশবিশেষ বিশেষ কাজ ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অংশ দেখার কাজে, কোনো অংশ শোনার কাজে, কোনো অংশ স্পর্শের অনুভূতির জন্যে। এমনকি ভয়ংকর দুর্ঘটনার কারণে আরও কিছু বিচিত্র ব্যাপার জানা গেছে, মস্তিষ্কের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুরাপুরি একজন নীতিবান সৎ মানুষ দুর্নীতিবাজ দুশ্চরিত্র রেপ্টিলিয়ান ব্রেন হয়ে গিয়েছিল! কাজেই মস্তিষ্কের রহস্য বোঝা এখনো শেষ হয় নি, খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে সেরকম সম্ভাবনাও নেই।
খুব সরলভাবে মানুষের মস্তিষ্ককে দেখলে সেটাকে 11.1 নং ছবির মতো দেখা যেতে পারে। ছবিটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে, মানুষের মস্তিষ্কে তিনটি স্তর। ভেতরের স্তরটি নাম রেপ্টিলিয়ান ব্রেন, নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে যখন সরীসৃপ যুগ ছিল তখন এই অংশটি গড়ে উঠেছে। এই অংশটি নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষুধা বা ভয়ের মতো জৈবিক বা পাশবিক অনুভূতি। বিবর্তনের কারণে যখন প্রাণিজগতের আরো উন্নতি হয়েছে তখন ধীরে ধীরে রেপ্টিলিয়ান ব্রেনের উপরে লিম্বিক ব্রেন গড়ে উঠেছে। লিম্বিক ব্রেন আমাদের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমার দুঃখ-কষ্ট-ভালোবাসা-ক্রোধ এই অনুভূতিগুলো এই অংশটুকু থেকে জন্ম নেয়। (লিম্বিক ব্রেনের একটা বড় অংশের নাম এমিগডালা, যেটা যৌন প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে।) লিম্বিক ব্রেনের উপরে রয়েছে নিওকর্টেক্স বা উচ্চতর ব্রেন। মানুষের চিন্তা মনন, বুদ্ধিমত্তা বা নান্দনিক চেতনা সবকিছুর জন্ম হয় নিওকর্টেক্সে। এই নিওকর্টেক্সই আমাদের মানুষ হিসেবে আলাদা স্থান করে দিয়েছে।