প্রিয় বন্ধুগণ, একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার জন্যে অনেক সময় আমাদের কিছুই করতে হয় না, মানুষের লোভ এবং নির্বুদ্ধিতা দিয়েই আমাদের বংশ বিস্ত রের কাজটি হয়েছে। আমাদের প্রিয় সালমোনিলা ব্যাক্টেরিয়া ডিম বা মাংসকে আক্রান্ত করে চুপচাপ বসে থাকে, মানুষ সেটি খেয়ে সালমোনিলাকে নিজের শরীরে গ্রহণ করে। ঠিক সেভাবে শূকরের মাংসের ভেতর দিয়ে ট্রাইকিনোসিস এবং কাঁচা মাছের (সুশি) ভেতর দিয়ে এনিসাকিয়াসিস মানুষের শরীরে বংশ বিস্তারের জন্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। নিউগিনির পার্বত্য অঞ্চলের মানুষেরা কুরু নামের বিচিত্র ব্যাধিটির ভাইরাস গ্রহণ করে অন্য মানুষকে কেটে কুটে খাওয়ার মাধ্যমে।
প্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা মনে করবেন না আমাদের সকলেই মানুষের নির্বুদ্ধিতার উপর ভরসা করে অপেক্ষা করে থাকি। আমরা একটি রোগাক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের শরীরে যাবার জন্যে অনেক সময় মশা মাছি বা উকুনের মতো কীট-পতঙ্গকে ব্যবহার করি। উদাহরণ দেবার জন্যে আপনাদের মনে করিয়ে দেয়া যায় আমাদের সুপরিচিত মশা, মাছি এবং টাইফাস জীবাণু তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এই কীট-পতঙ্গগুলোকে আমাদের বংশ বিস্তারের জন্যে ব্যবহার করছে। রোগাক্রান্ত একজনকে কামড় দেয়ার সময় এই কৌশলী জীবাণুগুলো মশা, মাছি বা উকুনের লালায় আশ্রয় গ্রহণ করে এবং তারা যখন। অন্য সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় সেই লালার ভেতর দিয়ে সুস্থ মানুষটির শরীরে প্রবেশ করে। ‘ প্রিয় বন্ধুগণ! আপনারা মনে করবেন না বংশ বিস্তারের জন্যে আমরা শুধুমাত্র তুচ্ছ কীট পতঙ্গের উপর নির্ভর করে থাকি। সেটি সত্যি নয়, আমাদের সবচেয়ে সৃজনশীল জীবাণু বন্ধুরা মানুষকেই এই কাজে ব্যবহার করে থাকে। এই প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় বন্ধু সিফিলিসের জীবাণুর কথা বলা যায়, একজন মানুষকে আক্রান্ত করে সে তার শরীরের সবচেয়ে গোপনীয় অংশে ঘা সৃষ্টি করে সেখানে লক্ষ লক্ষ জীবাণু নিয়ে অপেক্ষা করে। এবং এই দগদগে ঘা অন্য মানুষের সংস্পর্শে আসা মাত্রই সেখানে অপেক্ষারত আমাদের সৃজনশীল সিফিলিস, জীবাণু বন্ধুরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুস্থ মানুষটির শরীরে বাসস্থান সৃষ্টি করে, বংশ বিস্তার শুরু করে।
কুচক্রী মানুষ আমাদের প্রিয় বসন্ত (স্মল পক্স) রোগের ভাইরাসটিকে পৃথিবীর মানুষের ভেতর থেকে অপসারণ করে এখন কিছু ল্যাবরেটরিতে বন্দি করে রেখেছে। তারা সেখান থেকে মুক্ত হতে পারছে না, আজকের এই সভায় আমরা গভীর মমতার সাথে এই বন্দি ভাইরাসদের কথা স্মরণ করছি। প্রিয় বন্ধুগণ! যখন এই ভাইরাসগুলো মানুষের শরীরে বসবাস করতো, বংশবিস্তার করতো তখন তারা মানুষের শরীরে ফুসকুড়ির সৃষ্টির করতো এবং সেখানকার তরল বা পূজে বাসস্থান তৈরি করে বাসবাস করতো। ফুসকুড়ি থেকে তৈরি ক্ষতের মাধ্যমে আমাদের সৃজনশীল ভাইরাসগুলো একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তো। প্রিয় বন্ধুগণ! আপনারা সম্ভবত জানেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গরা স্থানীয় আদিবাসীদের হত্যা করার জন্যে বসন্ত রোগীর ব্যবহৃত কম্বলগুলো উপহার হিসেবে তাদের কাছে পাঠাত। আদিবাসীরা সরল বিশ্বাসে এই কম্বলগুলো গ্রহণ করতো, ব্যবহার করতো এবং বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়তো।
আমাদের প্রিয় জীবাণু বন্ধুরা বংশ বিস্তারের জন্যে আরও নানা ধরনের কৌশল গ্রহণ করে থাকে। সর্দি কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা হুপিং কাশির জীবাণুরা মানুষের ভেতরে ক্রমাগত হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে তরল নির্গমন এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করে দেয়। তার কারণে একজন রোগাক্রান্ত মানুষকে ঘিরে অসংখ্য জীবাণু ভেসে বেড়ানোর সুযোগ পায় এবং একজন সুস্থ মানুষ ঘটনাক্রমে সেখানে উপস্থিত হলেই তাকে আক্রান্ত করা সম্ভব হয়। এই মুহূর্তে আমি যদি আমাদের কলেরা জীবাণুর গৌরব গাঁথার কথা না বলি তাহলে আমার বক্তব্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই দুঃসাহসী জীবাণু একজন মানুষের দেহে সাফল্যের সাথে আশ্রয় নিতে পারলেই তাকে বমি এবং ডায়রিয়াতে বাধ্য করে। তার শরীর থেকে বের হওয়া বর্জ্য পদার্থে আমাদের দুঃসাহসী কলেরা জীবাণু আশ্রয় নেয় এবং প্রথম সুযোগ এই এলাকার পানি সরবরাহকে দখল করে নেয়। কলেরা জীবাণুতে টইটুম্বর এই পানি যখন একজন সুস্থ মানুষ পান করে সাথে সাথে আমাদের দুঃসাহসী কলেরার জীবাণু তার শরীরটি দখল করার চেষ্টা শুরু করে দেয়। ইদানীং আমাদের কলেরা জীবাণুর বড়
কোনো সাফল্যের কথা জানা না থাকলেও অতীতে সেটি ছিল ঈর্ষণীয় একটি গৌরব গাঁথা।
তবে আমার মনে হয় জলাতঙ্ক বা র্যাবিজ ভাইরাসের জীবনকাহিনী সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। এই ভাইরাস যখন কুকুরকে আক্রান্ত করে তখন কুকুরের ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এটি অপ্রকৃতস্থ হয়ে সুস্থ মানুষকে কামড় দিতে শুরু করে কারণ আমাদের কৌশলী জলাতঙ্ক ভাইরাস কুকুরের লালার মাঝে স্থান করে নেয় এবং যখন জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর একটি সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় প্রকৃতপক্ষে সে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলী জলাতঙ্ক ভাইরাসকে বংশ বিস্তারের জন্যে অন্য মানুষের শরীরে স্থানান্তর করার দায়িত্বটুকু পালন করছে, তার বেশি কিছু নয়।