এর মাঝে বেশ কয়েক বার বলা হয়ে গেছে মানব দেহের প্রত্যেকটা কোষে 23 জোড়া ক্রোমোজম থাকে, আসলে কথাটা পুরাপুরি সত্য নয়। সন্তান জন্মের জন্যে পুরুষের শুক্রাণু এবং মেয়েদের ডিম্বাণুতে থাকে ঠিক অর্ধেক অর্থাৎ 23টি করে ক্রোমোজম। নারী দেহের কোষের 23 জোড়া ক্রোমোজমকে দুইভাগে ভাগ করে 23টি আলাদা করে ডিম্বাণু তৈরি করা হয় বলে আমরা বলে দিতে পারি সেখানে 1 থেকে 22 পর্যন্ত 22টি ক্রোমোজম এবং একটি X সব মিলিয়ে 23 টি ক্রোমোজম থাকবে। কিন্তু পুরুষের বেলায়? তাদের তো X এবং Y দুটিই আছে, তাহলে তাদের শুক্রাণুতে কী X না Y ক্রোমোজম, কোনটি থাকবে? উত্তরটি সহজ। তাদের সাধারণ কোষ থেকে আলাদা করে দুটি তৈরি হয় বলে শুক্রাণুতে X এবং Y দুটিই থাকতে পারে। কাজেই তাদের শুক্রাণুর অর্ধেকের মাঝে থাকে X ক্রোমোজম বাকি অর্ধেকে থাকে Y ক্রোমোজম। মায়ের গর্ভে সন্তানের জন্মের সময় যদি ডিম্বাণুর সাথে X ক্রোমোজমের শুক্রাণু মিলিত হয় তাহলে সন্তানেরা সর্বমোট 23 জোড়া ক্রোমোজমের 23 জোড়াটি হয় XX অর্থাৎ সন্তান ঝন্ম নেয় মেয়ে হিসেবে। যদি তা না হয়ে শুক্রাণুটিতে থাকে Y ক্রোমোজম তাহলে সন্তানের 23 তম জোড়াটি হয় XY অর্থাৎ সন্তান জন্ম হয় পুরুষ হিসেবে। যেহেতু অন্য সবগুলো ক্রোমোজমই বাবার এবং মা দুজনের কাছ থেকেই এসেছে তাই সন্তানেরা মাঝে বাবা এবং মা দুজনেরই ছাপ পাড়ে।
আমাদের দেশে এখনো অনেকের মাঝে ছেলে সন্তানের একটা আলাদা গুরুত্ব থাকে। ইতিহাসে পুরুষ সন্তান জন্ম দিতে না পারার জন্যে অনেক নারীকেই অপমান এবং হেনস্থা সহ্য করতে হয়েছে। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি সন্তানকে পুরুষ হবার জন্যে প্রয়োজনীয় Y ক্রোমোজমটি মেয়েদের থাকে না, সেটি আসতে পারে শুধুমাত্র পুরুষদের ভেতর থেকে! কাজেই কাউকে যদি দায়ী করতেই হয় তাহলে বাবাকেই দায়ী করতে হবে, কোনোভাবেই মা’কে নয়।
এবারে আমরা আরো একটা মজার জিনিস দেখতে পারি। একজন মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো এই 23 জোড়া ক্রোমোজমে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রথম 22 জোড়াতে পড়েছে সেগুলোর একটা সুবিধা আছে প্রত্যেকটাই দুটো করে থাকার কারণে কোনো একটাতে সমস্যা থাকলে অন্যটা থেকে পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু সেই সমস্যাটি যদি আসে X ক্রোমোজম থেকে তাহলে মেয়েরা তাদের দ্বিতীয় X ক্রোমোজম থেকে সেটা পুষিয়ে নিতে পারে, ছেলেরা পারে না। টাক মাথা সেরকম একটা ব্যাপার, মেয়েদের একটি X ক্রোমোজমে টাক পড়ার নির্দেশনা থাকলেও ক্ষতি নেই অন্য X ক্রোমোজমে সেই বিপদটুকু কাটিয়ে উঠতে পারে। ছেলেরা পারে না। তাই আমাদের চারপাশে এত টাক মাথা পুরুষমানুষ, টাক মাথা মেয়ে একজনও নেই!
সব ব্যাপারে পুরুষেরা মেয়েদের উপর একটা সুবিধে নেবে প্রকৃতি মনে হয় সেটা পছন্দ করে না তাই তাদেরকে ছোট একটা শিক্ষা দেবার জন্যে সম্ভাব্য এ-রকম ব্যবস্থা করে রেখেছে!
.
10. একটি জীবাণুর বক্তৃতা
আমরা জানি জীবাণুরা কথা বলতে পারে না, বক্তৃতাও দিতে পারে না। যদি পারতো তাহলে তারা নিশ্চয়ই সভা-সেমিনারে এ-রকম একটা বক্তৃতা দিতো : আমার প্রিয় জীবাণু বন্ধুগণ, আজকে আমার বক্তব্য শুনতে আসার জন্যে আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই আমাদের অতীত ঐতিহ্যের কথা জানেন, সেই সৃষ্টির আদিকালে আমাদের জন্ম এবং বিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমরা এই পৃথিবীর সবচেয়ে সফল একটি জীবনধারার সৃষ্টি করতে পেরেছি। পৃথিবীতে নানা ধরনের জীবন রয়েছে। আমাদের মতো আকারে ক্ষুদ্র জীবাণু থেকে শুরু করে আমাদের থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি গুণ বড় মানুষ নামের স্তন্যপায়ী প্রাণীও এই পৃথিবীতে রয়েছে। অন্যান্য প্রাণীর কথা না বলে মানুষ নামক এই প্রাণীটির কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করছি কারণ তারা সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের ভেতরে “গণহত্যা” সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুগণ, আপনারা নিরুৎসাহিত হবেন না, অতীত ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করুন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের সংগ্রামী ইনফ্লুয়েঞ্জা জীবাণু ভাইয়েরা এই পৃথিবীর দুইকোটি দশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল। 1346 থেকে 1352 সালের ভেতরে ইউরোপের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ আমাদের বুবোনিক প্লেগ জীবাণু ভাইয়েরা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। কোনো কোনো শহরের শতকরা সত্তর ভাগ মানুষকে তারা সাফল্যের সাথে হত্যা করতে সম্ভব হয়েছিল। 1880 সালে আমাদের যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ভাইয়েরা শ্বেতাঙ্গ মানুষের ভেতর দিয়ে আদিবাসী স্থানীয় বাসিন্দাদের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে তাদের শতকরা দশ জনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল । আপনাদের অনুপ্রাণিত করার জন্যে আমি এ-রকম অসংখ্যা উদাহরণ দিতে পারি সেটি না করে আমি আমার মূল বক্তব্য ফিরে যাই।
প্রিয় বন্ধুগণ, বিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমরা একটি উন্নত জীবনধারায় পরিণত হয়েছি। আমরা আমাদের পুষ্টি এবং বংশ বিস্তারের জন্যে মাঝে মাঝেই অত্যান্ত কৌশলে মানুষ নামক স্তন্যপায়ী প্রাণীটির দেহ ব্যবহার করে থাকি। যেহেতু মানুষের এই দেহ আমাদের অন্ন বাসস্থান এবং বংশবৃদ্ধির সুযোগ করে দেয় আমরা তাই তাদেরকে শুরুতেই হত্যা করতে চাই না। তাহলে আমরা আমাদের অন্ন এবং বাসস্থান হারাবো। আমরা তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই যেন তারা আমাদের বংশধরদের। অন্য মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। যত দ্রুত তারা আমাদের বংশধরদের অন্য মানুষে ছড়িয়ে দেবে আমরা তত দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারব এবং যারা যত সাফল্যের সাথে এটা করতে পেরেছে তারা বিবর্তনের মাধ্যমে পৃথিবীতে তত দীর্ঘজীবী হয়েছে।