শহুরে মানুষের বড় একটা বিলাসিতা হচ্ছে ইলেকট্রিক লাইট। এর মাঝে ছোট ছোট ফ্লোরোসেন্ট লাইট চলে এসেছে যার বিদ্যুৎ খরচ প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। সম্ভবত ভবিষ্যতের ইলেকট্রিক লাইট হবে লাইট এমিটিং ডায়োড বা এল.ই.ডি. দিয়ে যেখানে ইলেকট্রিসিটির প্রায় পুরোটুকু খরচ হয় আলো তৈরি করতে, যেখানে তাপ তৈরি করে কোনো শক্তির অপচয় করা হয় না। এর মাঝে ছোট ছোট উজ্জ্বল সাদা আলোর এল.ই.ডি. চলে এসেছে, শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র যখন ঘরে ঘরে লাইট বাল্বের বদলে আমরা এল.ই.ডি, ব্যবহার করব।
পরিবেশবাদীরা এখন ঘরবাড়ি তৈরি করেন অনেক চিন্তাভাবনা করে। প্রকৃতিকে ব্যবহার করে গরমের সময় ঘরকে শীতল রাখা হয় শীতের সময় গরম। যতটুকু শক্তি খরচ করতে হয় তার বাইরে যেন কোনো অপচয় না হয়। কারণ অপচয় মানেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড মানেই গ্রীন হাউস এফেক্ট আর গ্রীন হাউস এফেক্ট মানেই পৃথিবীর মানুষের দুর্দশা ।
পৃথিবীর সচেতন মানুষেরা যখন কার্বন-ডাই অক্সাইডকে কমানোর কাজে লেগেছেন তখন বড় বড় বিজ্ঞানী আর প্রযুক্তিবিদরা বসে নেই, তারা নামছেন তাদের বড় বড় পরিকল্পনা নিয়ে। সেই পরিকল্পনাগুলো প্রায় সময়েই অনেকটা কল্পবিজ্ঞানের মতো। যেমন মহাকাশে বিশাল একটা আয়না বসিয়ে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে সরিয়ে দিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে দিলে কেমন হয়? কিংবা বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে সালফার ছড়িয়ে পৃথিবীটা শীতল করে ফেললে কেমন হয়? প্রায় নিরুপায় হয়ে বিজ্ঞানীরা আরো আজগুবি পরিকল্পনা করছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড আলাদা করে সেটাকে মাটির নিচে পুঁতে
রাখবেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি ইতোমধ্যে বিষয়টা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
সুইডেন ডেনমার্কে সেটা করার কাজও শুরু হয়েছে, শূন্য হয়ে যাওয়া গ্যাস ফিল্ডে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে সেটাকে সরিয়ে দেয়া হবে!
পৃথিবীকে রক্ষা করার পরিকল্পনার বিশাল তালিকার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর পরিকল্পনাটি হচ্ছে সবচেয়ে সহজ। সেটি হচ্ছে সবার জন্যে ভোগ-বিলাসহীন সহজ-সরল একটা জীবন। যে ভোগবাদী জীবনের লোভ দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে ছুটিয়ে নেয়া হচ্ছে তার থেকে মুক্তি নিয়ে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে আমাদের জীবনটি হতে হবে সহজ এবং সরল, আমরা ভোগ করব না, বিলাস করব না, একে-অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করব না–আমরা জীবনকে উপভোগ করব একে-অন্যকে সাহায্য করে।
আমার মনে হয় এটাই হবে নূতন মানব সভ্যতার প্রথম মাইলফলক।
২৫. বজ্রপাত
কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হবার পূর্ব মুহূর্তে আকাশ যখন কুচকুচে কালো মেঘে ঢেকে যায় এবং সেই মেঘ চিরে যখন বিদ্যুতের ঝলক নেমে আসে এবং তার কয়েক মুহূর্ত পরে যখন গুরুগম্ভীর আওয়াজে চারিদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে তার মাঝে এক ধরনের অস্বাভাবিক সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে যেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমাদের দেশ ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘের দেশ–কাজেই আমরা সবাই কখনো না কখনো মুগ্ধ হয়ে ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘ দেখেছি। আমাদের কাছে আকাশের বিজলি এবং গুরুগম্ভীর বজ্রপাতের শব্দে এক ধরনের সাহসিকতা রয়েছে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বরকে তাই বলা হতো বজ্রকণ্ঠ!
আমরা সবাই জানি বজ্রপাতের সাথে বিদ্যুতের এক ধরনের সম্পর্ক আছে। দৈনন্দিন কাজে কোনো না কোনোভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নি সে রকম মানুষ আজকাল আর একজনকেও পাওয়া যাবে না। যে ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের কৌতূহল থাকতে পারে সেটা হচ্ছে মেঘের মাঝে কেমন করে বিদ্যুৎ এসে জমা হয়?
যারা একটুখানি বিজ্ঞানও জানে তারাও বলতে পারবে যে পৃথিবীর সবকিছু তৈরি হয়েছে। পরমাণু দিয়ে। পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস, যেখানে থাকে পজিটিভ চার্জ এবং সেই পজিটিভ চার্জের আকর্ষণে আটকা পড়ে সেটাকে ঘিরে ঘুরতে থাকে নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রন। প্রত্যেকটা পরমাণুতে সমান সংখ্যক পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জ থাকে বলে মোট চার্জ হচ্ছে শূন্য তাই আমাদের চারপাশের জগৎ হচ্ছে স্বাভাবিক এবং চার্জহীন। যদি কোনোভাবে আমরা এই চার্জকে প্রবাহিত করতে পারি তখন সেটাকে আমরা বলি বিদ্যুতের প্রবাহ। চার্জ যদি হয় দুই রকম তার প্রবাহও হতে হবে দুই রকম, তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করি সেটা সব সময়ই হচ্ছে ইলেকট্রনের প্রবাহ, ধাতব পদার্থে কিছু ইলেকট্রন প্রায় যুক্ত অবস্থায় থাকে, তাই সেগুলোর প্রবাহই অনেক সোজা!
বোঝাই যাচ্ছে আমরা যখন একটা বজ্রপাত দেখি সেটা আসলে এরকম একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ যেটা হয় ক্ষণিকের জন্যে এবং দিগ্বিদিক প্রকম্পিত করে। এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্যে প্রথমে চার্জগুলোকে আলাদা হতে হয়, বজ্রপাতের আগে সেটা ঠিক কেমন করে হয় বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি সেটা বুঝে উঠতে পারেন নি। মেঘ জমা হবার সময় জলীয় রূপে যখন উপরে উঠতে থাকে তখন সেই জলীয়বাষ্পের ঘর্ষণের জন্যে কিছু ইলেকট্রন আলাদা হয়ে নিচের মেঘগুলোর মাঝে জমা হতে থাকে, উপরের মেঘের মাঝে ইলেকট্রন কম পড়ে গিয়ে সেটার মাঝে পজিটিভ চার্জের জমা হয়। জলীয়বাষ্প যত উপরে উঠতে থাকে ততই ঠাণ্ডা হতে থাকে, যখন ঠাণ্ডা হতে হতে এটা বরফ হয়ে যেতে শুরু করে তখনো তাদের মাঝে চার্জ জমা হতে থাকে, নেগেটিভ চার্জগুলো থাকে নিচে এবং পজিটিভ চার্জ থাকে উপরে–বলা যেতে পারে মেঘের দুই ধরনের চার্জ যেন একটা বিশাল ক্যাপাসিটর হয়ে আকাশে ঝুলে থাকে।