তবে এখানে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার রয়েছে, সেটি হচ্ছে এই বার্ড ফ্লু রোগটি ছড়ায় কেমন করে? 1918 সালে যে ফ্লুটি পৃথিবীর ৩৪ শতাংশ মানুষকে আক্রান্ত করেছিল সেটি ছড়িয়েছে একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মাধ্যমে। বার্ড ফ্লু ছড়ায় একটি পাখি থেকে একটা মানুষের মাঝে–তাই 1997 সালে বার্ড ফ্লুয়ের মহামারি বন্ধ করার জন্যে হংকংয়ে 12 লক্ষ মুরগিকে মেরে ফেলতে হয়েছিল। আমরা সব জায়গাতেই তাই দেখি বার্ড ফ্লু দেখা গেলে সেটা যেন ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্যে সব হাঁস মুরগিকে মেরে ফেলা হয়। অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটা প্রক্রিয়া কিন্তু আর কিছু করার নেই।
সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা কিন্তু নিশ্বাস বন্ধ করে আছেন–এই বার্ড ফ্লুয়ের দুটি খুব মারাত্মক বিশেষত্ব আছে–এক, এটি যখন মোরগ-মুরগিকে আক্রান্ত করে তখন খুব দ্রুত নূতন নূতন রূপে দেখা দেয়। এরকম একটি নূতন রূপ কখন আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে কেউ জানে না। দুই. এটা যতই পরিবর্তন হচ্ছে মনে হচ্ছে ততই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্যে আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বার্ড ফ্লু পাখিদের জন্যে খুব ভয়ঙ্কর রোগ হলেও মানুষের জন্যে ভয়ঙ্কর নয়, কারণ এই রোগের সংক্রমণ হওয়া কঠিন। যেহেতু এটা হাঁস-মুরগি থেকে আসে তাই এর ঝুঁকি বেশি যারা পোলট্রি ফার্মে কাজ করে তাদের সাধারণ মানুষের বলতে গেলে কোনো ঝুঁকি নেই। যেহেতু এটা খাবারের ভেতর দিয়ে আসে না তাই বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাঁস-মুরগি খেয়ে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হবে তারও সে রকম আশঙ্কা নেই। বিশেষজ্ঞরা তবুও অবশ্যি সবসময়েই বলেন হাঁস-মুরগি বা ডিম খুব ভালো করে রান্না করে খেতে। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে যেসব মানুষেরা বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই পোলট্রি ফার্মের কর্মী, সেটা একমাত্র ভরসার কথা। একটি হাঁস বা মুরগি থেকে একজন মানুষ আক্রান্ত হলে সেখান থেকে মানুষকে রক্ষা করার একটা উপায় আছে। একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে কিন্তু যে মহামারি শুরু হবে তার থেকে মানুষকে রক্ষা করা খুব সহজ নয়। 1918 সালে পৃথিবীর 98% মানুষ সংক্রামিত হয়েছিল, এখন যদি হয় তাহলে কত মানুষ সংক্রামিত হবে কেউ কী অনুমান করতে পারে? আগে এক দেশ থেকে অন্য দেশে একজন মানুষের যেতে দীর্ঘ সময় লাগত কাজেই সেই মানুষের কাঁধে ভর করে বার্ড ফ্লুকেও এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে সময় লাগত বেশি। জেট বিমানের যুগে এখন কয়েক ঘণ্টায় এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায়, কাজেই এরকম একট ভাইরাস কয়েকদিনে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পারবে। যদি তার থেকে শতকরা ষাট জন মারা যায় তখন কী হবে?
আশার কথা সেটি এখনো ঘটে নি, বার্ড ফ্লু এখনো একজন মানুষ অন্য মানুষকে দিতে পারে নি। ভাইরাসটি হাঁস-মুরগির ভেতর দিয়ে রূপ পরিবর্তন করে সেরকম একটা ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছে। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা সেই ধুরন্ধর ভাইরাসের সেই ভয়ঙ্কর এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
দেখা যাক কে জেতে।
১১. অন্য রকম খাওয়া-দাওয়া
যাদের ঘেন্না একটু বেশি তাদের এই লেখাটা পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই–লিখতে গিয়ে আমারই একটু গা গুলিয়ে আসছিল, অন্যদেরও তাই হতে পারে।
এমন কী হতে পারে যে, সকালে সবাই নাস্তা করতে বসেছে। সবার সামনেই একটা খালি প্লেট, কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ সবাই তাদের খালি প্লেটে হড়হড় করে বমি করে দিল, তারপর হাতে চামচ নিয়ে মহাউৎসাহে সবাই সেটা খেতে শুরু করে দিল? (আমার সতর্কবাণী না শুনে যারা একটু পড়ে ফেলেছেন এবারে নিশ্চয়ই তাদের পড়া বন্ধ করে ফেলার কথা) শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু এই ব্যাপারটা কিন্তু সবসময়ই ঘটছে। খুব বিচিত্র কোনো প্রাণী কালেভদ্রে এটা করছে তা নয়–এটাই হচ্ছে তাদের জীবনধারা। সেই প্রাণীটি আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করছে, হয়তো এই মুহূর্তেই সেটা কারো মুখের কাছে ভন ভন করছে। কারণ এই প্রাণীটি হচ্ছে মাছি। হ্যাঁ, আমাদের সুপরিচিত মাছি।
এরকম অত্যন্ত কুৎসিত বদঅভ্যাসের জন্যে মাছির উপরে রাগ করে লাভ নেই। আসলে বেচারা মাছিদের যদি বলে দেয়া হয় তাদের এই বদঅভ্যাস ত্যাগ করে পৃথিবীর অন্য সব প্রাণীদের মতো ভদ্রভাবে খেতে হবে তাহলে তারা সবাই না খেয়ে মারা যাবে, কারণ তাদের আর অন্য কোনোভাবে খাওয়ার উপায় নেই। মাছিদের মানুষের মতো দাঁত নেই, ব্যাঙের মতো কামড় দেয়ার মুখ নেই, মশার মতো রক্ত শুষে খাবার হুল নেই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা কঠিন কোনো খাবার খেতে পারে না। তাদের খেতে হয় তরল খাবার। মাছিরা যে খাবার খেতে পছন্দ করে সেটা তো তরল নয়। আমরা নিজের চোখেই দেখেছি একটা মরা ইঁদুরের উপর ভন ভন করছে, সেখান থেকে উড়ে আসছে জন্মদিনের কেকে, সেখান থেকে রাস্তার পাশে সাজিয়ে রাখা জিলাপির উপর–তারা কোথায় নেই? মাছি যেহেতু শক্ত খাবার খেতে পারে না তাই তারা যেটা খেতে চায় তার উপর হড়হড় করে বমি করে দেয়, পেটের ভেতর থেকে যে তরলটা বের হয়ে আসে সেটাতে শক্ত খাবার গলে একটা তরল স্যুপের মতো তৈরি হয়। মাছি তখন মহাউৎসাহে সেই তরল চেটেপুটে খায়। কাজেই আমরা যদি মাছিদের নিজের বমি চেটেপুটে খাওয়ার বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করতে বলি এই বেচারারা না খেতে পেরে মারা যাবে।