ডাকাতি দুদিন উপরি উপরি হয়ে গেল আর আপনি এখনও যেই তিমিরে সেই তিমিরে?
ফেলুদা একটা প্রশ্ন করে ফেলল।
আপনার ভাগনেটি কেমন আছে?
‘কে, বুন্টু ? ও আজ অনেকটা ভাল। ওষুধে কাজ দিয়েছে। আজ জ্বরটা অনেক কমে গেছে?
আচ্ছা—বাইরের কোনও ছেলেটেলে কি পাঁচিল টপকে এখানে আসে? ঝুন্টুর সঙ্গে খেলতে-টেলতে ?’
পাঁচিল টপকে? কেন বলুন তো?
আপনার পাঁচিলের বাইরের দিকটায় একটা বাচ্চা ছেলের হাতের ছাপ দেখছিলাম।
ছাপ মানে ? কীরকম ছাপ ?’
‘ব্রাউন রঙের ছাপ।
টাটকা ?’
বলা মুশকিল—তবে খুব পুরনো নয়।’
কই, আমি তো কোনওদিন কোনও বাচ্চাকে আসতে দেখিনি। বাচ্চা বলতে এক আসে— তাও সেটা পাঁচিল টপকে নয়—একটা ছোকরা ভিখিরি। দিব্যি শ্যামাসংগীত গায়। তবে হ্যাঁ— আমার বাগানের পশ্চিম দিকে একটা জামরুল গাছ আছে! মধ্যে মধ্যে বাইরের ছেলে পাঁচিল টপকে এসে সে গাছের ফল পেড়ে খায় না, এমন গ্যারান্টি আমি দিতে পারি না।’
‘হুঁ…’
নীলমণিবাবু এবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘চোরের বিষয় আর কিছু জানতে পারলেন কি ?’
ফেলুদা সোফা ছেড়ে উঠে পড়ল।
‘লোকটার হাতের জোর সাংঘাতিক এক ঘুষিতে প্রতুলবাবুর চাকরকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল।’
তা হলে এচুরি-ওচুরি এক চোরই করেছে তাতে সন্দেহ নেই।
হতে পারে। তবে গায়ের জোরটা এখানে বড় কথা বলে আমার মনে হয় না। একটা বীভৎস বুদ্ধিরও ইঙ্গিত যেন পাওয়া যাচ্ছে।’
নীলমণিবাবু যেন মুষড়ে পড়লেন। বললেন, আশা করি সে বুদ্ধিকে জব্দ করার মতো বুদ্ধি আপনার আছে। না হলে তো আমার মূর্তি ফিরে পাবার আশা ছাড়তে হয়।’
ফেলুদা বলল, আরও দুটো দিন অপেক্ষা করুন। এখন পর্যন্ত কখনও ফেলুমিত্তিরের ডিফিট হয়নি।’
নীলমণিবাবুর বাড়ির গাড়িবারান্দা থেকে গেট অবধি নুড়ি পাথর দেওয়া রাস্তা। সেটার মাঝামাঝি যখন পৌছেছি তখন একটা কট্ কট্ শব্দ পেয়ে পিছন ফিরে দেখি নীলমণিবাবুর দোতলার একটা ঘরের জানালার পিছনে দাঁড়িয়ে একটা ছোট ছেলে—বুন্টুই বোধহয়—জানালার কাচটাতে হাত দিয়ে টোকা মারছে।
আমি বললাম, ‘বুন্টু।”
ফেলুদা বলল, “দেখেছি।”
সারা দুপুর ফেলুদা তার নীল খাতায় অভ্যাস মতো গ্রিক অক্ষরে কী সব হিজিবিজি লিখল। আমি জানি ভাষাটা আসলে ইংরিজি, কিন্তু অক্ষরগুলো গ্রিক, যাতে আর কেউ পড়ে মানে বুঝতে না পারে। আমার সঙ্গে ওর কথা একেবারেই বন্ধ, তবে সেটা এক হিসেবে ভাল। এখন ওর ভাববার সময়, কথা বলার সময় নয়। মাঝে মাঝে শুনছিলাম ও গুন গুন করে গান গাইছে। এটা সেই ভিখিরি ছেলেটার গাওয়া রামপ্রসাদী গানটা।
বিকেলে পাঁচটা নাগাত চা খেয়ে ফেলুদা বলল, আমি একটু বেরুচ্ছি। পপুলার ফোটো থেকে আমার ছবির এনলাজমেন্টগুলো নিয়ে আসতে হবে।’
আমি একাই বাড়িতে রয়ে গেলাম।
দিন ছোট হয়ে আসছে। তাই সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সূর্য ডুবে অন্ধকার হয়ে এল। পপুলার ফোটো দোকানটা হাজরা রোডের মোড়ে। ফেলুদার ছবি নিয়ে ফিরে আসতে কুড়ি মিনিটের বেশি লাগা উচিত না। তবে এত দেরি হচ্ছে কেন? অবিশ্যি অনেক সময় ছবি তৈরি না হলে দোকানে বসিয়ে রাখে। আশা করি অন্য কোথাও যায়নি ও । আমাকে ফেলে ঘোরাঘুরিটা আমার ভাল লাগে না।
একটা করতালের অHওয়াজ কানে এল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে চেনা গলায় সেই গান—
বল মা তারা দাঁড়াই কোথা
আমার কেহ নাই শঙ্করী হেথা…
সেই ছেলে দুটো। আজ আমাদের পাড়ায় ভিক্ষে করতে এসেছে।
গান ক্রমে এগিয়ে এল। আমি আমাদের ঘরের জানলাটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখান থেকে রাস্তাটা দেখা যায়। ওই যে ছেলে দুটো—একজন গাইছে, একজন করতাল বাজাচ্ছে কী সুন্দর গলা ছেলেটার।
এবার গান থামিয়ে ছেলেটি ঠিক আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে মুখ করে বলল, ‘মা দুটি ভিক্ষে দেবে মা ?
কী মনে হল, আমার ব্যাগ থেকে একটা পঞ্চাশ নয়া বার করে জানলা দিয়ে ছেলেটার দিকে ফেলে দিলাম। টিং শব্দ করে পয়সাটা মাটিতে পড়ল। দেখলাম ছেলেটা সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ঝোলার মধ্যে পুরে আবার গান গাইতে গাইতে হাঁটতে শুরু করল।
একটা ব্যাপারে আমার মাথাটা কেমন জানি গোলমাল হয়ে গেল। যদিও আমাদের রাস্তাটা বেশ অন্ধকার, তবু ভিখিরি ছেলেটা যখন ওপর দিকে মুখ করে ভিক্ষে চাইল তখন যেন মনে হল তার মুখের সঙ্গে বুন্টুর একটা আশ্চর্য মিল আছে। হয়তো এটা আমার দেখার ভুল, কিন্তু তাতে মনের মধ্যে কেমন খটকা লাগতে লাগল। আমি ঠিক করলাম ফেলুদা এলেই কথাটা ওকে বলব ।
প্রায় সাড়ে ছটার সময় মেজাজ বেশ গরম করে ফেলুদা এনলার্জমেন্ট নিয়ে বাড়ি ফিরল। যা ভেবেছিলাম তাই, ওকে দোকানে বসে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বলল, ‘এবার থেকে নিজেই একটা ডার্করুম তৈরি করে ছবি ডেভেলপিং-প্রিন্টিং করব। বাঙালি দোকানের কথার কোনও ঠিক নেই।’
ফেলুদা যখন ওর বিছানার ওপর ছবিগুলো বিছিয়ে বসেছে, তখন আমি ওকে গিয়ে ভিখিরি ছেলেটার কথা বললাম ও কিন্তু একটুও অবাক না হয়ে বলল, সেটা আর আশ্চর্য কী?
“আশ্চর্য না ?’
উহুঁ।’ ..
“কিন্তু তা হলে ভীষণ গণ্ডগোল বলতে হবে।’ গণ্ডগোল তো বটেই। সেটা তো আমি প্রথম থেকেই বুঝেছি।’
‘তুমি বলতে চাও যে ওই ছেলেটা চুরির ব্যাপারে জড়িত?
“হতেও পারে।’
কিন্তু একটা বাচ্চা ছেলের খুঁষির এত জোর যে একটা ধেড়ে লোককে অজ্ঞান করে দেবে?
বাচ্চা ছেলে ঘুষি মেরেছে তা তো বলিনি।’
তাও ভাল!’
যদিও ভাল বললাম, কিন্তু আসলে মোটেই ভাল লাগছিল না। ফেলুদাও যে কেন পরিষ্কার করে কিছু বলছে না তা জানি না।
খাটের উপর বিছানো বারোটা ছবির মধ্যে দেখলাম একটা ছবি ফেলুদা বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কাছে গিয়ে দেখি সেটা আজই সকলে তোলা নীলমণিবাবুর পাঁচিলে বাচ্চা ছেলের হাতের দাগের ছবিটা। এনলার্জমেন্টের ফলে হাতের তেলোটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বললাম, তুমি তো বলে হাত দেখতে জান–বলে তো ছেলেটার কত আয়ু।’
ফেলুদা কোনও উত্তর দিল না। সে তন্ময় হয়ে ছবিটার দিকে চেয়ে আছে। লক্ষ করলাম যে তার মধ্যে একটা দারুণ কনসেনট্রেশনের ভাব।
কিছু বুঝতে পারছিস ?
হঠাৎ ওর প্রশ্নটা আমাকে একেবারে চমকে দিল।
কী বুঝব?
সকালে কী বুঝেছিলি, আর এখন কী বুঝলি—বল তো।
সকালে ? মানে, যখন ছবিটা তুললে ?
‘হ্যাঁ।’
কী আর বুঝব? বাচ্চা ছেলের হাত—এ ছাড়া আর কী বোঝার আছে?
‘ছাপের রংটা দেখে কিছু মনে হয়নি?’
‘রং তো ব্রাউন ছিল।’
‘তার মানে কী ?’
তার মানে ছেলেটার হাতে ব্রাউন রঙের কিছু একটা লেগেছিল।’
কিছু মানে কী? ঠিক করে বল।’
‘পেন্ট হতে পারে।’
‘কোথাকার পেন্ট ?’
‘কোথাকার পেন্ট…কোথাকার… ?
হঠাৎ মনে পড়ে গেল।
প্রতুলবাবুর ঘরের দরজার রং!
‘এগ্জ্যাক্টলি সেদিন তোরও শার্টের বাঁদিকের আস্তিনে লেগে গিয়েছিল। এখনও গিয়ে দেখতে পারিস লেগে আছে।’
‘কিন্তু’—আমার মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছিল, ‘–যার হাতের ছাপ, সেই কি প্রতুলবাবুর ঘরে ঢুকেছিল ?’
‘হতেও পারে। এখন বল—ছবি দেখে কী বুঝছিস।’
আমি অনেক ভেবেও নতুন কিছু বোঝার কথা বলতে পারলাম না।
ফেলুদা বলল, ‘তুই পারলে আশ্চর্য হতাম। শুধু আশ্চর্য হতাম না—শক পেতাম। কারণ তা হলে বলতে হত তোর আর আমার বুদ্ধিতে কোনও তফাত নেই।’
‘তোমার বুদ্ধিতে কী বলছে?’
বলছে যে এটা একটা সাংঘাতিক কেস। ভয়াবহ ব্যাপার। আনুবিস যেরকম ভয়ঙ্কর—এই রহস্যটাও তেমনি ভয়ঙ্কর।’
শেয়াল-দেবতা রহস্য – ০৪
পরদিন সকালে ফেলুদা প্রথম নীলমণি সানালকে ফোন করল। হ্যালো—কে, মিস্টার সান্যাল?…আপনার রহস্য সমাধান হয়ে গেছে.মূর্তি এখনও হাতে আসেনি, তবে কোথায় আছে মোটামুটি আন্দাজ পেয়েছি…আপনি কি বাড়ি আছেন?…অসুখ
বেড়েছে?…কোন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন…ও, আচ্ছা! তা হলে পরে দেখা হবে…’
ফোনটা রেখেই ফেলুদা চট করে আরেকটা নম্বর ডায়াল করল। ফিস ফিস করে কী কথা হল সেটা ভাল শুনতে পেলাম না—তবে ফেলুদা যে পুলিশে টেলিফোন করছে সেটা বুঝলাম। ফোনটা রেখেই ও আমাকে বলল, ‘এক্ষুনি বেরোতে হবে—তৈরি হয়ে নে?
একে সকালে ট্রাফিক কম, তার উপর ফেলুদা আবার ট্যাক্সির ড্রাইভারকে বলল টপ ম্পিড়ে যেতে। দেখতে দেখতে আমরা নীলমণিবাবুর বাড়ির রাস্তায় এসে পড়লাম।
গেটের কাছাকাছি যখন পৌছেছি, তখন দেখি নীলমণিবাবু তাঁর কালো অ্যামব্যাসাডরে বেরিয়ে বেশ স্পিডের মাথায় আমরা যেদিকে যাচ্ছি তার উলটাে দিকে রওনা দিলেন। সামনে ড্রাইভার আর পিছনে নীলমণিবাবু ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলাম না।
আউর জোরসে’—ফেলুদা চেচিয়ে উঠল। ট্যাক্সি ড্রাইভারও কীরকম এক্সাইটেড হয়ে অ্যাক্সিলারেটরে পা চেপে দিল।
সামনের গাড়িটা দেখলাম বিশ্রী গোঁ গোঁ শব্দ করে ডান দিকে মোড় নিচ্ছে।
এইবার ফেলুদা যে জিনিসটা করল সেটা এর আগে কক্ষনও করেনি। কোটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে হঠাৎ তার রিভলভারটা বার করে গাড়ির জানলা দিয়ে ঝুঁকে পড়ে নীলমণিবাবুর গাড়ির পিছনের টায়ারের দিকে অব্যর্থ টিপ করে রিভলভারটা মারল।
প্রায় একই সঙ্গে রিভলভারের আর টায়ার ফাটার শব্দে কানে তাল লেগে গেল। দেখলাম নীলমণিবাবুর গাড়িটা বিশ্রীভাবে রাস্তার একপাশে কেদরে গিয়ে একটা ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল ।
আমাদের গাড়িটা নীলমণিবাবুর গাড়ির পিছনে থামতেই দেখি উলটোদিক থেকে পুলিশের জিপ এসেছে।
এদিকে নীলমণিবাবু গাড়ি থেকে নেমে এসে ভীষণ বিরক্ত মুখ করে এদিক ওদিক চাইছেন।
ফেলুদা আর আমি ট্যাক্সি থেকে নেমে নীলমণিবাবুর দিকে এগিয়ে গেলাম।
পুলিশের জিপটাও কাছাকাছি এসে থেমেছে। দেখলাম সেটা থেকে নামলেন সেই মোটা অফিসারটি।
নীলমণিবাবু হঠাৎ বলে উঠলেন, এ সব কী হচ্ছে কী? ফেলুদা গম্ভীর গলায় বলল, আপনার সঙ্গে গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া আর কে আছে জানতে পারি কি ?’
‘কে আবার থাকবে? ভদ্রলোক চেচিয়ে উঠলেন। বললাম তো আমি আমার ভাগনেকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।’
ফেলুদা এবার আর কিছু না বলে সোজা গিয়ে নীলমণিবাবুর গাড়ির দরজার হ্যান্ডেলটা ধরে একটানে দরজাটা খুলে ফেলল।
খোলার সঙ্গে সঙ্গে একটা বাচ্চা ছেলে গাড়ি থেকে তীরের মতো বেরিয়ে ফেলুদার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর টুটি টিপে ধরল। কিন্তু ফেলুদা তো শুধু যোগব্যায়াম করে না? ও রীতিমতো যুযুৎসু আর কারাটে শিখেছে। ছেলেটার কবজি দুটো ধরে উলটে তাকে অদ্ভুত কায়দায় মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আছাড় মেরে রাস্তায় ফেলল। যন্ত্রণার চোটে একটা চিৎকার ছেলেটার মুখ দিয়ে বেরোল, আর সে চিৎকার শুনে আমার রক্ত জল হয়ে গেল!
কারণ সেটা মোটেই বাচ্চার গলা নয়।
সেটা একটা বয়স্ক লোকের বিকট হেঁড়ে গলার চিৎকার!
এই গলাই সেদিন আমি টেলিফোনে শুনেছিলাম! ইতিমধ্যে পুলিশ এসে নীলমণিবাবুর গাড়ির ড্রাইভার আর বাচ্চাটাকে ধরে ফেলল।
ফেলুদা তার জামার কলারটা ঠিক করতে করতে বলল, পাঁচিলের গায়ে হাতের ছাপ দেখেই ধরেছিলাম। অল্প বয়সের ছেলের হাতে এত লাইন থাকে না। তাদের হাত আরও অনেক মসৃণ থাকে। অথচ সাইজ যখন ছোট, তখন তার একটাই মানে হতে পারে। এটা আসলে একটা বেঁটে বামনের হাতের ছাপ। বাচ্চাটা আসলে আর কিছুই না—একটি ডোয়ার্ফ। কত বয়স হল আপনার সাকরেদের, নীলমণিবাবু?
চল্লিশ! ভদ্রলোকের গলা দিয়ে ভাল করে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।
খুব বুদ্ধি খাটিয়েছেন যা হোক। আগে জিনিস চুরির মিথ্যে ঘটনাটা খাড়া করে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে, তারপর নিজেই লোক লাগিয়ে পরের জিনিস চুরি করছেন। আপনার বাড়িতে কাল যাকে দেখলাম সে কি সেই ভিখারি ছেলেটি ?
নীলমণিবাবু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন।
‘তার মানে আপনার ভাগনে বলে আসলে কেউ নেই। ওকে বাড়িতে এনে ধরে রেখেছেন এই চুরির ব্যাপারে হেল্প করার জন্য ?
ভদ্রলোক মাথা হেঁট করে চুপ করে রইলেন।
ফেলুদা বলে চলল, ছেলেটা গান গাইত আর বামনটা খঞ্জনি বাজাত। কেবল চুরির টাইম এলে খঞ্জনিটা ভিখারির হাতে দিয়ে যেত, এবং তখন সে-ই বাজাতে থাকত। বামন বলেই তার গায়ের জোরের অভাব নেই। এক ঘুষিতে একজন জোয়ান লোককে ঘায়েল করতে পারে। ওয়ান্ডারফুল। আপনার বুদ্ধির তারিফ না করে পারা যায় না নীলমণিবাবু!’
নীলমণিবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘মিশরের প্রাচীন জিনিসের উপর একটা নেশা ধরে গিয়েছিল। প্রচুর পড়াশুনা করেছি এই নিয়ে। সাধে কি প্রতুল দত্তের উপর হিংসা হয়েছিল।’
ফেলুদা বলল, অতি লোভে শুধু তাঁতিই নষ্ট হয় না, বামুনও হয়। কারণ আপনার ওই বেটেটিও বামুন, আর আপনি সান্যাল—একেবারে উচ্চ শ্রেণীর বামুন!..যাকগে—এবার একটা শেষ অনুরোধ আছে।’
‘কী ?’
আমার রিওয়ার্ডটা।
নীলমণিবাবু ফ্যাল ফ্যাল করে ফেলুদার দিকে চাইলেন।
‘রিওয়ার্ড!”
আনুবিসের মূর্তিটা আপনার কাছেই আছে বোধহয়?
ভদ্রলোক কেমন যেন বোকার মতো ডান হাতটা নিজের পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন। হাতটা বার করতে দেখলাম তাতে রয়েছে এক বিঘত লম্বা কালো পাথরের উপর রঙিন মণিমুক্ত বসানো চার হাজার বছরের পুরনো মিশর দেশের শেয়ালমুখী দেবতা আনুবিসের মূর্তি।
ফেলুদা হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ।’