–সেটা হলেই মঙ্গল। একটু ভেবে ফ্রান্সিস বলল
–আমি স্থির করেছি–তুমি আর আমি রব্বানীর সঙ্গে প্রথমে ইবু গ্যাব্রিয়েলের জাহাজে যাবো। কথা বলবো। ওর মনোভাবটা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারবো। যদি বুঝি ও শর্ত মানবে না তাহলে পালাবার ছক কষবো।
–দেখা যাক। তোমার অনেক খাটুনি গেছে। অনেক চিন্তাভাবনা গেছেই। আপাতত বিশ্রাম করো। পারো তো ঘুমাও।
অসম্ভব। বন্ধুরা মুক্তি পেলে তবেই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমুবো। নিজেদের জাহাজ। বন্ধুদের মধ্যে পরিচিত পরিবেশের মধ্যে।
নিজেদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধাইবু গ্যাব্রিয়েলের জাহাজের কাছে যখন নৌকোগুলো পৌঁছল তখন সকাল হয়ে গেছে। চারদিক রোদে চনমন করছে। কাছাকাছি আসতে দেখল জাহাজের রেলিঙ ধরে মারিয়া আর বয়স্ক ভেন দাঁড়িয়ে। ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে বলল–শাঙ্কো তোমরা আমাদের জাহাজে গিয়ে ওঠো। প্রথমেই মারিয়াকে গিয়ে বলবে আমরা সবাই সুস্থ। স্বর্ণভাণ্ডার উদ্ধার হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ করে আমি আর হ্যারি ইবু গ্যাব্রিয়েলের জাহাজে উঠবো। তাড়াতাড়িই নিজেদের জাহাজে ফিরে আসব। মরিয়া যেন কোনরকম দুশ্চিন্তা না করে।
রব্বানিদের নৌকোর পেছনে পেছনে ফ্রান্সিস আর হ্যারির নৌকো নিয়ে চলল। ইবু গ্যাব্রিয়েলে দেখা গেল জাহাজের রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছাকাছি আসতে রব্বানি নৌকায় উঠে দাঁড়িয়ে সিন্দুকটা দেখিয়ে বার বার গলা জড়িয়ে বলতে লাগল–মাজার–স্বর্ণভাণ্ডার উদ্ধার করে এনেছি। এতক্ষণে ইবু গ্যাব্রিয়েলের উদ্বিগ্ন মুখে হাসি ফুটল। জাহাজের যোদ্ধারাও আনন্দে চিৎকার করে উঠল। শূন্যে ভোলা তরোয়াল ঘোরাতে লাগল।
এবার নৌকো থেকে সিন্দুক তোলার জোড়জোর শুরু হল। ফ্রান্সিস আর হ্যারি যখন দড়ির সিঁড়ি বেয়ে জাহাজে উঠল সিন্দুকের সামনে তখন ইবু গ্যাব্রিয়েল প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে সিন্দুকটার দিকে তাকিয়ে আছে। যোদ্ধারাও চারপাশে এসে জড়ো হয়েছে। সবাই খুশিতে আটখানা।
রব্বানি এগিয়ে গিয়ে সিন্দুকের ডালা এক হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলল। হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা সোনা হীরে মুক্তো বসানো গয়নাটা উজ্জ্বল রোদ পড়তে বিজিয়ে উঠল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। হ্যারি গলা নামিয়ে ডাকল ফ্রান্সিস। ফ্রান্সিস ওর দিকে তাকাল। এখন কথা বলতে যেও না। ইবু গ্রাবি ফেলের কানেই যাবে না কোন কথা। ওর প্যান্ড। খুশির জোয়ার ভাটা পড়তে দাও। দুজনই চুপ করে দাঁড়িয়ে যোদ্ধাদের আনন্দাশ্লাশ দেখতে লাগল। ইবু গ্যাব্রিয়েল হাসিমুখে চারদিকে তাকাতে লাগল।
-রব্বানি–কী করে উদ্ধার করলে? হাসিমুখে ইবু গ্যাব্রিয়েল বলল।
–এই লোকটা। ভীষণ দুঃসাহসী। ফ্রান্সিসকে দেখিয়ে রব্বানি বলল। ফ্রান্সিস এগিয়ে এসে বলল–মান্যবর-কয়েকটা কথা ছিল। ইবু গ্যাব্রিয়েল হাত নেড়ে বলে উঠল।
পরে এমন সর রব্বানির দিকে তাকিয়ে বলল–সিন্দুক আমরা ঘরে নিয়ে রাখো একটা বুফিও যেন কেউ না নেয়। আর কাল একা তুমি ছাড়া আর কেউ আজ্ঞে না জানিয়ে আগে ঘরে ঢুকবে না।
–মান্যবর এটা তো আপনার বরাবরের হুকুম। রব্বানী ফ্রান্সিসের দিকে তাকিয়ে ইবু গ্যাব্রিয়েল বলল–তোমরা কিন্তু একটা কুফিও চাইবে না।
–এ কথা তো আমি আগেই বলেছি। ফ্রান্সিস মৃদু হেসে বলল।
–তাহলে কী বলতে এসেছো?
–আপনার সঙ্গে একটা শর্ত ছিল। ইবু গ্যাব্রিয়েল তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে।
–ফ্রান্সিসের শর্ত? কী শর্ত?
–এই শর্ত যে স্বর্ণভাণ্ডার উদ্ধার করতে পারলে আর আপনাকে দিলে আপনি আমার বন্ধুদের মুক্তি দেবেন।
–ও। তাই নাকি? ঠিক আছে। এই নিয়ে পরে কথা হবে।
–পরে না। এক্ষুনি। ফ্রান্সিস দৃঢ়স্বরে বলল। ইবু গ্যাব্রিয়েল কড়া চোখে ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল। ফ্রান্সিস দৃঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল।
–ঠিক আছে। স্বর্ণভাণ্ডার তো পেয়ে গেছি। বিদেয় হও সব। রব্বানিকে বলল–যাও ঐ ভিখিরিগুলোকে ছেড়ে দাও।
রব্বানি চলল সিঁড়িঘরের দিকে।
–হ্যারি-তুমি যাও। কয়েদঘরের ঐ জঘন্য পরিবেশে বন্ধুদের দেখলে আমার সহ্য হয় না।
–বেশ। হ্যারি চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরেই মুক্ত বন্দীরা ডেকে উঠে আসতে লাগল। ফ্রান্সিস দেখল সবারই চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। পরনের পোশাক নোংরা হয়ে গেছে। কয়েকজনের পোশাক ছিঁড়ে গেছে। ওরা কয়েকজন ছুটে এসে ফ্রান্সিসকে জড়িয়ে ধরল। ফ্রান্সিস গলা চড়িয়ে বলল–আর এখানে না। আমাদের জাহাজে চলো। ওরা কেউ আর নৌকায় নেমে যাওয়ার আগ্রহ দেখাল না। ছুটে গেল হালের দিকে বাঁধা দাড়িতে ঝুল খেয়ে নিজেদের জাহাজের ডেকএ গিয়ে উঠল। হ্যারি বরাবরই দুর্বল। ফ্রান্সিস হ্যারিকে নিয়ে নৌকোয় চড়ে নিজেদের জাহাজের ডেক উঠে এল। মারিয়া হাসতে হাসতে ছুটে এল। সত্যি মারিয়ার শরীর বেশ খারাপ হয়ে গেছে। চোখমুখ শুকনো মাথার চুল উড়ে উড়ো। অশান্ত মন শান্ত হল। মারিয়া এসে ওর হাত চেপে ধরল। ফ্রান্সিস হেসে বলল–মারিয়া–এক কাজ কর। বন্ধুদের অবস্থাতো দেখছ। শিগগির ওদের স্নান করার ব্যবস্থা করো। তারপর ভাল পোশাক পরে নিতে বললো। রাঁধুনি বন্ধুদের তাড়াতাড়ি রান্নার ব্যবস্থা করতে বলো। বন্ধুরা তখন শাঙ্কো আর সিনিত্রার কাছে গুপ্তধন উদ্ধারের কথা শুনছে। মারিয়া কাছে এসে বলল
–গল্প পরে হবে। আগে স্নান করে নতুন পোশাক পরে নাও। এসো সবাই।