ইন্দ্রনাথ জিগ্যেস করল, লেডি সিনথিয়া, ট্রিগার থেকে আঙুলটা সরিয়ে কথা বলুন। গাড়িতে আসবার সময় দুর্যোধনকে বলেছিলেন হিরের কলমের কথা?
কেন বলব না? ফোঁস করে উঠল সিনথিয়া, বিয়েই যখন করব না, তখন প্রেজেন্টেশন কাছে রাখতে যাব কেন? ঢাক পিটিয়ে ফেরত দেব সবার সামনে। তাই বলেছিলাম।
বেশ করেছিলে। গরগর করে উঠল চন্দ্রকান্ত, একটা চোরের সঙ্গে লটর-ঘটর করতে গেছিলে। ইউ ন্যাস্টি গার্ল। দাও আমার ডায়মন্ড।
এই নাও তোমার ডায়মন্ড। বলেই চন্দ্রকান্তর দিকে ছোট্ট রিভলভার তুলল সিনথিয়া।
খবরদার, বলে হেঁকেই গুলি চালাল অর্জুন পান্ডে, অবশ্য সিলিং লক্ষ করে। কিন্তু তাইতেই ভড়কে গিয়ে সত্যি-সত্যিই ফায়ারিং করল সিনথিয়া-অর্জুনকে লক্ষ করে। আনাড়ি হাতের গুলি লাগল অর্জুনের হাতে, রিভলভার গেল ছিটকে। গুলিবিদ্ধ হাত ঝাড়তে ঝাড়তে মেঝেতে পড়ে থাকা রিভলভারের দিকে লাফিয়ে যেতেই ধুতি পাঞ্জাবি পরা ইন্দ্রনাথ চিতাবাঘের মতোন লাফিয়ে গিয়ে মেঝে থেকে কুড়িয়ে নিল রিভলভারটা। বললে, তিষ্ঠ, তিষ্ঠ, অর্জুন পাণ্ডে। মাথার ব্যান্ডেজটা অত আনাড়ি ভাবে বাঁধা কেন বৎস? নিজের বাঁধা, না ডাক্তারের হাতে বাঁধা?
থতমত খেয়ে গেল কষ্টিপাথর কমান্ডো চিফ। তেড়ে আসতে গিয়েও থমকে গেল। কেননা, তার এক হাতের মধ্যে দিয়ে গুলি ঢুকে বেরিয়ে গেছে ইন্দ্রনাথের হাতের রিভলভার কিন্তু টিপ করে রয়েছে তার দিকেই।
সুতরাং সে জবাব না দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয় মনে করল।
চোখ তার দিকেই রেখে চন্দ্রকান্তকে বললে ইন্দ্রনাথ, অনুগ্রহ করে আপনার দেহরক্ষীর মাথার পাগড়িটা খুলবেন?
নীরবে হুকুম তামিল করে গেল গরিলা-তনয়সম চন্দ্রকান্ত ভরদ্বাজ। অনেকগুলো ফেটি খুলে আনবার পর ব্যান্ডেজ দিয়ে তৈরি গোটা পাগড়িটা খসে এল হাতের মধ্যে।
দেখা গেল, অর্জুন পাণ্ডের মাথা বিলকুল অক্ষত। ডাণ্ডা-ফাণ্ডা কিছুরই চোট পড়েনি মাথায়।
মিহি গলায় বললে ইন্দ্রনাথ, এই সন্দেহটাই করেছিলাম আনাড়ি হাতের ব্যান্ডেজ দেখে। ঠিক যেন পাগড়ি। মিস্টার চন্দ্রকান্ত ভরদ্বাজ, চোরের ওপর বাটপারি করেছে আপনার সবচেয়ে কাছের লোক–এই দুঃশাসন, ইয়ে অর্জুন পাণ্ডে। দুর্যোধনের অতীত ভালো নয়। হিরের কলমের লোভ সে সামলাতে পারেনি। লেডি সিনথিয়া কখন ক্যামেরার সামনে থাকবে সে জানত। সেই ফাঁকে হিরে হাতিয়েছে, কিন্তু নিজের কাছে রাখেনি। লুকিয়ে রেখে যখন বেরিয়ে আসছে, তখন আপনার কমান্ডো চিফ আগে তার মাথা ছাতু করেছে, তারপর পকেট সার্চ করেছে, হিরে পায়নি। জুয়োর ঘরে সার্চ করেও হিরে পায়নি।
তখন মুখোশধারী দুই হানাদারের গল্প শুনিয়েছে, দুর্যোধনকে খতম করে হিরে হাতিয়ে নিয়ে তারাই চম্পট দিয়েছে। কিন্তু হিরের কলম আছে এই স্টুডিওর মধ্যেই। কোথায় আছে, তাও আন্দাজে বলতে পারি।
কোথায়? বিচ্ছিরি কর্কশ গলায় বলল চন্দ্রকান্ত।
আপনার প্রিয় দুর্যোধন কোন বিষয়ে এক্সপার্ট ছিল? জুয়ো খেলার স্লট মেশিনে। এই মেশিনগুলো এক একটা আয়রন সেফের মতন। কম্বিনেশন লক তো থাকেই–আরও অনেক কিছু জানতে হয়। তবেই টাকা বেরোয় মেশিনের ভেতর থেকে। ঠিক বলছি?
বলছেন।
আপনি জানেন আটটা মেশিনের কম্বিনেশন লকের সিক্রেট?
জানি।
খুলতে পারেন আয়রন সেফের প্লেট?
পারি।
চলুন তাহলে খোলা যাক। অর্জুন পাণ্ডে, দু-হাত মাথার ওপর রেখে সামনে-সামনে চল। অনেক কমান্ডো নাচিয়েছি, তোমাকে শুইয়ে দেব। খেল দেখাতে যেও না।
জুয়োর ঘর। পাশাপাশি সাজানো আটটা স্লট মেশিন। একটার মধ্যে পাওয়া গেল তেরটা হিরের কলম।
ঠিক সেই সময় একটা অত্যন্ত অশোভন আচরণ করে বসল সিনথিয়া। হাতের রিভলভার ফেলে দিয়ে দু-হাতে জাপটে ধরল চন্দ্রকান্তকে এবং ভেঙে পড়ল অকৃত্রিম এবং অনাটকীয় কান্নায়, আমার ভুল হয়েছে, আমার ভুল হয়েছে।
দু-চোখ বুজে সিনথিয়ার মাথায় হাত বুলোতে-বুলোতে চন্দ্রকান্ত বললে, ওরকম হয়, ওরকম হয়…যত রাগ, তত ভাব।
* স্বস্তিকা পত্রিকায় প্রকাশিত (পূজা সংখ্যা, ১৪০৪)।