নীরস গলায় বললেন অ্যাভালন–বেসবলে আগ্রহ না থাকাটা যদি স্পাইয়ের পক্ষে মৃত্যুর সামিল হয় তাহলে আমারও মরণ আসন্ন। কারণ বেসবল আমার দু-চক্ষের বিষ।
আবারও প্রবলবেগে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন ড্রেক।
আরে, গেল যা। তেড়ে উঠলেন গোনজালো কাগজ পড়লে, টিভি দেখলে, পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করলে বেসবল সম্বন্ধে কিছু না কিছু খবর রাখতেই হয়। আপনারা যে পয়লা নম্বরের নাক উঁচুসেটা অত জোর গলায় জাহির না করলেও চলবে। আসল সমস্যায় আসুন না কেন! সংখ্যাটা কী হওয়া উচিত ছিল–সেটা কেন মাথায় আসছে না? মিঃ পেনটিলি, কত বড় সংখ্যা বলে মনে হয়?
দুই অথবা তিন-এর অঙ্ক–তার বেশি নয়।
বেশ, বেশ। বেসবল এক্সপার্ট যদি নাও হয় স্টিপান–ক্রিকেটের খবর-টবর নিশ্চয় রাখত। গড় রান সংখ্যা সাধারণত তিন অঙ্কেই হয়। হেডলাইনে এই রকম খবর বেরিয়েছিল কি?
মাথা নেড়ে বললেন পেনটিলি–হেডলাইনে কোনও অঙ্কই ছিল না। চোখে পড়ার মতো কোনও সংখ্যা বা অঙ্ক ছিল না পৃষ্ঠার কোথাও–অথচ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, স্পোর্টস্ পৃষ্ঠা খুলে ধরেই ইঙ্গিতটাকে চোখের সামনে এনে দিয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন গ্রেগরি স্টিপান।
স্ক্র্যাবল হরফগুলোর কথাই কি বলছেন? Epock? বললেন রুবিন।
হ্যাঁ, তাই বলছি।
এর মধ্যে আদৌ কোনও ইঙ্গিত আছে বলে তো মনে হয় না।
হয়তো শুরু করেছিল, শেষ করতে পারেনি, বললেন গোনজালো–যেমন ধরুন। বলতে চেয়েছিল হয়তো ১২২ তাহলে দরকার হত পাঁচটারও বেশি হরফ কিন্তু পাঁচটার বেশি তোলবার আর সময় পাননি।
Epock দিয়ে কোনও সংখ্যা শুরু হয় বলে আমার জানা নেই, রুবিনের কাটকাট জবাব।
স্ক্রাবল খেলায় হরফদের উলটেপালটে করে সাজানো যায়। তবেই খেলা জমে ওঠে। স্টিপান তুলেছিল পাঁচটা হরফ ঠিকমতো সাজিয়ে সংখ্যাটা প্রকাশ করার আগেই ।
মারা গেছে এই তো? বললেন হ্যাঁলস্টেড সরি, ম্যারিও, তা সম্ভব নয় কোনওমতেই। সংখ্যাদের যখন হরফ দিয়ে লেখা হয়–তখন একটা বাঁধাধরা গৎ থাকে তাদের মধ্যে। আপনি কি জানেন জিরো থেকে নাইন হান্ড্রেড নাইনটি নাইন পর্যন্ত লেখা যায় a-কে একেবারে বাদ দিয়ে।
তাতে কি প্রমাণিত হল? বললেন গোনজালো epock এর মধ্যে a নেই।
নেই। কিন্তু একটা p, আর একটা c আছে। চব্বিশ অঙ্কের সংখ্যা সমেত এক হেপটিলিয়ন পর্যন্ত পর-পর লিখে গেলেও p-এর ব্যবহার পাবেন না–পাবেন তারপরে। সাতাশ অঙ্কের সংখ্যা সমেত এক অকটিলিয়ান পর্যন্ত c-এর প্রয়োজন হবে না। এটা গেল আমেরিকান মতে সংখ্যালিখন– ব্রিটিশ মতে অবশ্য…।
ব্যস, ব্যস, বুঝে গেছি, যেন গুমড়ে উঠলেন ট্রামবুল।
সঙ্গে-সঙ্গে বললেন রুবিন–আমার কিন্তু মনে হয় না হাতের কাজ শেষ করতে পেরেছিল স্টিপান। স্পোর্টস পৃষ্ঠা থেকে খবর খুঁজে নেওয়ার মতলবকে হয় তো তাড়িয়েছিল মন থেকে। ইচ্ছে ছিল আর একটা মাত্র হরফ তুলে নেওয়ার। তাহলেই তাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাজালে শব্দটা দাঁড়াত pocket; পকেট খুঁজে বের করে নিতে বলত গুপ্ত সংবাদটা…
কিছুই ছিল না পকেটে, জবাব তো নয় যেন গিলোটিনের কোপ মারলেন পেনটিলি।
ছিল নিশ্চয় ছুরি মেরেই বের করে নিয়েছিল খুনি–প্রাণটা তখন বেরিয়ে যাচ্ছে বলেই টের পায়নি স্টিপান।
অনুমানটা দ্বিতীয় শ্রেণীর হয়ে যাচ্ছে না? ধরে নিলেন একটা বাড়তি, শুধু তাকে খাপ খাওয়ানোর জন্যে টেনে আনলেন পিকপকেটিং এর অনুমিতি। অসম্ভব।
পকেট তো একটা সাংকেতিক শব্দও হতে পারে, ছাড়বার পাত্র নন রুবিন।
না, না, না! এইবার কিন্তু অসহিষ্ণুতায় ফেটে পড়লেন পেনটিলিজেন্টেলমেন, মজার মজার অনেক তত্ত্বই আউরে যাচ্ছেন–এবং সব কটাই ভুল দিকে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছে। ভুলে যাচ্ছেন কেন, মানুষের স্বভাব মলেও যায় না–মরবার সময়ে তো যায়ই না। স্টিপান ছিলেন বড় পরিপাটি মানুষ। মরতে যখন চলেছেন, গুছোনি স্বভাব তখনও যায়নি। হাতটা ছিল বাক্সের ঢাকনির ওপর– টেনে বন্ধ করেছিলেন ঢাকনি। সুতরাং যে কটা হরফ তার দরকার হয়েছিল বের করার–তা বের করা হয়ছিল বলেই বাক্স বন্ধ করে দিচ্ছিলেন। পাঁচটাই হরফ, খেয়াল রাখবেন।
হ্যালস্টেড বললেন–পাঁচটা হরফকেই প্ল্যান মতো সাজানোর সময় নিশ্চয় পায়নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পেনটিলি–পাঁচটা আলাদা হরফকে ১২০ রকমভাবে সাজানো যায়। কোনওটাই ইংরেজি শব্দ নয়–একটা শব্দ হল kopec–কিন্তু রাশিয়ান মুদ্রা kopek এর বানান আলাদা। না, মশাই না সংখ্যার উল্লেখই করতে চেয়েছিল স্টিপান।
আচমকা বলে ওঠেন অ্যাভালোন–স্পোর্টস পৃষ্ঠায় স্পোর্টসের খবর ছাড়া আর কিছু ছিল কি? যেমন, বিজ্ঞাপন?
এমনভাবে শূন্যে তাকিয়ে রইলেন পেনটিলি যেন একটা অদৃশ্য কাগজ পড়ছেন চোখমুখ কুঁচকে। বললেন–না, ব্রিজ খেলার এক কলম খবর অবশ্য ছিল বটে।
পেয়েছি। মিঃ পেনটিলি, ব্রিজ খেলায় দিগগজ আমি–তা বলতে চাই না। তবে কি জানেন, মাঝেসাঝে খেলাটা খেলি ব্রিজ কলমও পড়ি। North, South, East আর West–এই চারটে হেডিং-এর নীচে একটা করে হাত আঁকা থাকবেই সব কলমে। প্রত্যেক হাতে উপযুক্ত তাসের লিস্টও থাকবে। স্পেড, হার্ট, ডায়মন্ডস, ক্লাবস। তার নীচে প্রতিটি তাস পরপর সাজানো থাকবে মান অথবা দাম অনুসারে।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পেনটিলির–বেশ?