ইতিহাসের কোনও এক সময়কে বলা হয় epock–বললেন গোনজালো।
মুখিয়ে উঠলেন রুবিন–সেটা হল epock–শেষে k নেই। তার মানে, ইতিহাসের বিশেষ একটা সময় যখন উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা ঘটেছে। রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মৃত্যুকালীন ভ্রান্তি ধর্তব্যের মধ্যে নয়, সবেগে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন গোনজালো– মরবার সময়ে দৃষ্টি নিশ্চয় ঝাপসা হয়ে গেছিল–তাই দেখতে পায়নি সঠিক বানানের হরফ সাজানো হচ্ছে কিনা। k-কে মনে হয়েছে h। সবচাইতে বড় কথা স্টিপান জাতে রাশিয়ান ইংরেজি ভাষাজ্ঞান আপনার মতো হবে–আশা করা যায় না।
অধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন পেনটিলি–মোদ্দা ব্যাপার কিন্তু তা নয়। k অথবা h কী এসে যায় তাতে?
ঠিক বলেছেন, বললেন অ্যাভালোন–এই তো একজন সাংকেতিক শব্দ-বিশেষজ্ঞ রয়েছেন আমাদের মধ্যে। টম–
দুধ কঁকিয়ে ট্রামবুল বললেন–যাঞ্চলে! নিজের মাথাটা খাটালেই তো হয়! আমি যখন বুঝব কথা বলব।
অ্যাভালন বললেন মিঃ পেনটিলি, সাংকেতিক শব্দের কোনও বই কি তখন ছিল আপনাদের কাছে? এমন একখানা বই যার মধ্যে epock আছে, যার মানে বিশেষ একটা শব্দমালা অথবা কথা? সরকারি সাংকেতিক শব্দ কী?
না, না, না। epock অথবা epock–কোনওটারই সাংকেতিক মানে অন্তত স্টিপানের জানা ছিল না। হেঁয়ালির জবাব খোঁজা উচিত ছিল স্পোর্টসের পৃষ্ঠায়।
কেন বলছেন? হ্যাঁলস্টেডের প্রশ্ন।
হেনরী, একটু ব্র্যান্ডি দেবে? শুনছ তো সব? বললেন পেনটিলি।
ইয়েস স্যার, হেনরীর জবাব।
গুড! এমার্জেন্সির মুহূর্তে স্টিপানের উচিত এমন একটা সংখ্যা পাচার করে দেওয়া যার মধ্যে গোপন বার্তা-টা থাকবে ঘনীভূত অবস্থায়। মানে, রীতিমতো নিরেট অবস্থায় থাকবে খবরটা– নড়ানো চড়ানো যাবে না শব্দমালার শব্দগুলোকে। মৃত্যু যার দোরগোড়ায়, এ ছাড়া আর কোনও পথ তার কাছে থাকে না। স্টিপানের ক্ষেত্রে সেই অবস্থা এসে গেছিল। তাই খুলেছিলেন স্পোর্টস পৃষ্ঠা–যে পৃষ্ঠায় সংখ্যার ছড়াছড়ি এবং যে সংখ্যাদের একটা সংখ্যা রীতিমতো প্রনিধানযোগ্য।
লেখবার জন্যে হয়তো কাগজের দরকার ছিল তার বেশি নয়, বললেন হ্যাঁলস্টেড।
যা দিয়ে লেখা যায়–সে রকম তো কিছু ছিল না হাতে। রক্ত ছিল–নিজের রক্ত।
হয়তো তাই, মুখ বেঁকিয়ে বললেন পেনটিলি–কিন্তু তা নয়। কেন না, শুধু লেখবার জন্যে কাগজ যে তুলবে, সে কাগজের পাতা খুলতে যাবে কেন? ওপরের পৃষ্ঠাতেই লেখবার চেষ্টা করলেই পারত। তা ছাড়া আর একবার মুখ মচকালেন পেনটিলি–যার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, সে তখন খেয়াল করে কি গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে কিনা?
জেদি গলায় বলে গেলেন হ্যাঁলস্টেড ঝটকান দিয়ে খুলেছিল কাগজ–স্পোর্টস পৃষ্ঠাই যে খুলতে গেছিল, একথা ভাবছেন কেন? টান মেরে খুলতে গিয়ে স্পোর্টস পৃষ্ঠা খুলে গেছে। মৃত্যুর সময় অমন খিচুনি অসম্ভব কি?
মি হ্যাঁলস্টেড, চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন পেনটিলি–স্টিপানের মতো পাকা গুপ্তচরের কাছে ব্যাপারটা খুবই অসম্ভব। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষে তাঁকে বেঁচে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন– প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে গুরুত্বপূর্ণ খবরটা পাচার করবার শেষ চেষ্টাই তিনি করেছেন– কারণ, তিনি প্রফেশন্যাল স্পাই, অ্যামেচার নন।
ধমকে উঠলেন ট্রামবুল–রোজার, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে খামোকা জেদ কেন?
টম, বললেন পেনটিলি–ঠিক এইরকম ধারণা ছিল কিন্তু দপ্তরেও। যা-যা বলে গেলাম, তার মধ্যে নাকি হেঁয়ালি নেই একটুও, মরবার সময়ে কোনও গোপন খবর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করেননি স্টিপান, অথবা যা করাতে গেছিলেন–শেষপর্যন্ত তা আর করতে পারেননি। একা আমি, শুধু আমিই, স্টিপানের শেষ চেষ্টার অর্থ খুঁজে বের করবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছি কিন্তু গোপন খবরের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারিনি।
মুশকিলটা হয়েছিল ওর স্পোর্টস পৃষ্ঠা খোলা নিয়েই। টাকাকড়ি আর ব্যবসা বাণিজ্যের খবর যে পৃষ্ঠায় ছাপা হয়, সে পৃষ্ঠায় যেমন সংখ্যার ছড়াছড়ি থাকে ঠিক সেই রকমই থাকে স্পোর্টস পৃষ্ঠায়। বলুন দিকি, এত সংখ্যার মধ্যে থেকে কী করে বেছে নেওয়া যায়, ঠিক সেই সংখ্যাটিকে যা তিনি জানাতে চেয়েছেন, আয়ুর শেষ মুহূর্তে পাঁচটি মাত্র হরফ সাজিয়ে?
তাই যদি হয়, বললেন অ্যালোন–তাৎপর্যপূর্ণ একটি সংখ্যাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্যেই যদি স্পোর্টস্ পৃষ্ঠা মেলে ধরে থাকে স্টিপান–তাহলে তো বলতে হয় এত সংখ্যার মধ্যে থেকেও সে সংখ্যা খুবই চোখে পড়ার মতো সংখ্যা! যেমন, স্পোর্টস পৃষ্ঠার সংখ্যা।
প্রথম সমাধান প্রচেষ্টায় জন্যে সাধুবাদ জানাই। স্পোর্টস পৃষ্ঠার সংখ্যা ছিল ৩২। সাংকেতিক শব্দের বই অনুসারে ৩২ মানে, আগের খবর বাতিল করুন। আগে কোনও খবরই পাঠাননি স্টিপান।
স্পোর্টস্ পৃষ্ঠায় কী ছিল বলতে পারেন? শুধোলেন অ্যাভালন।
এত বছর পরে তা মনে করা সম্ভব নয়। জেরক্স কপিও করে রাখিনি যে আপনাদের দেখাব। তবে প্রায় পুরো পৃষ্ঠা জুড়েই ছিল বেসবলের খবর। আগের কয়েক হপ্তায় গেছিল বেসবলের মরশুম। বিশেষ বিশেষ খেলার স্কোরগুলো ছিল বক্সের মধ্যে ছিল এন্তার স্ট্যাটিসটিক্স।
বেসবলের খবরাখবর রাখত স্টিপান?
একটু-একটু। পেশাগতভাবে আমেরিকান ওপর আগ্রহ ছিল বইকি। গোগ্রাসে গিলতেন আমেরিকান ইতিহাস। আমেরিকান জাতীয় খেলাতেও আগ্রহ ছিল সেই কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান স্পাইয়ের বোকামির ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে। গত বছরের ওয়ার্ল্ড সিরিজ কী ছিল–তা জানত না। সেই ফাঁদে পা দিতে চাননি স্টিপান। তবে হ্যাঁ, তুখোড় বিশেষজ্ঞ ছিলেন বেসবলের ব্যাপারে–তাও বলা যায় না।