কেন পাঠাতে পারেননি? ঝটিতি শুধোন গোনজালো।
অত্যন্ত কঠিন একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন বলে–বেশি ঝুঁকি নিতে সাহস হয়নি। ভদ্রলোক ছিলেন সোভিয়েত স্পাই। সোভিয়েতরাই তাঁকে গোটা যুক্তরাষ্ট্র চষে বেড়াতে দিয়েছে নিজেদের
স্বার্থে–উনিও পরমানন্দে সোভিয়েতের সমস্ত খবর পৌঁছে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র।
এক মুখ সিগারেট-ধোঁয়া ছেড়ে বললেন ড্রেক–ডবল এজেন্টের কোন মুখে সত্যি কথা বেরোয়–তা বলা কিন্তু মুশকিল।
দুমুখেই বেরোতে পারে, হ্যাঁলস্টেডের মন্তব্য।
তা হতে পারে, সায় দিলেন পেনটিলি–আমরা যে খবর পাচার করাতে চেয়েছি সোভিয়েত দেশে–শুধু সেই খবরটা তিনি জানিয়েছিলেন স্বদেশে। কিন্তু সোভিয়েত সম্পর্কে আমরা জেনেছি ভুরিভুরি সংবাদ ভদ্রলোকের মারফত–এমনই খবর যা কোনওদিনই সোভিয়েতরা আমাদের জানতে দিতে চায়নি।
বিদ্রূপতরল কণ্ঠে বললেন রুবিন–ঠিক এই কথাটা হয়তো সোভিয়েতরাও ভেবেছিল এবং একইভাবে তাঁকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপনতম সংবাদ সংগ্রহ করে গেছে।
তাই যদি হত, তাহলে শেষকালে সোভিয়েতরাই বিশেষ এই গুপ্তচরকে যমালয়ে পাঠিয়ে দিত না, বললেন পেনটিলি–ভদ্রলোককে আমরা কিন্তু খতম করিনিমূল প্রশ্নটা আসছে এই রহস্য থেকেই। কীভাবে যে ভদ্রলোকের ডবল গুপ্তচরগিরি ফাস হয়ে গেছিল সোভিয়েতদের কাছে তা জানতে পারিনি কোনওদিনই।
মূলত তিনি যে সোভিয়েতের স্পাই নন–আমাদের স্পাই–এটা তারা জানবার পরেই খাড়া নামিয়ে আনে ভদ্রলোকের ওপর। বিশ্বাসঘাতকের সাজা এইভাবেই হয়। আমাদের বিশ্বাসঘাতকদেরও আমলারা কোতল করি ঠিক এইভাবে।
অ্যাভালোন বললেন–দেখুন মশায়, বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করাটাই তো বোকামি, যে লোক একবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে–সে যে আবার তা করবে না, তার কি কোনও গ্যারান্টি আছে?
তা ঠিক, তা ঠিক, সায় দিয়ে গেলেন পেনটিলি–সেই জন্যেই তো ভদ্রলোককে ঠিক সেইটুকুই জানতে দেওয়া হয়েছে যে-টুকু জানলে আমরা থাকব নিরাপদে নিরাপদে থাকবেন তিনি নিজেও। আমি কিন্তু বিশ্বাস করতাম ভদ্রলোককে, কারণও ছিল। আমেরিকান আদর্শে বিশ্বাসী বলেই ভদ্রলোক কাজ করে গেছেন আমাদের হয়ে–এই ধারণা নিয়েই বিশ্বাস করতাম ভদ্রলোককে তিন বছর কাজ করে গেছেন আমাদের হয়ে–একবারও দুশ্চিন্তার কারণ সৃষ্টি করেননি।
ভদ্রলোকের নাম স্টিপান। কাজ করতেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে হাসি ঠাট্টা জিনিসটা একেবারেই ছিল না ভেতরে। এক কথায় বলা যায়–গুপ্তচরগিরি অন্যের কাছে পাপ কাজ হতে পারে–তাঁর কাছে পুণ্যের কাজ–তাই নিজেকে ঢেলে দিয়েছিলেন এই কাজে। ইংরেজি ভাষার বৈশিষ্ট্য যে-সব ইডিয়ম-এর মধ্যে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে সব শিখতেন এবং মোটামুটি আমেরিকান উচ্চারণে কথা বলে যেতেন। রেডিওর খবর শুনতেন খবর জানবার জন্যে নয়–খাঁটি আমেরিকান উচ্চারণ শেখবার জন্যে। শব্দসম্ভার বৃদ্ধির জন্যে শব্দ ছক নিয়ে মেতে থাকতেন। আর একটা খেলা খেলতেন নিজের মনে। নাম তার স্ক্র্যাবল। সেটাও শব্দের খেলা।
অ্যাভালন বললেন স্ক্র্যাবল? ছোট-ছোট কাঠের টালিতে অক্ষর লেখা থাকে? বোর্ডে সেই টালি বসিয়ে শব্দ তৈরি করতে হয়?
অত সোজা খেলা নয়, বললেন রুবিন–মাথা খারাপ করে দেয়–
পেনটিলি পাত্তা দিলেন না রুবিনকে–ঠিকই ধরেছেন মিঃ অ্যাভালন। আজকের এই প্রহেলিকায় এই খেলার একটা ভূমিকা আছে। যত চেষ্টাই করুন না কেন স্টিপান, ইংরেজিটাকে মুঠোয় আনতে পারেননি কোনওদিনই শব্দসম্ভার বাড়ানোর চেষ্টাতেও ত্রুটি রাখেননি। সোভিয়েতরা ওঁর এই খেলাখেলির ব্যাপারটায় বিলক্ষণ মদত দিয়েছে শুধু একটাই কারণে–ভবিষ্যতে যেন আরও দক্ষ গুপ্তচর হতে পারেন স্টিপান।
ঠিকই করেছিল, শুষ্ক কণ্ঠে বললেন রুবিন।
কিন্তু শেষকালে ওঁকে খুনও করেছিল এই সোভিয়েতরা। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে কিউবা থেকে এসে পৌঁছন স্টিপান। কিউবাতে থাকার সময়ে সরাসরি ওঁর গতিবিধির বিশেষ খবর না রাখলেও আমরা অন্যপথে জেনেছিলাম মোক্ষম খবর জোগাড় করেছেন স্টিপান। গুরুত্বপূর্ণ সেই খবর পাচার করতে না পেরে নিজেই ওয়াশিংটনে চলে এসেছেন। ওকে ফাঁসিয়ে না দিয়ে গোপনে খবরটা জানবার জন্যে উঠে পড়ে লাগলাম তখন থেকেই।
ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতোই আমরা ঠিক করলাম স্টিপানের সঙ্গে দেখা করব একটা হোটেলের ঘরে। সোভিয়েতরা যে ওঁর দুমুখো চরিত্র জেনে ফেলেছে–আমরা তা কল্পনা করতে পারিনি স্টিপান নিজেও তা জানতেন না। আমাদের লোক হোটেলের ঘরে পৌঁছনোর আগেই সোভিয়েত জল্লাদ হাজির হয়েছিল সেখানে। ছুরি মেরে উড়িয়ে দিয়ে গেছিল গুপ্তচরের প্রাণপাখি। যা বলতে এসেছিলেন–তা বলবার সুযোগও পেলেন না।
অ্যাভালনের কফির কাপ শূন্য হয়ে গেছিল অনেক আগেই। খালি পেয়ালার কিনারায় আঙুল বুলোতে-বুলোতে বললেন চিন্তাঘন ললাটে–সোভিয়েতরাই যে খুন করেছিল স্টিপানকে–তার কী প্রমাণ পেয়েছেন? মারদাঙ্গা এই সমাজে রোজই মানুষ খুন হয়ে চলেছে নানা কারণে।
লম্বা নিশ্বেস ফেলে বললেন পেনটিলি–খবরটা পাচার করার ঠিক আগেই স্টিপান খুন হয়েছিলেন–সুতরাং অন্য ঘাতককে এক্ষেত্রে ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায় না।
ওয়াশিংটনের পুলিশও এ খুনকে মামুলি খুনের পর্যায়ে ফেলতে চেয়েছে–আমরাও তাতে মদত দিয়েছি কারণ নিহত ব্যক্তি সোভিয়েত দেশের নাগরিক। স্টিপানের প্রাইভেট লাইফ হাতড়েও উল্লেখযোগ্য কিছু জানা যায়নি। সাধারণ অপরাধী খুন-টুন করে কিছু না কিছু সূত্র ফেলে যায়– এক্ষেত্রে কোনও সূত্রই পাওয়া যায়নি।