সুরাহা তুমিই করো। প্রবল উৎসাহে বললেন ম্যারিও গোনজালো।
হাত তুললেন অ্যাভালন–প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিষয়টাকে আলোচনায় মধ্যে আনা সঙ্গত হচ্ছে । এখানে যা কিছু ঘটে তার সবই গোপনীয়। আগের আলোচনা সভার একটা বর্ণও এই আলোচনা সভায় উপস্থিত করা হবে না।
নিশ্চয় না, নিশ্চয় না, সবেগে মস্তক আন্দোলন করতে করতে বললেন পেনটিলিগোপন কথাবার্তার তিলমাত্র জানবার আগ্রহ আমার নেই। প্রশ্নটার জবাব যাজ্ঞা করা সমীচীন হবে কিনা– এইটাই শুধু জানতে চেয়েছি। যদি হয়, তাহলে হেনরীকে বলব জবাব জুগিয়ে দিতে।
গোনজালো বললেন–আপনি কিন্তু একটু আগেই বলেছেন রিটায়ার করে তোফা আছেন। প্রশ্নের বিড়ম্বনা মাথার মধ্যে নিয়ে কেউ তোফা থাকতে পারে না।
প্রশ্নটা আজকের নয়–অনেক বছর আগেকার, দুই চোখে কৌতুক নাচিয়ে বললেন পেনটিলি–প্রশ্নের সমাধান তখন মোটেই সন্তোষজনক মনে হয়নি–অন্তত আমার কাছে। আজ আর তার গুরুত্ব নেই। তবে কৌতূহলকে বড় খুঁচিয়ে যায় আজও।
আচমকা আগ্রহ দেখালেন ট্রামবুল ব্যাপারটা কী, ল্যারি?
টম, ডিপার্টমেন্টে সদ্য ঢুকেছিলাম সেই সময়ে। আপনারা কেউই জড়িত ছিলেন না সে ব্যাপারে–শুধু আমি ছাড়া।
শুনতে পারি ব্যাপারটা? গোনজালোর প্রশ্ন।
আগেই বলেছি, এ ব্যাপারের এখন আর কোনও গুরুত্ব নেই। এ নিয়ে কথাবার্তারও কোনও মানে হয় না। কিন্তু যেহেতু হেনরীকে পাচ্ছি হাতের কাছে–
মৃদুস্বরে বললে হেনরী স্যার, মিঃ গোনজালো সহৃদয় বলেই আমাকে হেঁয়ালির সমাধানকারী মনে করেন। আসলে সে যোগ্যতা আমার নেই। তবে মাঝে-মাঝে আমার কথা কাজে লেগে গেছে– সেটাও সম্ভব হয়েছে মাননীয় সদস্যরা বুদ্ধি দিয়ে জট ছাড়িয়ে এনেছিলেন বলেই অপ্রাসঙ্গিক এবং অদরকারী তথ্যগুলোকে নিজেরাই বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন বলে। তখন যে খেই-টা পড়ে থাকে– আমার কাজ শুধু তাকে তুলে নেওয়া। এর বেশি ক্ষমতা আমার নেই।
রক্তিম হয়ে ওঠে পেনটিলির মুখ–বেশ, বেশ, সেক্ষেত্রে প্রশ্নটা হাজির করা যাক সমাগত সুধী সদস্যদের কাছে।
কানখাড়া করলাম, বললেন অ্যাভালন।
.
ব্র্যান্ডির গেলাস এক চুমুকে শেষ করে দিলেন পেনটিলি। হেনরী এগিয়ে এসেছিল বোতল হাতে গেলাসে ফের ঢালবার জন্যে নিতে রাজি হলেন না পেনটিলি।
বললেন–জেন্টলমেন, ১৯৬১-র দিনগুলোয় মনকে নিয়ে যান। জন এফ কেনেডির শোচনীয়ভাবে সংক্ষিপ্ত শাসনকালের প্রথম কমাসে কিউবা আক্রমণের প্ল্যান আঁটছে কিউবা থেকে নির্বাসিতরা। কেনেডির মাথাতেও ঢুকছে না এই প্ল্যান। হানাদারদের আমেরিকান বিমানবাহিনী মদত জোগানোর পর যে প্রতিক্রিয়া ঘটবে–তার সুযোগও নিলেন না। গুপ্তসংস্থা তাকে আশ্বস্ত করেছিল বিশেষ একটা গোপন খবর দিয়ে। হানাদাররা যখন চড়াও হবে–তখন তাদের সমর্থন জোগাবে কিউবার জনগণই–এক কথায় অভ্যুত্থানটা ঘটবে ভেতর থেকে। ঝটপট স্বাধীন কিউবাব সরকার গঠিত হবে এবং তাদের অনুরোধ পেলেই যুক্তরাষ্ট্র অগ্রসর হবে।
সৈন্যসামন্ত আর দেশের ওপর ক্যাস্ট্রোর প্রচণ্ড প্রভাবের কোনও খবরই আমরা রাখিনি। অথচ আশার কুয়াশার মধ্যে দিয়ে দেখেছিজয় আমাদের হবেই। কী হয়েছিল আপনারা সব্বাই জানেন। শূকর উপসাগরে হানাদাররা নামতে-না-নামতেই ক্যাস্ট্রোর সুসংগঠিত লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বেচারাদের ওপর। কিউবার লোকজনের মধ্যে বিন্দুমাত্র অভ্যুত্থান ঘটেনি। বিমানবাহিনীর সাহায্য না পেয়ে হানাদাররা দলে-দলে ধরা পড়েছে, কাতারে কাতারে খতম হয়েছে। প্রচণ্ড বিড়ম্বনায় পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমস্ত দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছিলেন কেনেডি। বলেছিলেন, জেতার আনন্দ হাজার জনে নেয়, পরাজয়ের নিরানন্দ নিতে হয় একজনকেই।
কফির কাপের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে আচমকা বলে উঠলেন রুবিন–উদ্ধৃতি পুস্তকে আছে কেনেডির এই বাক্য।
কেশে গলা সাফ করে বললেন অ্যাভালোন হারলেও দমেননি কেনেডি। পরের বছরেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্রর ব্যাপারে সোভিয়েতদের মুখ চুন করে দিয়েছিলেন–ঠান্ডা লড়াইয়ে বিশাল বিজয়ের অধিকারী করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
সবেগে বললেন রুবিনবিজয় কক্ষনো নিঃসঙ্গ থাকে না। পূর্বসূরীর কীর্তির সঙ্গে টেক্কা মেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট জনসন। একটু-একটু করে গড়ে তুলেছিলেন ভিয়েতনামের কর্দম পঙ্ক– শেষকালে–
হে মূর্খগণ, সজোরে বললেন ট্রামবুল–এটা ইতিহাসের ক্লাস নয়। ল্যারি পেনটিলিকে কথা বলতে দিন।
সঙ্গে-সঙ্গে নেমে এল সূচিভেদ্য স্তব্ধতা। পেনটিলির সারা মুখে এখন বিষাদের ছায়া। বললেন–শূকর উপসাগরের বিপর্যয়ের মুলে পয়লা নম্বর শয়তানটা আসলে গুপ্তচর সংস্থা–তারাই ভুল খবর দিয়ে আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েছে। কিউবার সত্যিকারের পরিস্থিতি যদি জানা থাকত, কেনেডি হানাদারদের এগিয়ে যাওয়া রুখে দিতেন–অথবা বিমানবাহিনীকে পাঠিয়ে আকাশ থেকে তাদের সাহায্য করতেন। তাহলেই ফ্লোরিডা থেকে নব্বই মাইল তফাতে মিজাইল ঘাঁটি বসিয়ে বহাল তবিয়তে কেটে পড়ার ভুল ধারণাটা সরে যেত ক্যাস্ট্রো অথবা ক্রুশ্চেভের মাথা থেকে আর রুবিনের সাইকোহিসটোরিক্যাল ব্যাখ্যা মেনে যদি নিই–তাহলে ভিয়েতনাম সমস্যাও আর তৈরি হত না।
আমি বলব একটাই কথা–খবরটাও ভুল হওয়ার দরকার ছিল না। কিউবাতে আমাদের একজন গুপ্তচর ছিলেন। শূকর উপসাগরে হামলা শুরু হওয়ার ছমাস আগে তিনি চলে আসেন ওয়াশিংটনে। রেডিওতে যে-খবর পাঠাতে পারেননি সঙ্গে এনেছিলেন সেই গোপন সংবাদ..