কেন? একই ভাবে ফের প্রশ্ন করে ইন্দ্রনাথ।
টাকা…টাকার জন্যে। প্রত্যেকের পাঁচ লাখ। আমার ছেলে হাতছাড়া করার জন্যে…সেই ছেলেকে পাগল বলে সার্টিফাই করার জন্যে…
কে সার্টিফাই করেছিল? বিষ্ণুপদ নায়েক?
হ্যাঁ।
সে এখন কোথায়?
কিছুদিন ছিল আমাদের বাড়িতে। মাসছয়েক আগে চলে গেল।
ইন্দ্র বললে, সে চলে যায়নি। এখানে আসত। বাড়ির আউট হাউসে থাকত। মদ খেত, মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করত। এখান থেকে গেল বাচ্চু সেনের বাড়িতে ভাড়াটে সেজে টাকা দোহন করার মতলবে। ভিখিরি সেজে বেরোতো। তাকে সরিয়েছে এই দয়ালশঙ্কর শেঠ আর বাচ্চু সেন– মেট্রো রেলের গর্তে লাশ ফেলে দিয়েছে। সাত্যকি সাহা আর তার বউকেও কাটা গাছ চাপা দিয়ে মেরেছে এই দয়ালশঙ্কর শেঠ। সম্পত্তি হাতিয়েছে। আসল উত্তরাধিকারী এই সত্য বসুকে পাগলাগারদে রেখেছিল বাচ্চু সেন আর তার স্ত্রী দিল্লিতে জাল বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়ে। বাচ্চু সেনের স্ত্রী কিন্তু ছেলেটির চোখ মনে রেখেছিল–মেয়েদের এ ক্ষমতা থাকে। সে চোখ এই সত্য বসুর বিয়ে করতে চায় কমলাকে আপনাদের কারও আপত্তি আছে?
না। সম্মতি শোনা গেল একাধিক গলায়।
শক্তগলায় বললেন শ্যামবর্ণ ভদ্রলোক, কিন্তু একটা শর্তে। হানিমুন হবে আন্দামানে।
হেঁচকি তুলে সত্য বললে, আপনার খরচে!
* দ্বীপবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত (শারদীয় সংখ্যা, ১৪০০)।
স্পোর্টস পৃষ্ঠার রহস্য
মাসে একবার ধাঁধা ক্লাবের মিটিং বসে। ক্লাবের নামটি কিন্তু বিদঘুঁটে। ব্ল্যাক উইডোয়ার্স ক্লাব–অর্থাৎ কালো বিপত্নীকদের আড্ডাখানা!
মিটিং মানে খানাপিনা। তারিয়ে-তারিয়ে ভালো-ভালো খাবার গেলা হয়, চু চু করে দামি দামি পানীয়তে চুমুক মারা হয়–এবং একজন অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়। মাননীয় এই অতিথি মহাশয় কিন্তু খানাপিনার মধ্যেই একটা জবর রহস্য হাজির করেন–প্রতি মাসেই একটি করে ধাঁধার জট খুলতে হয় আড্ডাধারীদের।
যত জটিল প্রহেলিকাই হোক না কেন–সমাধান ঘটে আশ্চর্যভাবে–স্রেফ বুদ্ধির খেলায়। প্রতিবারই সাহায্য করে যায় যে মানুষটি–সে কিন্তু ক্লাবের একজন ওয়েটার নাম, হেনরী। ধাপে ধাপে জট খুলে চমক সৃষ্টি করতে তার জুড়ি নেই।
আড্ডাখানায় গোয়েন্দাগিরির অভিনব এই পরিকল্পনার স্রষ্টা প্রখ্যাত কল্পবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান লেখক আইজাক আসিমভ। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এলারী কুঈ মিস্ত্রি ম্যাগাজিনে পেটুক কালো বিপত্নীকদের একটা গোয়েন্দা গল্প লিখেছিলেন। তার পরেও লিখতে হয়েছে তিন ডজন গল্প। কোনও গল্পেই মারপিট নেই, সেক্স নেই, ক্রাইমও খুব একটা নেই–আছে শুধু আলসেমি আর যুক্তিতর্কের প্যাঁচ। বড়লোকি খেয়াল বললেও চলে।
আসিমভ সাহেব নিজেই বলেছেন–এসব গল্পে সব কিছুই পাঠকের সামনে মেলে ধরি– তারপরেও পাঠককে ধরাশায়ী হতে হয় হেনরীর যুক্তির মুষ্ট্যাঘাতে। কথাবার্তায় বুদ্ধির ধার রাখি– কারণ, আমার নিজেরই তা ভালো লাগে। খানাপিনার কথাও বেশ থাকে–পাঠকদের খুশি করার জন্যে ।
তিন ডজন ধাঁধা থেকে একটি ধাঁধা হাজির করা হল এই সংখ্যায়। ওয়েটার হেনরী সমস্যার সমাধান করে ফেলার আগেই পাঠক যদি তা করতে পারেন তাহলে কিন্তু তিনি নিজেকে অনায়াসেই ক্ষুরধার ডিটেকটিভ হিসেবে জাহির করতে পারেন…
এই পেশায় নেমেও পড়তে পারেন।
মাসিক ভোজসভায় বসেছেন কালো বিপত্নীকরা।
ম্যারিও গোনজালো জিগ্যেস করলেন–Blain কি একটা ইংরেজি শব্দ?
Blain? খড়াং করে চেয়ারটাকে টেবিলের সামনে টেনে বললেন জেমস্ ড্রেক। উনি এখন তাকিয়ে আছেন রকমারি রুটি আর রোলের দিকে। ভাবছেন কোনটার দিকে হাত বাড়াবেন।
Blain, তীক্ষ্ণ জবাব দিলেন গোনজালো।
বানানটা কী? দু-পিস রাইসর্ষের রুটি তুলে নিয়ে মাখন মাখাতে-মাখাতে শুধোলেন রোজার হ্যাঁলস্টেড।
বিরক্ত হলেন গোনজালো, বানানে কী এসে যায়। বলে খুব যত্নের সঙ্গে ন্যাপকিনটা রাখলেন নিজের ডোরাকাটা গোলাপি ট্রাউজার্সের ওপর।–যেভাবে খুশি বানান করতে পারেন। শব্দটা ইংরেজি কিনা তাই বলুন।
টমাস ট্রামবুল আজকের ভোজসভার স্বাগতিক অর্থাৎ হোস্ট। সবাইকে তিনিই নেমন্তন্ন করে এনেছেন। ভদ্রলোকের কপালখানা দেখলে মনে হয় যেন খাঁটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। কপাল কুঁচকোলেই মনে হয় চাষের মাঠে লাঙল পড়েছে লম্বা-লম্বা খাঁজ জেগে ওঠে। এই মুহূর্তে সেইরকম খানকয়েক খাঁজ সৃষ্টি করেছেন ব্রোঞ্জ ললাটে। বলছেন–ড্যাম ইট, ম্যারিও। বেশ তো সময়টা কাটছিল। হঠাৎ এই Blain নিয়ে উৎপাত শুরু করলেন কেন?
প্রশ্ন করেছি–তার বেশি তো নয়। জবাবটা দিচ্ছেন না কেন?
অল রাইট। Blain ইংরেজি শব্দ নয়।
টেবিলে যারা বসেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের মুখের দিকে চাইলেন গোনজালো সবাই তাহলে মেনে নিচ্ছেন, Blain ইংরেজি শব্দ নয়।
কিঞ্চিৎ দ্বিধার সঙ্গে হলেও একে-একে সবাই সায় দিলেন। সবশেষে বিড়বিড় করে ইমানুয়েল রুবিন বললেন কক্ষনো না। ভদ্রলোকের চশমার লেন্স এত মোটা যে কাঁচের মধ্যে দিয়ে অস্বাভাবিক বৃহৎ দেখাচ্ছে চক্ষু যুগলকে। দাড়ির দৈর্ঘ্যও কম নয়–তবে আজকে তা সামান্য খাটো–যেন অন্যমনস্কভাবে কেটে ছোট করে ফেলেছেন।
লরেন্স পেনটিলি এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিলেন। আজকের ভোজসভায় তিনিই প্রধান অতিথি। প্রৌঢ়। পাতলা সাদা চুল। জুলপি দুটো মাটনচপ আকারে লম্বা হয়ে নেমে এসেছে নিচের দিকে এবং যেন আরও নামবার ফিকিরে আছে। সবার বক্তব্য শেষ হয়ে গেলে ইনি মৃদু হাসলেন এবং বললেন–জীবনে শুনিনি এই শব্দ।