পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা কোন বিষয়?
সেই সে মহান খবর লয়ে যাতে সে ভিন্নমত হয়?
না, না, তারা জানবে ত্বরায়, জানবে, কই আবার
করিনি কি শয্যারূপে নির্মাণ আমি এই ধরার?
কীলক স্বরূপ করিনি কি স্থাপিত ওই সব পাহাড়?
জোড়ায় জোড়ায় তোমাদের সৃষ্টি করেছি আবার।
বিরাম লাগি দিয়াছি ঘুম, রাত তোমাদের আবরণ,
করিয়াছি জীবিকার তরে দিবসের সৃজন।
নির্মিয়াছি দৃঢ় সপ্ত (আকাশ) ঊর্ধ্বে তোমাদের,
করিয়াছি প্রস্তুত এক প্রদীপ্ত সে প্রদীপ ফের,
বর্ষণ করেছি সলিল মেঘ হতে মুষলধারায়,
কারণ আমি জন্মাব যে উদ্ভিদ ও শস্য তায়,
এবং গহন কাননরাজি। আছে আছে সুনিশ্চয়,
মীমাংসা সে অবধারিত যেদিন সে ভেরি প্রলয়
উঠবে বেজে; শুনে তাহা তোমরা সবে দলে দল
সমাগত হবে; এবং খোলা হবে গগনতল,
তাহার ফলে হয়ে, যাহে সেদিন তাহা বহুদ্বার,
সঞ্চালিত করা হবে পাহাড় সবে; ফলে তার
মরীচিবৎ হবে তারা। দোজখ আছে অপেক্ষায়,
সুনিশ্চয়; অবাধ্য যারা তাদের বাসস্থান তাহায়।
সেই খানেতে করবে তারা বহু, ‘হোকবা’ অবস্থান!
পাবে নাকো সেখানে তারা স্নিগ্ধ স্বাদ এবং পান
করতে নাহি পাবে কিছু, যেমন কর্ম তেমনি ফল,
পাবে সলিল উষ্ণ ভীষণ কিংবা দারুণ সুশীতল।
হিসাব-নিকাশ আশা তারা করত নাকো সুনিশ্চয়,
মিথ্যার আরোপ করেছিল নিদর্শন সে সমুদয়।
দেখতে আমার ওরা সবে হঠকারিতা করেই
অথচ রেখেছি গুনে গুনে প্রতি বস্তুকেই।
সুতরাং এবার মজা দেখো! এখন কেবল যাতনাই
বাড়িয়ে দিতে থাকব আমি, তোমাদিগের
– (রেহাই নাই)!
সংযমী লোক সবার তরেই সফলতা সুনিশ্চয়,
প্রাচীর ঘেরা কাননরাজি এবং আঙুর (সেথায় রয়)।
সমান বয়েস তরুণীদল, পানপাত্র পরের পর
আসবে সেথা পূর্ণ এবং পবিত্র (অমৃত ভর)।
শুনতে নাহি পাবে তারা মিথ্যা প্রলাপ সেই সে স্থান
বিনিময়ে তোমার প্রভুর থেকে তাই যথেষ্ট দান।
ভূলোক ও দ্যুলোকের যিনি সকল কিছুর অধীশ্বর,
করুণাময় যিনি তাহার কেহই সে দিন তাঁহার পর
হবে নাকো অধিকারী সম্বোধন করিতে তার।
জিবরাইল আর ফেরেশ্তারা দাঁড়াবে সব দিয়ে সার
সেদিন তারা কইতে নারবে কোনো কথা; কিন্তু যার
মিলবে আদেশ কৃপা-নিধান খোদার কাছে বলবে সে
সঙ্গত সেকথা। উহাই নিশ্চিত দিন সত্য যে সে।
সুতরাং যার ইচ্ছা হয়
আপন প্রভুর কাছে এসে গ্রহণ করুক সে আশ্রয়।
অনাগত শাস্তি সে কি, তার বিষয়
সাবধান করেছি আমি তোমাদের সুনিশ্চয়।
দেখতে পাবে সেদিন মানুষ পাঠাল দুই হস্ত তার
কোন সম্বল আগের থেকে! বলতে থাকবে কাফের
– আর (ভাগ্যহত আমি হায়)
হতাম যদি মাটি – (ছিল শান্তি তায়)!
তাম্মাত
————-
সুরা নাবা
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৪০টি আয়াত, ১৭৪টি শব্দ ও ৮০১টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – হজরত প্রথম যে সময়ে লোকদিগকে ইসলামের দিকে আহ্বান করিয়া কোরান শুনাইতেন ও কেয়ামতের ভীতিপ্রদ সংবাদ বর্ণনা করিতেন সেই সময়ে বিধর্মীরা তাঁহার প্রেরিত তত্ত্ব, কোরান ও কেয়ামত সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করিত, আর একে অপরের নিকট ওই সকল বিষয় সম্বন্ধে নানারূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিত। তখন এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা নাস
শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
করুণা ও দয়া যাঁর অশেষ অপার।
বল, আমি তাঁরই কাছে মাগি গো শরণ
সকল মানবে যিনি করেন পালন।
কেবল তাঁহারই কাছে – ত্রিভুবন মাঝ
সবার উপাস্য যিনি রাজ- অধিরাজ।
কুমন্ত্রণাদানকারী ‘খান্নাস’ শয়তান
মানব দানব হতে চাহি পরিত্রাণ।
————-
সুরা নাস
মদিনা শরিফে অবতীর্ণ; ইহাতে ৬টি আয়াত, ২০টি শব্দ, ৮১টি অক্ষর ও ১টি রুকু আছে। ‘নাস’ অর্থ মানুষ। (কোর-আন শরিফের মোট ১১৪টি সুরার মধ্যে এইটিই শেষ সুরা)।
শানে-নজুল– মদিনা শরিফের অধিবাসী লবিদ নামক একজন ইহুদির কয়েকটি কন্যা ছিল। তাহারা হজরত নবি করিমের মাথার কয়েকটি চুল ও চিরুনির কয়েকটি দাঁতের উপর জাদুমন্ত্র পাঠ করিয়া এগারোটি গ্রন্থি দিয়াছিল এবং তাহা এক একটি খোর্মা মুকুলের মধ্যে রাখিয়া ‘যোরআন’ নামক কূপের তলদেশস্থ প্রস্তরের নীচে স্থাপন করিয়াছিল। এই জাদুর দরুন হজরতের শরীর এরূপ অসুস্থ হইয়াছিল যে, তিনি যে কাজ করেন নাই তাহাও করিয়াছেন বলিয়া কখনও কখনও তাঁহার ধাটণা হইত। হজরত ছয় মাস কাল যাবৎ এরূপ ব্যাধিগ্রস্ত ছিলেন। এক রাত্রে তিনি স্বপ্নে জানিতে পারিলেন তাঁহার ওই পীড়ার কারণ কী। প্রাতে হজরত আলি, আম্মার ও জোবায়েরকে ‘যোরআন’ কূপের দিকে প্রেরণ করেন। তাঁহারা উক্ত কূপের তলদেশ হইতে ওইসব দ্রব্য তুলিয়া হজরতের নিকট নিয়া হাজির করেন। তখন জিব্রাইল ‘ফলক’ ও ‘নাস’ এই দুই সুরা সহ অবতরণ করেন। এই দুই সুরায় এগারোটি আয়াত আছে। তিনি এক এক করিয়া ক্রমান্বয়ে এগারোটি আয়াত পাঠ করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এক এক করিয়া উহার এগারোটি গ্রন্থি খুলিয়া গেল। অতঃপর হজরত সম্পূর্ণরূপে রোগ হইতে মুক্তি লাভ করিলেন।
(–এমাম এবনে কছির, জালালায়ন, কবির।)
এস্থলে ইহাও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, জাদুমন্ত্র দ্বারা মানুষের শারীরিক ক্ষতি হওয়া অসমীচীন নয়; কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জাদুমন্ত্র-প্রভাবে স্বর্গীয় আদেশ প্রচারের কালে বিকারগ্রস্ত হইয়াছিলেন এরূপ ধারণা করা বাতুলতা মাত্র।
(কবির, হাক্কানী)
সুরা ফজর
শুরু করি লয়ে পাক নাম আল্লার,
করুণা-নিধান যিনি কৃপা-পারাবার।
উষার শপথ। দশ সে রাতের শপথ করি, জোড়-বিজোড় সে দিনের শপথ! সে বিভাবরী, যবে অবসান হতে থাকে করি তার শপথ জ্ঞানীদের তরে যথেষ্ট শপথ – এই তো। ভীমবাহু ওই ইরামীয়, ‘আদ’দের পরে, করেছেন কীবা প্রভু তব, দেখনি কি ওরে? হয়নি সৃজিত নগরসমূহে তাদের প্রায় আর সে ‘সামুদ’ জাতি সে পাথর কাটিয়া সে উপত্যকায় – বসাইয়াছিল নগর বসতি, আর বহু কীলকধারী; ফেরাউন সাথে বিনাশ সাধিলাম কেন আমি তাহারই? নগরে নগরে করেছিল ঔদ্ধত্য – আর বহু অনাচার এনেছিল তথায় আবার। শাস্তি দণ্ড তোমাদের প্রভু তাদের উপরে দিলেন তাই, নিশ্চয় তব প্রভু দেখে সব, থাকেন সময় প্রতীক্ষায়। মানবে যখন দিয়ে সম্পদ সম্মান, করে পরীক্ষা প্রভু, ‘আমার প্রভুই দিলেন এ সব সম্মান’ – বলে অবোধ তবু। আবার তাহারে পরীক্ষা যবে করেন জীবিকা হ্রাস করে, সে বলে, ‘আমার প্রভুই এ হেন অপমানিত গো করিল মোরে!’ নহে, নহে, তাহা কখনই নহে, এ সবের তরে তোমরা দায়ী, এতিমে তোমরা গ্রাহ্য কর না কাঙালে খাদ্য দিতে উৎসাহ নাহি। অন্নমুষ্টি তারে নাহি দাও, অত বেশি কর অর্থের মায়া, পিতৃ-সম্পদ বিনা বিচারে সে যাও যে তোমরা ভোগ করিয়া। জান না কি, যবে ভীষণ রবে এ-ধরিত্রী বিচূর্ণিত হবে, দলে দলে ফেরেশ্তাগণ তখন হাজির হবে সবে। আর আসিবেন সেদিন তব মহান প্রভু সেথায়, দোজখ সেদিন হইবে আনীত, সেদিন মানুষ স্মরিবে হায়! কিন্তু সেদিন স্মরণে কি হবে? ‘হায় হায়’ করি কাঁদিবে সব, ‘পূর্বে যদি এ জীবনের তরে প্রেরিতাম পুণ্যের বিভব!’ অন্য কেহ সে পারিবে না দিতে তেমন শাস্তি সেদিন, অন্য কেহই তখন বাধা দিতে পারিবে না সেই যে দিন। শাস্তি-প্রাপ্ত মানব-আত্মা! ফিরে এসো নিজ প্রভু পানে। তুমি তার প্রতি প্রীত যেমন তিনি তব প্রতি প্রীত তেমন। অনুগত মোর দাস যারা এসো সেই দলে, বেহেশ্তে মোর করিবে প্রবেশ অবহেলে।
————–
সুরা ফজর
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৩০টি আয়াত, ১৩৭টি শব্দ ও ৫৮৫টি অক্ষর আছে।