শানে-নজুল – হজরতের নিকট কোনো কারণে কয়েকদিন (কাহারও মতে ১০, কাহারও মতে ১৫, কাহারও মতে ৪০ দিন) অহি নাজেল না হওয়ায় কাফেরেরা বিদ্রুপ করিয়া বলিতেছিল – মোহাম্মদকে (দঃ) তাঁর আল্লা পরিত্যাগ করিয়াছেন। ইহা শ্রবণ করিয়া হজরত দুঃখে মর্মাহত হন, তখন এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা নসর্
শুরু করিলাম শুভ নামে আল্লার,
নাই আদি অন্ত যাঁর করুণা কৃপার।
আসিছে আল্লার শুভ সাহায্য বিজয়!
দেখিবে – আল্লার ধর্মে এ জগৎময়
যত লোক দলে দলে করিছে প্রবেশ,
এবে নিজ পালক সে প্রভুর অশেষ
প্রচারো হে প্রশংসা কৃতজ্ঞ অন্তরে,
করো ক্ষমা-প্রার্থনা তাঁহার গোচরে।
করেন গ্রহণ তিনি সবার অধিক
ক্ষমা আর অনুতাপ-যাচ্ঞা সঠিক।
—————
সুরা নসর্
র্এই সুরা মদিনা শরিফে অবতীর্ণ হয়; ইহাতে ৩টি আয়াত, ১৯টি শব্দ ও ৮১টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – হিজরি ষষ্ঠ সালে হজরত ছাহাবাগণসহ ‘ওমরা’ সম্পন্ন করার জন্য হোদায়বিয়া নামক স্থানে উপস্থিত হইলে কোরেশগণ তাঁহাদিগকে মক্কা শরিফে প্রবেশ করিতে বাধা প্রদান করে। সেই সময় কোরেশগণের সহিত হজরতের এই মর্মে এক সন্ধি হয় যে, একদল অপর দলের প্রতি কোনো প্রকার অত্যাচার করিতে পারিবে না। বনুবকর সম্প্রদায় কোরেশদের ও খোজা সম্প্রদায় হজরতের পক্ষভুক্ত হইল। কিছুকাল পর বনুবকরেরা কোরেশদের সহায়তায় উক্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করতঃ খোজাদলকে আক্রমণ করে। খোজারা হেরেম শরিফে আশ্রয় গ্রহণ করা সত্ত্বেও বনুবকরেরা তাহাদিগকে প্রহার করে। জনৈক খোজা-নেতা ও তাহাদের দলের কয়েকজন লোক মদিনা শরিফে হজরতের নিকট উপস্থিত হইয়া সাহায্য প্রার্থনা করেন। হজরত ছাহাবাগণকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইতে আদেশ প্রদান করেন। পূর্বের অঙ্গীকার দৃঢ় ও শর্তের সময় বৃদ্ধি করার মানসে কোরেশগণ আবুসুফিয়ানকে মদিনা শরিফে প্রেরণ করেন। হজরত আলি, জোবায়ের প্রভৃতি ছাহাবার প্রেরিত পত্রবাহকের নিকট হইতে পত্র কাড়িয়া লন। দশম হিজরিতে দশ হাজার ছাহাবা-সহ মক্কা অভিমুখে হজরত যাত্রা করেন। আবুসুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ, হজরত আব্বাসের প্রার্থনায় তাহার মুক্তি, বহু সৈন্যের ভীতি, মক্কা বিজয়, অধিবাসীগণকে ক্ষমা, ১৫ দিবস তথায় অবস্থান ইত্যাদির আভাস ইহাতে প্রদান করা হইয়াছে।
সুরা নাজেয়াত
শুরু করি লয়ে পূত নাম সে খোদার
যিনি চির-দয়াময় করুণা-আধার।
তাদের শপথ পূর্ণ-বেগে টানে যারা(ধনুর্গুণ)
তাদের শপথ ছুটে (যে শর) তীব্র সে গতি-নিপুণ।
তাদের শপথ পূর্ণবেগে যারা সন্তরণকারী,
দ্রুতবেগে অগ্রগামী (অশ্ব যে) প্রমাণ তারই।
করে যারা সব বিষয়ের ব্যবস্থা তাদের প্রমাণ।
কম্পনের সে পরে যেদিন ধরা হবে কম্পমান,
কত সে অন্তরাত্মা সেদিন হবে ঘন-স্পন্দিত,
দৃষ্টিগুলি তাদের সেদিন হবে অবনমিত।
বলছে তারা (ব্যঙ্গসুরে) ‘আমরা কি গো পুনর্বার
জীর্ণ অস্থি হবার পরেও পূর্বজীবন পথে আর
(বিতাড়িত হব)। ওহো, তবে বড়োই ক্ষতিকর
হবে তো সে জীবন পাওয়া।’ একটি মাত্র তাড়নায়
প্রান্তর-ভূমিতে তারা অমনি হাজির হবে, হায়
তোমার কাছে পৌঁছেনি কি মুসার সেই সে বিবরণ?
তাহার প্রভু যখন তারে করিলেন সেই সম্বোধন
পূত ‘তোওয়া’ প্রান্তরে ‘ফেরাউনের’ বরাবর,
উচ্ছৃঙ্খল হয়েছে সে। বলবে তারে অতঃপর, –
‘তুমি পাক হতে কি চাও? দেখাইয়া দিই তোমায়
তোমার প্রভুর দিকের পন্থা, চলবে হে ভয় করে তায়।’
(পরে) মুসা দেখাল তায় শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন,
সে সত্যরে মিথ্যা বলে লইল না তা (ফেরাউন)।
প্রবৃত্ত সে হইল কুচেষ্টায় যে অতঃপর,
ঘোষণা সে করিল ফলে জুটিয়ে (বহু লস্কর),
বলিল তখন, ‘আমিও তো পরম প্রভু তোদের রে!’
ইহকাল আর পরকালের শাস্তি দিতে চাই তারে
ধৃত করিলেন আল্লাহ্। ভয় রাখে যে তাঁর তরে
বিশেষ করে জানার উপদেশ আছে (কোরান ভরে)।
তোমাদের কি সৃষ্টি অধিক কঠিন? না ওই আকাশের?
সৃজিয়া তায় ঊর্ধ্বকে তার করিলেন সুউচ্চ ফের।
ঠিক-ঠাক তায় দিলেন করে। রজনিকে তিমিরময়
করলেন (দূর করে তাহার আলোকরাশি সমুদয়)।
প্রসারিত করলেন এই ধরায় তিনি অতঃপর
তাহার থেকে করলেন বাহির পানি এবং চারণ-চর।
(তোমাদের ও তোমাদের পশুর উপকার তরে)
প্রতিষ্ঠিত করলেন ওই শৈলমালা উপরে।
সে মহাবিপদ আসবে যেদিন অতঃপর,
অর্জন সে করিছে কী বুঝতে পারবে সেদিন নর।
দর্শকে দেখানোর তরে দোজখ হবে সুপ্রকাশ,
লঙ্ঘন যে করে বিধি পার্থিব জীবনের আশ –
মুখ্যভাবে যে জন করে তার স্থিতিস্থান দোজখ পরে।
কিন্তু প্রভুর সম্মুখে তার দাঁড়াবার যে ভয় রাখে,
নীচ যত প্রবৃত্তি হতে মুক্ত রাখে আত্মাকে,
ফলে – (হবে) নিশ্চয় ওই বেহেশ্ত তাহার স্থিতিস্থান!
জিজ্ঞাসিছে ওরা ‘হবে কখন তাহার অধিষ্ঠান,
সেই মুহূর্ত আসবে কবে? তুমি আলোচনায় সেই
(ব্যস্ত) আছ? তার নিরুপণ তোমার প্রভুর নিকটেই।
– যেসব লোকে ভয় রাখে সেই মুহূর্তের
তুমি কেবল করতে পার সাবধান সে তাহাদের
(করবে মনে সেদিন তারা) দেখবে যখন সে খন,
রয়নি তারা এক সাঁঝ বা এক প্রভাতের অধিকক্ষণ।
———
সুরা নাজেয়াত
এই সুরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৪৬টি আয়াত, ১৮১টি শব্দ ও ৮৯১টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – অনন্ত শক্তিময় আল্লার শক্তির কথা আর পরকাল ও পুনর্জীবন প্রভৃতি বর্ণনা দ্বারা মানুষকে সাবধান করিয়া দেওয়া হইয়াছে, – মানুষ যেন নিজের মনকে নীচ প্রবৃত্তি হইতে নিবৃত্ত রাখে এবং ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের সুখ-লালসার নিমিত্ত যেন পরকালের অনন্ত জীবনের অনন্ত সুখের পথ বিনষ্ট না করে। পরকালের প্রতি লক্ষ রাখার ইঙ্গিত দিবার জন্যই এই সুরা অবতীর্ণ হইয়াছে।
সুরা নাবা
শুরু করি লয়ে নাম খোদার,
করুণাময় ও কৃপা-আধার।