শানে-নজুল – একদা হজরতের সঙ্গে আবুবকর (রাঃ) যখন কিছু খাদ্য গ্রহণ করিতেছিলেন, সেই সময় ৭/৮ আয়াত নাজেল হয়। তখন আবুবকর (রাঃ) আহার গ্রহণ ত্যাগ করিয়া হজরতকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি এক বিন্দু কুকর্মের প্রতিফল প্রাপ্ত হইব? তদুত্তরে হজরত বলিয়াছিলেন, সংসারে তুমি যে কোনও সময়ে বিপদাপন্ন হও, উহা তোমার বিন্দু বিন্দু অসৎ কর্মের প্রতিফল; আর তোমার বিন্দু বিন্দু পুণ্যকে আল্লা তোমার জন্য সম্বলস্বরূপ রক্ষা করেন, পরকালে, ওই সকলের প্রতিদান আল্লা তোমাকে দিবেন। সামান্য সামান্য সৎকার্য আর সামান্য সামান্য পাপকার্য একত্রিত হইয়া পর্বততুল্য হইয়া যায়; অকিঞ্চিৎকর কার্যও বৃথা যায় না – এই শিক্ষা প্রচারার্থে উক্ত আয়াতদ্বয় নাজেল হয়।
সুরা তকভীর
শুরু করিলাম শুভ নামেতে খোদার,
করুণা-আকর যিনি দয়ার আধার।
সংকুচিত হয়ে যবে সূর্য যাবে জড়ায়ে,
তারকা সব পড়বে যখন ইতস্তত ছড়ায়ে,
পর্বত সব সঞ্চারিয়া ফিরবে যখন (ধূলির প্রায়),
পূর্ণগর্ভা উটগুলিরে দেখবে না কেউ উপেক্ষায়,
বেরিয়ে আসবে বুনো যত জানোয়ারেরা বেঁধে দল,
হবে প্লাবন-উদ্বেলিত যখন সকল সাগর-জল।
আত্মা হবে যুক্ত দেহে। জ্যান্ত পোঁতা কন্যাদের
পুছব যখন কোন দোষে বধ করছে পিতা তোদের?
যখন খোলা হবে সবার আমলনামা; সেই সেদিন
জ্বলবে দোজখ ধুধু, হবে আকাশ আবরণ-বিহীন,
জানবে সেদিন প্রতি মানব, সাথে সে কী অনল তার!
শপথ করি ওই চলমান আর স্থিতিশীল তারকার,
রাত্রি যখন পোহায় এবং উষা যখন ছায় সেদিক,
শপথ তাদের, মহিমময় রসুলের এ বাণী ঠিক।
আরশ-অধিপতির কাছে প্রতিষ্ঠা তাঁর, সেই রসুল
বিশ্বস্ত, সম্মানার্হ, শক্তিধর, ধরায় অতুল।
পাগল নহে তোমাদের এই সহচরী, সাক্ষ্য দিই,
মুক্ত দিগন্তরে জিব্রাইল দেখেছেন সে তিনিই।
অদেখা যা দেখেন ইনি ব্যক্ত করেন তখন তাই,
বিতাড়িত শয়তানের এ উক্তি নহে (কহেন খোদাই)।
তোমরা যবে অতঃপর কোন সেদিকে? বাণীতে
– যাহা কই,
বিশ্ব-নিখিল-শুভ তরে নয় তো এ উপদেশ বই!
এই উপদেশ তাহার তরে, তোমাদিগের মাঝ হতে
চলিতে যে চাহে আমার সুদৃঢ় সরল পথে।
নিখিল-বিশ্ব-অধিরাজের ইচ্ছা না হয় যতক্ষণ,
তোমরা ইচ্ছা করতে নাহি পারবে জানি ততক্ষণ।
————–
সুরা তকভীর
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ২৯টি আয়াত, ১০৪ টি শব্দ ও ৪৩৬টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল –কেয়ামত, পরকাল ও কর্মফল ভোগের কথা যখন হজরত মোহাম্মদ (দঃ) বলিতেন তখন মক্কাবাসীরা তাঁহাকে পাগল বলিত। কেয়ামতের ভীষণ ধ্বংসলীলা ও আল্লার শক্তির বর্ণনা দ্বারা তাঁহার প্রতি নির্ভরশীল হইয়া সৎকর্ম করিবার জন্য তাকিদ দিবার নিমিত্ত এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা তাকাসুর
শুরু করি লয়ে শুভ নাম আল্লার, নাহি আদি নাহি অন্ত যাঁর করুণার। অধিক লোভের বাসনা রেখেছে তোমাদেরে মোহ-ঘোরে, যাবৎ না দেখ তোমরা গোরস্থানের আঁধার গোরে। না, না, না, তোমরা শীঘ্র জানিবে পুনরায় (কহি) ত্বরা জ্ঞাত হবে; না, না, হতে যদি জ্ঞানী ধ্রুব সে জ্ঞানেতে ভরা। দোজখ -অগ্নি করিবে তোমরা নিশ্চয় দর্শন দেখিবে তাহারে তার পর লয়ে বিশ্বাসীর নয়ন। – নিশ্চয় তার পরে হইবে জিজ্ঞাসিত আল্লার চিরসম্পদ তরে।
———–
সুরা তাকাসুর
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ৮টি আয়াত, ২৮টি শব্দ ও ১২৩টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – কোরেশ কুলের এক শাখার নাম বণি-আব্দ-বেনে মান্নাফ, অপর শাখার নাম বণি-সাহম। প্রত্যেক শ্রেণি অহংকারে মত্ত হইয়া বলিতে লাগিল – আমরা অর্থে, ঐশ্বর্যে, সম্ভ্রমে ও লোকসংখ্যায় শ্রেষ্ঠতর। এমনকী, প্রত্যেক দল স্বীয় গৌরব বর্ধনের নিমিত্ত আপন দলভুক্ত লোকদিগকে গণনা করিতে আরম্ভ করিল। এই গণনায় আব্দ-মান্নাফ বংশের লোক সংখ্যায় অধিক হইল। পরে জীবিত ও মৃত উভয় শ্রেণির লোক গণনা করায় বণি-সাহম দলের লোকসংখ্যা অধিক হইল। লোকসংখ্যা নিরূপণের নিমিত্ত তাহারা গোরস্থানে গিয়াছিল। সেই সময় এই সুরা নাজেল হয়।
[মতান্তরে :- ইহুদিগণের নামে সংখ্যাধিক্য লইয়া কলহের সূত্রপাত হওয়ায় মদিনাবাসী বণি-হারেস ও বণি-হারেসা এই দুই দল পরস্পর ধনৈশ্বর্যের অহংকার করায় এই সুরা নাজেল হয়। – (এক্সির)]
সুরা তারেক
শুরু করি লয়ে শুভ নাম আল্লার,
করুণা-সাগর যিনি দয়ার পাথার।
শপথ ‘তারেক’ ও আকাশের সে ‘তারেক’ কী তা জান কীসে? নক্ষত্র সে জ্যোতিষ্মান (নিশীথে আগত অতিথি সে) এমন কোনো সে নাহি মানব রক্ষক নাই উপর যার, অতএব দেখা উচিত তার কোন বস্তুতে সৃষ্টি তার। বেগে বাহিরায় উছল জল- বিন্দু তাতেই সৃজন তার পিঠ ও বুকের মধ্য দেশ সেই যে জল স্থান যাহার। সক্ষম তিনি নিশ্চয়ই করিতে পুনর্জীবন দান, অভিব্যক্ত হবে সবার গুপ্ত বিষয় হবে প্রমাণ, রবে না শক্তি সহায় আর সেদিন তাহার কোনো কিছুই, শপথ নীরদ-ঘন নভের শপথ বিদায়শীল এ-ভুঁই। ইহাই চরম বাক্য ঠিক, নিরর্থক এ নহে সে দেখ, মতলব করে তাহারা এক মতলব করি আমিও এক অবসর তুমি দাও হে তাই বিধর্মীদের ক্ষণতরে দাও অবকাশ তাহাদেরে।
————-
সুরা তারেক
এই সুরা মক্কা শরিফে নাজেল হয়। ইহাতে ১৭টি আয়াত, ৬১টি শব্দ ও ২৫৪টি অক্ষর আছে।