সুরা কাফেরুন
আরম্ভ করি লয়ে নাম আল্লার,
আকর যে সব দয়া কৃপা করুণার।
বলো, হে বিধর্মিগণ, তোমরা যাহার
পূজা কর, – আমি পূজা করি না তাহার।
তোমরা পূজ না তাঁরে আমি পূজি যাঁরে,
তোমরা যাহারে পূজ – আমিও তাহারে
পূজিতে সম্মত নই। তোমরাও নহ
প্রস্তুত পূজিতে, যাঁরে পূজি অহরহ।
তোমাদের ধর্ম যাহা তোমাদের তরে,
আমার যে ধর্ম রবে আমারই উপরে।
————-
সুরা কাফেরুন
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ; ইহাতে ৬টি আয়াত, ২৭টি শব্দ ও ৯৯টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – ওমাইয়া, হারেছ, আ-স, অলিদ প্রভৃতি কোরেশগণ হজরত তাহাদের ধর্মমতের অনুসরণ করিলে তাহারাও হজরতের ধর্মমতের অনুসরণ করিবেন বলায় তিনি বলিলেন, আমি আল্লার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, আমি কখনও তাঁহার অংশীস্থাপন করিতে পারিব না। তাহারা বশ্যতা স্বীকার করে না অথচ হজরতের সহিত মিলিত হইতে চায়; তখন এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা কোরায়শ
শুরু করিলাম শুভ নামে আল্লার
রহিম ও রহমান যিনি দয়ার পাথার।
কী অদ্ভুত আচরণ কোরায়শগণের,
ব্যক্ত যাহা পর্যটনে শীত গ্রীষ্মের।
এখন উচিত, তারা সেই অনুরাগে
এই গৃহাধিপতির অর্চনায় লাগে।
যিনি অন্ন দিয়াছেন তাদের ক্ষুধায়,
ভয়ে দিয়াছেন শান্তি – পূজুক তাহায়।
———–
সুরা কোরায়শ
ইহা মক্কায় নাজেল হইয়াছে। এই সুরাতে ৪টি আয়াত, ১৭টি শব্দ ও ৭৯টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – করশ শব্দ হইতে কোরায়শ শব্দ উৎপন্ন হইয়াছে। ইহার আভিধানিক অর্থ – অর্থ সংগ্রহ করা বা উপজীবিকা সংগ্রহ করা। কোরায়েশগণ ব্যবসায় দ্বারা অর্থ বা উপজীবিকা সংগ্রহ করিতেন – তজ্জন্য তাঁহারা এই নামে অভিহিত হইতেন। এবনে আব্বাসের মতে, কোরায়েশ নামক এক প্রকার জলজন্তু সমুদ্রে বাস করে। উহারা সামুদ্রিক জন্তুদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। উহারা যে সামুদ্রিক জন্তুর নিকট উপস্থিত হয় তাহাকেই গ্রাস করে; কিন্তু অন্য কোনো জন্তু উহাদিগকে গ্রাস করিতে পারে না। আরব দেশের সর্বাপেক্ষা পরাক্রমশালী সম্প্রদায় কেলাবের পুত্র কোছাইয়ের বংশধরেরা এই নামে অভিহিত। তাহারা বাণিজ্যার্থে শীতকালে ইমন প্রদেশের দিকে ও গ্রীষ্মকালে শাম (সিরিয়া) দেশের দিকে যাইত। কাবাগৃহের রক্ষক ও অধিপতি বলিয়া উভয় দেশের নরপতিগণ তাহাদিগকে প্রচুর সম্মান করিত; আর তাহারাও বস্ত্র, খাদ্য ইত্যাদি আবশ্যকীয় বস্তুগুলি স্বদেশে আনয়ন করিত ও বাণিজ্যে বেশ লাভবান হইত।
কানানার পুত্র নাজারকে কোরায়েশ নামে অভিহিত করা হইত। তৎপর তাহার বংশধরেরা উক্ত নামে অভিহিত হইতে থাকে। হজরত ও তাঁহার ৪ জন খলিফা এই বংশসম্ভূত।
সুরা ক্বারেয়াত
শুরু করি লয়ে শুভ নাম আল্লার,
করুণা-আকর যিনি দয়ার পাথার।
প্রলয়ান্তক সেই বিপদ কোন সে বিপদ ধ্বংস ভয়? কীসে সে তোমারে জানাল, সেই বিপদ ভীষণ প্রলয়ময়? বিক্ষিপ্ত পতঙ্গপ্রায় সেদিন উড়িবে লোক সবায়, বিধূনিত লোমবৎ সেদিন পর্বতরাজি উড়িবে বায়। সেদিন সে পাবে সুখী জীবন পাল্লা যাহার হবে ভারী, পাল্লা হবে হালকা যার (হবে) ‘হাভিয়া’ দোজখ মাতা তারই। হাভিয়া কী, তুমি জান কি সে? প্রজ্বলিত বহ্নি সে।
—————-
সুরা ক্বারেয়াত
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ১১টি আয়াত, ৩৫টি শব্দ ও ১৬০টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – কেয়ামতের ভীতি প্রদর্শন ও ইসলামের বিজয়ের ইঙ্গিত করার জন্য এই সুরা নাজেল হয়। এমাম কাতাদা বলেন – একদা ইহুদিগণ বলিয়াছিল যে, আমরা বিপক্ষ দল অপেক্ষা সংখ্যায় অধিক; সেই সময়ে এই সুরা নাজেল হয়।
এমাম এবনে কসিরের মতে, মদিনাবাসী বণি-হরেস ও বণি-হারেসা এই দুই দল ধনসম্পদের অহংকার করিয়াছিল, তজ্জন্য এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা গ্বাশিয়া
শুরু করি শুভ নাম লয়ে আল্লার,
করুণা-নিধান যিনি কৃপা-পারাবার।
– আসিয়াছে নিকটে তোমার
বৃত্তান্ত কি আচ্ছন্নকারী ঘটনার?
বহু সে আনন হবে নত জ্যোতিঃহীন;
শ্রান্ত কর্ম-পরিক্লান্ত তাহারা সেদিন
প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করিয়া
ফুটন্ত উৎসের জল যাইবে পিইয়া।
বিষ কণ্টক শুধু পাইবে আহার,
করিবে না পুষ্ট দেহ, নিবৃত্তি ক্ষুধার।
খুশিতে হইবে বহু মুখ উজ্জ্বল,
হরষে লইবে তারা নিজ পুণ্যফল।
মহিমা-সুন্দর পাবে তাহারা বাগান,
শোনে না কেহই সেথা মিথ্যার ব্যাখ্যান।
সেথা চির বহমান উৎস সমুদয়,
সমুন্নত সিংহাসন সেইখানে রয়।
রাখা আছে পানপাত্র, শত উপাধান,
বিছানো মখমল শয্যা (আরাম-শয়ান)।
দেখে নাকি উট সব চেয়ে তারা সবে?
কীরূপে তাদের সৃষ্টি হইল, না ভাবে?
দেখে না বিনা স্তম্ভে আকাশ কেমনে
উচ্চে হয়েছে রাখা? পর্বতগণে
দেখে না কেমনে হল তাদের স্থাপন?
বিস্তারিত হল এ-ধরা সে কেমন?
তুমি উপদেষ্টা শুধু, উপদেশ দাও,
তুমি তো প্রহরী নহ, (পথ সে দেখাও)।
মানিবে না আদেশ যে, ফিরাইবে মুখ,
দিবেন আল্লাহ্ তারে কঠোর সে দুখ।
নিশ্চয় ফিরিতে হবে তারে মোর পাশে,
হিসাব-নিকাশ হবে আমারই সকাশে।
———–
সুরা গ্বাশিয়া
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ৬টি আয়াত, ৯৩টি শব্দ ও ৩৮৪টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – মানুষ পরজীবনের কর্মফল ভোগ করিবে, আরবেরা ইহা বিশ্বাস করিত না। তাহারা বলিত, মানুষ একবার মরিয়া মাটি হইয়া গেলে পুনর্জীবন লাভ করিবে কী করিয়া? এই সুরায় মেঘমালার দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝানো হইয়াছে যে, আল্লার কুদ্রতে সব কিছু সম্ভব, অনন্ত শক্তিময় আল্লার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। তিনি মানুষকে পুনর্জীবন দান করিয়া এই জীবনের কর্মফল ভোগ করাইবেন। মানুষ এই জীবনে দুষ্কর্ম করিলে পরজীবনে তাহার সাজা পাইবে, আর এই জীবনে সৎকর্ম করিলে পরজীবনে তাহার পুরস্কার পাইবে। মানুষের কোনো কর্মই বৃথা হইবে না, ইহা বুঝাইবার জন্যই এই সুরা নাজেল হইয়াছে।
সুরা জিলজাল
শুরু করি লয়ে ‘পাক’ নাম আল্লার,
করুণানিধান যিনি কৃপার পাথার।
ঘোর কম্পনে ভূমণ্ডল প্রকম্পিত সে হবে যেদিন ধরা তার ভার বাহির করিয়া দিবে (সেদিন)। ‘কী হইল এর’ কহিবে লোকেরা, সেদিন ব্যক্ত করিবে সে নিজের যা কিছু খবর, তোমার প্রভুর সে খোদার নির্দেশে। প্রত্যাগত সে হইবে সেদিন দলে দলে যত লোক সকল, দেখানো হইবে কর্ম সকল তাদের (পাপ ও পুণ্য-ফল)। এক রেণুবৎ যে পুণ্য করিবে, তাহাও দেখিবে সে, পাপ যে করেছে এক রেণুবৎ দেখা দিবে তারে তাও এসে।
————–
সুরা জিলজাল
এই সুরায় ৮টি আয়াত, ৩৭টি শব্দ ও ১৫৮টি অক্ষর আছে। হাক্কানী, হোসেনী, শাহ্ অলিউল্লাহ্, শাহ্ রফিউদ্দিন, শাহ্ আবদুল আজিজ প্রভৃতির মতে, এই সুরা মদিনা শরিফে নাজেল হইয়াছে। কবির বলেন – এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে (এবনে আব্বাস, কাতাদা)। কাশ্শাপ, বায়জাবী ও জালালাইন বলেন – এই সুরার অবতরণ-স্থান সম্বন্ধে মতভেদ দৃষ্ট হয়। – (বোখারী শরিফ, Part1, Vol.1.)