সুরা আলক
শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
করুণা-সাগর যিনি দয়ার পাথার।
পাঠ করো প্রভুর নামে, স্রষ্টা যে জন,
করিছেন যিনি ঘন সে শোণিতে মানবে সৃজন।
পাঠ করো, তব বিধাতা মহিমা-মহান সেই,
দিয়াছেন সবে লেখনীর দ্বারা শিক্ষা যেই।
–সে জানিত না যাহা,
মানুষেরে তিনি দেছেন শিক্ষা তাহা।
না, না, মানুষ সীমা লঙ্ঘন করিয়া যায়,
ধন-গৌরবে মত্ত যে ভাবে সে আপনায়
নিশ্চয় তব প্রভুর পানে যে ফিরিতে হবে।
দেখেছ কি তারে–আমার দাসেরে সে জন যবে
নিবারণ করে দাস মোর যবে নামাজ পড়ে?
দেখেছ, সে জন থাকিত যদি রে সুপথ ধরে!
সে যদি অন্যে সংযমী হতে করিত আদেশ!
সত্যেরে যদি মিথ্যা বলে সে (শাস্তি অশেষ)।
(সত্য হইতে) মুখ সে ফিরায়! সে জন তবে
জানে না কি, খোদা দেখিতেছেন যে তার সে সবে?
না, না, যদি নিবৃত্ত সে না হয়, শেষ
টানিয়া আনিব ধরিয়া তাহার ললাট-কেশ।
মিথ্যাবাদী সে মহা পাতকীর ললাট (ধরি)
(টানিব)। ডাকুক সভা সে তাহার পারিষদেরই।
আমিও আমার বীর সেবকেরে দিই খবর,
না, না, না কখনও মানিয়ো না তাদের পর।
সেজদা করো
হও ক্রমে মোর নিকট হইতে নিকটতর।
———-
সুরা আলক
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ২৯টি আয়াত, ৭২টি শব্দ ও ২৯০টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – মক্কার অদূরে হেরা গিরি-গহ্বরে হজরত এবাদতে মশগুল হইতেন। জেব্রাইল হজরতের নিকট সর্বপ্রথম তথায় উপস্থিত হইয়া বলিলেন – ‘আপনি পাঠ করুন।’ হজরত বলিলেন – ‘আমি নিরক্ষর এবং পাঠ করিতে সমর্থ নহি।’ এইরূপ তিন প্রশ্নোত্তরের পর জেব্রাইল বলিলেন – ‘আপনি সেই মহান খোদার নামে পাঠ করুন’ ইত্যাদি। (কবির, কাশ্শাফ, বায়জাবী)
প্রথম পাঁচ আয়াত তখন নাজেল হয়। প্রথম ৫ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সুরা ফাতেহা ও তৎপর সুরা মোদ্দাস্সের অবতীর্ণ হয়। হজরত সেজদা করিতেছেন দেখিলে আবু জহল তাঁহার গ্রীবায় পদাঘাত ও তাঁহার মুখমণ্ডল মৃত্তিকায় প্রোথিত করিবে বলিয়া প্রতিবার শপথ করিয়াছিল। হজরতের নামাজ পড়িবার সময় কাছে উপস্থিত হইয়াও প্রতিজ্ঞা অনুরূপ কাজ করিতে সক্ষম হয় না। তখন ৬-১৪ আয়াত নাজেল হয়।
সুরা আস্র
শুরু করি শুভ নামে সেই আল্লার,
করুণা-আধার যিনি কৃপা-পারাবার।
অনন্ত কালের শপথ, সংশয় নাই,
ক্ষতির মাঝারে রাজে মানব সবাই।
(তারা ছাড়া) ধর্মে যারা বিশ্বাস সে রাখে,
আর যারা সৎকাজ করে থাকে,
আর যারা উপদেশ দেয় সত্য তরে,
ধৈর্যে সে উদ্বুদ্ধ যারা করে পরস্পরে।
————-
সুরা আস্র
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ৩টি আয়াত, ১৪টি শব্দ ও ৭৪টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – একদা হজরত আবুবকর (রাঃ) তাঁহার পূর্ববন্ধু কালদার সঙ্গে বসিয়া আহার করিতেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে কালদা বলিল – আপনি দক্ষতা সহকারে বাণিজ্য করিয়া লাভবান হইয়া আসিতেছেন – বর্তমানে পৈতৃক ধর্ম (প্রতিমা-পূজা) পরিত্যাগে মহা ক্ষতিগ্রস্ত হইলেন। তদুত্তরে আবুবকর (রাঃ) বলিলেন – যে সত্য ধর্ম অবলম্বন ও সৎকার্য সম্পাদন করে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে না। সেই সময় এই সুরা অবতীর্ণ হয়।
এবনে আব্বাসের মতে, ইহা অলিদ, আ-স কিংবা আসওয়াদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হইয়াছিল।
মোকাতেলের মতে, আবু লাহাব সম্বন্ধে ইহা অবতীর্ণ হইয়াছিল।
সুরা ইখলাস
শুরু করিলাম পূত নামেতে আল্লার
শেষ নাই সীমা নাই যাঁর করুণার।
বলো, আল্লাহ্ এক! প্রভু ইচ্ছাময়,
নিষ্কাম নিরপেক্ষ, অন্য কেহ নয়।
করেন না কাহারেও তিনি যে জনন,
কাহারও ঔরসজাত তিনি নন।
সমতুল তাঁর
নাই কেহ আর।
————–
সুরা ইকলাস
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ৪টি আয়াত, ১৭টি শব্দ, ৪৯টি অক্ষর ও ১টি রুকু আছে।
শানে-নজুল– মক্কার অধিবাসী কতিপয় কাফের হজরতকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, আল্লাহ্ কী উপাদানে গঠিত? তিনি কী আহার করেন? তাঁহার জনক কে? ইত্যাদি; তদুত্তরে এই সুরা নাজেল হয়। এমাম কাতাবা বলেন-‘সামাম’ অর্থ-যিনি পান-আহার করেন না। এই শব্দের– অভাব রহিত, শ্রেষ্ঠতম, অনাদি, নিষ্কাম, অনন্ত ইত্যাদি বহু অর্থ আছে। আল্লাহ্ কাহারও মুখাপেক্ষী বা সাহায্যপ্রার্থী নন, সকলেই তাঁহার সাহায্যপ্রার্থী; তিনি বে-নেয়াজ। এই সুরায় অংশীবাদী ও পৌত্তলিকদের মতবাদকে খণ্ডন করা হইয়াছে। –(করির, কাশ্শাফ, বায়জাবী।)
সুরা ইনফিতার
শুরু করি লয়ে শুভ নাম আল্লার,
করুণা-পাথার যিনি দয়া পারাবার।
আশমান সবে বিদীর্ণ হবে খসিয়া পড়িবে তারকা সব, সমাধিপুঞ্জ হবে উন্মুক্ত উচ্ছ্বসিত হবে অর্ণব, তখন জানিবে প্রত্যেক লোকে জীবনে করেছে কী সঞ্চয়, রাখিয়া এসেছে পশ্চাতে কীবা! হে মানব! তবে সে কৃপাময় প্রভু হতে রাখে বঞ্চিত করে তোমার কীসে? যে প্রভু তোমার সৃজিয়া তা পর সাজাল কেমন কৌশলে যেথা যাহা মানায়। যুক্ত তোমায় করেছেন তিনি যে আকারে তাঁর ইচ্ছা হয়, মিথ্যা বল যে কর্মফলেরে নহে নহে তাহা কখনও নয়। নিয়োজিত আছে রক্ষীবৃন্দ নিশ্চয় তোমাদিগের পর, যাহা কিছু মর, মহান হিসাব – লেখকদের তা হয় গোচর। রবে নিশ্চয় পরমাহ্লাদে পুণ্যবান সৎকর্মীরা, নিশ্চয় যাবে দোজখে সে যত দুঃশীল কু-ব্যক্তিরা। করিবে প্রবেশ রোজ কিয়ামতে সে দোজখে তারা। পশি সেথা লুকাতে পলাতে পারিবে না আর, তাহা কী জানাল তোমাকে – তা? জিজ্ঞাসা করি আবার তোমারে কিয়ামত কী তা জান কি সে? ইহা সেই শেষ-বিচার দিবস, যেদিন মানব-মানবী সে কেহই কারুর উপকারে কোনো আসিবে না, হবে নিঃসহায়, একমাত্র সে আল্লাতালার হুকুম সেদিন রবে সেথায়।
————
সুরা ইনফিতার
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ১৯টি আয়াত, ৮০ টি শব্দ ও ৩৩৪টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল –কেয়ামতের ভীষণ অবস্থার বর্ণনা ও মানুষকে যে তাহার কর্মফল নিশ্চয়ই ভোগ করিতে হইবে তাহা এই সুরার প্রতিপাদ্য বিষয়।
পরজীবনে সুফল পাইবার জন্য মানুষ যেন সৎকর্ম করে আর কুকর্মের ফল পরজীবনে যন্ত্রণাদায়ক হইবে ভাবিয়া যেন (এ জীবনে) কুকর্ম হইতে বিরত থাকে – এই উদ্দেশ্যেই এই সুরা নাজেল হইয়াছে।