———-
সুরা লায়্ল্
এই সুরা মক্কাতে নাজেল হয়। ইহাতে ২১টি আয়াত, ৭১টি শব্দ ও ৩১৪টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – আবুবকর (রাঃ) ও ২য় খালাফের পুত্র ওমাইয়া মক্কায় ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত সমাজ-নেতা ছিলেন। ওমাইয়া ১২টি কিঙ্কর দ্বারা নানা উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করিয়াছিলেন। পরকালের জন্য কেন তিনি দান করেন না? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলিতেন – প্রয়াসী বিপুল অর্থ সম্পদ থাকিতে কল্পিত বেহেশ্তের সম্পদ লাভের আশায় আমি নাই। ইনিই হজরত বেলালের মনিব ছিলেন। ওমাইয়ার গৃহে রাত্রে ক্রন্দনের শব্দ শ্রবণ করিয়া হজরত আবুবকর স্বীয় ক্রীতদাস নাস্তাশ ও ৪০টি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে বেলালকে ক্রয় করিয়া হজরতের সামনে নিয়া তাঁহাকে মুক্তি দান করেন।
অতএব, আবুবকর ও ওমাইয়া সম্বন্ধে এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা শাম্স্
শুরু করি লয়ে নাম মহান আল্লার,
যিনি সব দয়া-কৃপা-করুণা-আধার।
শপথ রবি ও রবি-কিরণের
যখন চন্দ্র চলে সে পিছনে তার,
দিবস যখন করে সপ্রকাশ
রবিরে, রজনি অন্ধকার,
যখন ছাইয়া ফেলে সে রবিরে;
নভঃ-নির্মাণকারী তাহার;
এই সে পৃথিবী সবিস্তার;
আত্মা, সুচারু গঠন তার।
সেই আত্মার সৎ ও অসতের
দিয়াছি দিব্য জ্ঞান,
এই সকলের শপথ ইহারা
সকলে করিছে সাক্ষ্য দান –
আত্মাশুদ্ধি হইল যার,
নিশ্চয় সার্থক জীবন,
আত্মায় কলুষিত করিল যে
চির-বঞ্চিত হল সে জন।
সত্যেরে বলিল মিথ্যা
‘সামুদ’ জাতি সে গর্বভরে
অগ্রসর হল হতভাগ্যেরা
(রসুলেরে নাহি গ্রহণ করে)।
কহিলেন রসুল খোদার প্রেরিত
–সলিল করিতে পান
ওই আল্লার উটেরে
দিয়ো নাকো বাধা বধো না প্রাণ।
বলিল নবিরে মিথ্যাবাদী
তথাপি তাহারা বধিল উটেরে,
তাহাদের তাই পাপের ফলে
বিধ্বস্ত করিল আল্লা তাদেরে।
ধূলিসাৎ করে ফেলিলেন খোদা
তাদেরে; এই সে ধ্বংস-লীলার
পরিণাম ফলে বে-পরোয়া তিনি
কোনো ভয় কভু নাই তাঁর।
————
সুরা শাম্স্
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ১৫টি আয়াত, ৫৬টি শব্দ ও ২৫৪টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – কোরআন শরিফে সাধারণত আধিভৌতিক, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের যুক্তির সাহায্যে কোনো একটা সত্য প্রতিষ্ঠা ও সপ্রমাণ করার বিষয় দেখিতে পাওয়া যায়।
এই সুরায় সূর্য, চন্দ্র ও দিবারাত্রি প্রভৃতির উল্লেখ দ্বারা উহাদের তারতম্য বুঝানো হইয়াছে; আর কোন কার্য দ্বারা মানুষ আত্মাকে পবিত্র রাখিয়া জীবন সার্থক করিতে পারে এবং কোন কার্য করিলে মানুষের আত্মা কলুষিত ও জীবন ব্যর্থ হয় তাহার দৃষ্টান্ত দেওয়া হইয়াছে। ‘সমুদ’ জাতির এই ঘটনার উল্লেখ করিয়া – ‘খোদাতায়ালা যাহাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন, যাহাকে ইচ্ছা গোমরাহ্ করেন’ – এই উক্তি উপরোক্ত সুরা দ্বারা খণ্ডন করা হইয়াছে।
সুরা হুমাজাত
শুরু করিলাম শুভ নামেতে আল্লার,
দয়া করুণার যিনি অসীম আধার।
নিন্দা ও ইঙ্গিতে নিন্দা করে যে – তাহার,
গণে গণে রাখে ধন, জমায় যে আর,
চিরজীবী হবে ধনে মনে যেই করে,
সর্বনাশ ( ইহাদের সকলের তরে),
নিশ্চয় নিক্ষিপ্ত হবে সে যে ‘হোতামায়’,
‘হোতামা’ কাহারে বলে, জান কি তাহায়?
(ইহা) আল্লার সেই লেলিহান শিখা,
হৃৎপিণ্ড স্পর্শ করে যে (জ্বালা দাহিকা)।
রুদ্ধদ্বার সে অনল আবদ্ধ আবার
দীর্ঘ স্তম্ভে (আশা নাই মুক্তির তাহার)।
————
সুরা হুমাজাত
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্না হইয়াছে। ইহাতে ৯টি আয়াত, ৩৩টি শব্দ ও ২৩৫টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল –ধর্মদ্রোহী আখনাস, অলিদ, ওবাই, ওমাইয়া, জমি ও আ-স এর সাক্ষাতে হজরতকে ও তাহার সহচরগণকে বিদ্রুপ করিত, এবং অসাক্ষাতে তাঁহাদের অপবাদ প্রচার করিত। এই জন্য এই সুরা অবতীর্ণ হইয়াছে।