‘আহ্লে কেতাব’ আর অংশীবাদিগণ
নিবৃত্ত হয়নি যারা বিশ্বাসে আপন।
ভিন্ন-মত হয় নাই তাহারা তাবৎ,
না এল তাদের কাছে প্রমাণ যাবৎ।
আল্লার রসুল যিনি, পবিত্র কোরান
উদ্গাতা যাহাতে দৃঢ় সত্য অধিষ্ঠান
(ভিন্ন-মত হইল তাহারা তাঁর পরে);
‘আহ্লে কেতাব’ দল এইরূপ করে,
যতদিন আসে নাই পরম প্রমাণ,
করে নাই দলাদলি, করেছে সম্মান।
তাদেরে কেবল মাত্র আজিকার মতো
এই সে আদেশ দেওয়া আছিল সতত –
কর্মেতে ‘হানিফ’ হয়ে কেবল আল্লার
করুক তাহারা পূজা, উপাসনা আর।
নামাজ পড়ুক, দিক্ জাকাত সে সাথে,
চির-দৃঢ় সত্য ধর্ম, ইহাই ধরাতে।
‘আহ্লে কেতাব’ আর ‘মুশরিক’ যারা
প্রত্যাখ্যান করিয়াছে সত্যধর্ম তারা
দোখজ-আগুনে হবে হবে চিরস্থায়ী,
সৃষ্টির অধম তারা, সংশয় নাই।
সৃষ্টির বরেণ্য তারা নিশ্চয়ই যারা
ইমান আনিয়া করে সৎকাজ তারা।
তাহাদের পুরস্কার দরগায় আল্লার
বেহেশ্ত-কানন আছে, তলদেশে যার।
নহর-লহর বহে; তারা সেই লোকে
অনন্ত কালের তরে রবে নিরাশোকে।
প্রসন্ন তাদের প্রতি সদা বিশ্বপতি,
তাহারাও প্রীত তাই আল্লাহের প্রতি।
জীবন-প্রভুরে হেন ভয় যার মনে
এই পুরস্কার আছে তাদেরই কারণে।
—————
সুরা বাইয়েনাহ্
এই সুরায় ৮টি আয়াত, ৯৫টি শব্দ ও ৪১৩টি অক্ষর আছে। কবির, হাক্কানী, শাহ অলিউল্লাহ, ও শাহ্ রফিউদ্দিন বলেন – এই সুরা মদিনা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। কাশ্শাফ, বায়জাবী, জালালাইন ও হোসেনী বলেন, এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে।
শানে-নজুল – মদিনার ইহুদিগণ ও মক্কার অংশীবাদীগণ তৌরাতের প্রতিশ্রুত শেষ পয়গম্বরের প্রতীক্ষায় ছিল। শেষ পয়গম্বর আবির্ভাব হওয়া সত্ত্বেও তাহারা পাপকার্য হইতে বিরত হয় নাই – তজ্জন্য এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা বালাদ্
শুরু করি লয়ে শুভ নাম আল্লার,
যিনি দয়াশীল আর কৃপার আধার।
শপথ করি এই নগরের
যেহেতু বিরাজ করিছ হেথায়
শপথ পিতার আর তাহাদের সন্তানের
অধিবাসী এই নগর মক্কায়।
মানুষে করেছি সৃষ্টি যে আমি
নিশ্চয় দুঃখ-ক্লেশের মাঝ,
সে কী ভাবে, তার পরে প্রভুত্ব
করিতে কেহই নাহি সে আজ?
‘উড়ায়ে দিয়াছি রাশি রাশি টাকা
আমি’ – সে বলে বিনাশিতে তোমারে,
সে কি (এই শুধু) মনে করে
কেহ দেখিতেছে না তাহারে?
আমি কি তাহার মঙ্গল লাগি
দিইনি তাহারে যুগল নয়ন?
জিহ্বা ওষ্ঠ দিইনি? দেখায়ে
দিইনি উভয় পথ সে কারণ?
কিন্তু প্রবেশ করিল না তো সে
দুর্গম পথে উপত্যকার,
উপত্যকার দুর্গম সেই
পথ – জান তুমি সন্ধান তার?
সে পথ – দাসেরে মুক্তিদান
ও অন্নদান সে ক্ষুধার্তেরে
আশ্রয় দান ধূলি-লুণ্ঠিত
কাঙালে, ‘এতিম’ আত্মীয়েরে।
এমনি করে সে হয় একজন
তাদের মতোই, ইমান যারা
আনে আর দেয় উপদেশ
সব বিপদে (মহৎ তারা)।
উপদেশ দেয় পরস্পরে সে
দয়াশীল হতে, তারাই হবে
দক্ষিণকর অধিকারী। আর
এ আয়াতে অবিশ্বাস করে গো যারা – হবে
বাম হস্তের অধিকারী তারা, তাদের তরে
আছে নিবদ্ধ হুতাশনের বরাদ্দ রে।
————-
সুরা বালাদ্
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হইয়াছে। ইহাতে ২০টি আয়াত, ৮২টি শব্দ ও ৩৪৭টি অক্ষর আছে।
শানে-নজুল – কালদা নামক বলিষ্ঠ কাফেরকে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) ইসলাম গ্রহণ করিতে বলায় সে অবজ্ঞাভরে বলিয়াছিল যে, দোজখের ১৯জন ফেরেশতাকে সে একা বাম হস্তে অবরোধ করিতে পারিবে; বেহেশ্তের বাগিচা, নহর ও মণিকাঞ্চনের মূল্য তাহার বিবাহাদি উৎসবে ব্যয়িত অর্থের তুল্য হইতে পারে না। তখন এই সুরা নাজেল হয়।
সুরা বুরুজ
শুরু করিলাম লয়ে নাম আল্লার,
করুণা কৃপার যিনি অসীম পাথার।
গ্রহ-উপগ্রহ ভরা শপথ আকাশের,
আর শপথ প্রতিশ্রুত রোজহাশরের
শপথ উপস্থিত, উপস্থাপিত সবার,
ধ্বংস হল সে অধিকারিগণ পরিখার।
কাষ্ঠপূর্ণ অগ্নিকুণ্ড-অধিকারিগণ
বসেছিল তদুপরি তাহারা যখন।
আল্লায়-বিশ্বাসিগণে ধরিয়া তথায়
ফেলিয়া দেখিতেছিল নিজেরাই, হায়!
সাজা দিতেছিল শুধু অপরাধে এই
বিশ্বাসিগণের প্রতি; বিশ্বাসীরা যেই
ইমান আনিয়াছিল আল্লাহ্র প্রতি,
অনন্ত-প্রতাপ যিনি মহীয়ান অতি।
স্বর্গ মর্ত্য রাজত্বের অধিপতি যিনি,
জ্ঞাত এ-সবের তত্ত্ব একমাত্র তিনি।
ইমানদার সে নর-নারীরে যাহারা
দেয় যন্ত্রণা, তৌবা নাহি করে তাহারা
ইহারই জন্য যাবে দোজখে নিশ্চয়,
অনল দাহন জ্বালা যেথা শুধু রয়।
অবশ্য যাহারা সৎ ‘নেক’ কাজ করে,
আনে সে ইমান; আছে তাহাদের তরে,
এমন বাগান, যার নিম্নদেশ দিয়া
পুণ্য-তোয়া নদী সব চলিছে বহিয়া।
শ্রেষ্ঠ সফলতা এই নিশ্চয় তোমার
প্রভু প্রতাপান্বিত বিপুল বিথার।
প্রথমে সৃজিয়া যিনি গড়েন আবার
তিনি মহা-প্রেমময় ক্ষমাবান, আর
জগৎ-সাম্রাজ্য-সিংহাসনের পতি,
ইচ্ছাময় প্রভু তিনি গরীয়ান অতি।
ফেরাউন সামুদের সেনা – সস্বার
তাদের বৃত্তান্ত শোনা আছে কি তোমার?
জান কি কেমনে হল তারা ছারখার?
যে জন অমান্য করে আদেশ আমার
সত্যেরে অসত্য বলা কাজ যে তাহার।
অথচ আল্লাহ্তালা ঘিরিয়া তাহায়
পরিব্যাপ্ত রয়েছেন চারিদিকে, হায়!
মহিমান্বিত মহা কোর-আন এই
লিখিত সুরক্ষিত পাক ‘লওহে’ ই।
———–
সুরা বুরুজ
এই সুরা মক্কা শরিফে অবতীর্ণ হয়। ইহাতে ২২টি আয়াত, ১০৯টি শব্দ ও ৪৭৫ টি অক্ষর আছে।