ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
সাংখ্যযোগো নাম দ্বিতীযোঽধ্যাযঃ ॥২॥
০৩.কর্মযোগ
অর্জুন উবাচ
জ্যায়সী চেত্ কমৃনঃ তে মতা বুদ্ধিঃ জনার্দন ।
তত্ কিম্ কর্মানি ঘোওে মাম্ নিয়োজয়সি কেশব ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে জনার্দন হে কেশব যদি তোমার মতে ভক্তি বিষয়ীনি বুদ্ধি কর্ম থেকে শ্রেয়তর হয় তাহা হলে কেন আমাকে ভয়ানক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করছ।
ব্যামিশ্রেন ইব বাক্যেন বুদ্ধিম্ মোহয়সী ইব মে ।
তত্ একম্ বদ নিশ্চিত্য যে শ্রেয়ঃ অহম্ আপ্নুয়াম ।।২
অর্থ-তুমি যেন সন্দেহ জনক রুপে প্রতিয়মান বাক্যের দ্বারা আমার বুদ্ধি বিভ্রান্ত করছ। তাই দয়া করে আমাকে নিশ্চিত ভাবে বল কোনটি আমার পক্ষে সব চেয়ে শ্রেয়স্কর।
ভগবান উবাচ
লোকে অস্মিন দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা পোক্তা ময়া অনঘ ।
জ্ঞান যোগেন সাংখ্যানাম কর্মযোগেন যোগিনাম্ ।।৩
অর্থ-ভগবান বললেন-হে অর্জুন আমি ইতিপুর্বে ব্যাখ্যা করেছি যে দুই প্রকার মানুষ অধ্যাত্মচেতনা উপরব্ধি করতে চেষ্টা করে।আর কিছু লোক দার্শনিক জ্ঞানের আলাচনার মাধ্যমে নিজকে জানতে চান এবং অন্যেরা আবার তা ভক্তির মাধ্যমে জানতে চান।
ন কর্মনাম্ অনারম্ভাত্ নৈস্কর্মম্ পুরুষঃ অশ্নুতে ।
ন চ সন্ন্যসনাত্ এব সিদ্ধিম্ সমধিগচ্ছতি ।।৪
অর্থ-কেবল কর্ম অনুষ্ঠান না করার মাধ্যমে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় না আবার কর্ম ত্যাগের মাধ্যমেও কেবল সিদ্ধি লাভ করা যায় না।
ন হি কশ্চিত্ ক্ষনম্ অপি জাতু তিষ্টতি অকর্মকৃত্ ।
কার্যতে হি অবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকির্তিজৈঃ গুনৈ ।।৫
অর্থ-সকলেই অসহায় ভাবে মায়াজাত গুন সমুহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কর্ম করতে বাধ্যহয় তাই কর্ম না করে ক্ষনকাল থাকতে পারে না।
কর্মেন্দ্রিয়ানি সংযম্য যঃ আস্তেঃ মনসা স্মরন ।
ইন্দ্রিয়ার্থান বিমুঢ় আত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে ।।৬
অর্থ-মুঢ় ব্যক্তি পঞ্চ কর্ম ইন্দ্রিয় সংযত করেও মনে মনে শব্দ রসাদি ইন্দ্রিয়গুলি স্বরন করে সে অবশ্যই নিজকে বিভ্রান্ত করে এবং তাকে মিথ্যাচারি ভন্ড বলা হয়।
যঃ তু ইন্দ্রিয়ানি মনসা নিয়ম্য আরভতে অর্জুন ।
কর্মেন্দ্রিয়ৈঃ কর্ম যোগম্ অসক্তঃ সঃ বিশিষ্যতে ।।৭
অর্থ-কিন্তু যিনি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে অনাসক্ত ভাবে কর্ম অনুষ্ঠান করেন তিনি পুর্বক্ত মিথ্যাচারি অপেক্ষা অনেক গুনে শ্রেষ্ঠ।
নিয়তম্ কুরু কর্ম ত্বম কর্ম জ্যয়াঃ হি অকর্মনঃ ।
শরির যাত্রা অপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেত্ অকর্মনঃ ।।৮
অর্থ-তুমি শাস্ত্রক্তো কর্ম অনুষ্ঠান কর কেননা কর্মত্যাগ থেকে কর্ম অনুষ্ঠা শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রা নির্বাহ করতে পারে না।
যজ্ঞার্থাত্ কর্ম নত্ অন্যত্র লোকঃ অয়ম্ কর্ম বন্ধনঃ ।
তত্ অর্থম কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসংঙ্গঃ সমাচর ।।৯
অর্থ-বিষ্ণুর প্রতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত্ তা নাহলে কর্ম জীবকে জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করে। তাই হে কৌন্তেয় ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তোমার কর্ত্যব্য অনুষ্ঠান কর এবং তার ফলে তুমি সদা সর্বদা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
সহ যজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্টা পুরা উবাচ প্রজাপতিঃ ।
অনেন প্রসবিধ্বম এষঃ বঃ অস্তু ইষ্ট কামাধূক ।।১০
অর্থ-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান যজ্ঞ সহ প্রজা সৃষ্টি করে বলেছিলেন এই যজ্ঞের দ্বারা তোমরা সর্বদা সমৃদ্ধ হও এই যজ্ঞ তোমাদের সমস্ত অভীষ্ট পুরন করবে।
দেবান ভাবয়তা অনেন তে দেবাঃ ভাবয়ন্তু বঃ ।
পরস্পরম্ ভবয়ন্তঃ শ্রেঃয় পরম্ অবাপ্সথ ।।১১
অর্থ-তোমাদের যজ্ঞ অনুষ্ঠানে প্রীত হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রীতি সাধন করবেন। এইভাবে পরস্পরের প্রীতি সম্পাদন করার মাধ্যমে তোমরা পরম মঙ্গল লাভ করবে।
ইষ্টান ভোগান হি বঃ দেবাঃ দাস্যন্তে যজ্ঞ ভাবিতাঃ ।
তৈঃ দত্তান অপ্রদায় এভ্যঃ যঃ ভূঙক্তে স্তেনঃ এব সঃ ।।১২
অর্থ-যজ্ঞের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রতি বাঞ্চিত ভোগ্যবস্তু প্রদান করবেন। সুতরাং দেবতাদের দেওয়া বস্তু তাদের নিবেদন না করে যিনি ভোগ করেন তিনি নিশ্চয় চোর।
যজ্ঞশিষ্ট অশিনঃ সন্তঃ মুচ্যতে সর্ব কিল্বষৈঃ ।
ভূঞ্জতে তে তু অঘম্পাপাঃ যে পচন্তি আত্মকারণাত্ ।।১৩
অর্থ-ভগবান ভক্তরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন কারন তারা ভগবানকে নিবেদন করে অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল সার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য অন্নপাক করে তারা কেবল পাপ ভোজন করে।
অন্নাত্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাত্ অন্ন সম্ভবঃ ।
যজ্ঞাত্ ভবতী পর্জন্যঃ যজ্ঞঃ কর্ম সমুদ্ভব ।।১৪
অর্থ-অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারন করেন, বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উত্পাদন হয়, যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি হয়, শাস্ত্রক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উত্পন্ন হয়।
কর্ম ব্রহ্ম উদ্ভবম্ বিদ্ধি ব্রহ্ম অক্ষর সমুদ্ভবম্ ।
তস্মাত্ সর্বগতম্ ব্রহ্ম নিত্যম্ যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্ ।।১৫
অর্থ-যজ্ঞাদি কর্ম বেদ থেকে উদ্ভব হয়েছে এবং বেদ অক্ষর ভগবান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব সর্বব্যপক ব্রহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্টিত আছেন।
এবম্ প্রবর্তিতম্ চক্রম্ ন অনুবর্তয়তি ইহ যঃ ।
অঘায়ূঃ ইন্দ্রিয়ারামঃ মোঘম্ পার্থ সঃ জীবতী ।।১৬
অর্থ-হে অর্জুন যে ব্যক্তি এই প্রকারে ভগবান কতৃক প্রবর্তিত যজ্ঞ অনুষ্ঠানের পন্থা অনুস্বরন করে না, সেই ইন্দ্রিয় সুখপরায়ন পাপী ব্যক্তি বৃথা জীবন ধারন করে।