ব্যবসায়াত্মিকা বূদ্ধিঃ এক ইহ কুরু নন্দন ।
বহু শাখা হি অনন্তাঃ চ বুদ্ধয়ঃ অব্যবসায়িনাম ॥৪১
অর্থ-যারা এই পথ অবলম্বন করছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরু নন্দন অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী।
যামিমাম পুস্পিতাম্ বাচম্ প্রবদন্তি অবিপশ্চিতঃ ।
বেদ বাদরতাঃ পার্থ ন অনাত্ অস্তি ইতি বাদিনঃ ॥৪২
কামাত্মানঃ সর্গপরাঃ জন্মকর্ম ফল প্রদাম ।
ক্রিয়াবিশেষ বহুলাম্ ভোগ ঐশ্বর্য্য গতিম প্রতি ॥৪৩
অর্থ-বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে সর্গ সুখ ভোগ উচ্চকুলে জন্ম ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবংঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই।
ভোগ ঐশ্বর্য প্রশক্তানাম তয়া অপহৃত চেতসাম্।
ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধি সমাধৌ ন বিধিয়তে ॥৪৪
অর্থ-যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাত্ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।
ত্রৈগুন্য বিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুন্যঃ ভব অর্জুন ।
নির্দ্বন্দ্ব নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্যোগক্ষেমঃ আত্মবান ॥৪৫
অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুন সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন তুমি সেই গুন গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুনস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।
যাবান অর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে ।
তাবান সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মনস্য বিজনতঃ ॥৪৬
অর্থ-ক্ষুদ্র জলাশয় যে সমসস্ত কার্য্য সাধিত হয় সে গুলি যেমন বৃহত্ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই ভগবানের উপসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন তার কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য স্বাধিত হয়েছে।
কর্মনি এব অধিকতরঃ তে মা ফলেষু কদাচন ।
মা কর্মফল হেতুঃ ভূঃ মা তে সঙ্ঘ অস্ত অকর্মনি ॥৪৭
অর্থ-স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না এবংকখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।
যোগস্থঃ কুরু কর্মানি সঙ্গম্ ত্যাক্তা ধনঞ্জয় ।
সিদ্ধ্যসিদ্ধৌঃ সমঃ ভূত্বা সমত্বম্ যোগঃ উচ্যতে ॥৪৮
অর্থ-হে অর্জুন ফল ভোগের কামনা পরি ত্যাগ করে ভক্তি যোগস্থ্য হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্মাচরন কর। কর্মের সিদ্ধি অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি তাকেই যোগ বলা হয়।
দুরেন হি অবরম্ কর্ম বুদ্ধি-যোগাত্ ধনঞ্জয় ।
বুদ্ধৌ শরনম্ কর্ম অন্বিচ্ছ কৃপনাঃ ফল হেতবঃ ॥৪৯
অর্থ-হে ধনঞ্জয় বুদ্ধি যোগ দ্বারা ভক্তির অনুশিলন করে সকাম কর্ম থেকে দুরে থাক। যারা কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপন।
বুদ্ধিযুক্তঃ জহাতি ইহ উভে সুকৃত-দুস্কৃতে ।
তস্মাত্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্ ॥৫০
অর্থ-যিনি ভগবত্ ভক্তির অনুশিলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ পুন্য উভয় থেকে মুক্ত হন। সুতরাং হে অর্জুন তুমি নিস্কাম কর্ম যোগের অনুশিলন কর সেটাই হল সর্বাঙ্গিন কর্ম কৌশল।
কর্মজম্ বুদ্ধিযুক্তাঃ হি ফলম্ ত্যক্তা মনিষিনঃ ।
জন্মবন্ধ বিনিমুক্তাঃ পদম্ গচ্ছন্তি অনাময়ম্॥৫১
অর্থ-মনিষিগন ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শ্বরনাগত হন। কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন।এইভাবে তারা সমস্ত দুঃখ দুর্দ্দশা থেকে মুক্ত হন।
যদ তে মোহ কলিলম্ বুদ্ধিঃ ব্যতিতরিষ্যতি ।
তদা গন্তাসি নির্বেদম্ শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ ॥৫২
অর্থ-এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের অর্পিত নিস্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে তোমার বুদ্ধি মোহরুপ গভীর অরন্যকে সম্পুর্নরুপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ সেই সবের প্রতি সম্পুর্ণরুপে নিরপেক্ষ্য হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তি সাধনে প্রবৃত্ত হবে।
শ্রুতি বিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা ।
সমাধৌ অচলা বুদ্ধি তদা যোগম্ অব্যপ্সসি ॥৫৩
অর্থ-তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তি যোগে অধিষ্ঠিত হবে।
অর্জুন উবাচ
স্থীত প্রজ্ঞস্য কাভাষা সমাধিস্থস্য কেশব ।
স্থীতধীঃ কিম্ প্রভাষেত কিম্ আসিত ব্রজেত্ কিম্ ॥৫৪
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কেশব স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাত্ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষন কী? তিনি কিভাবে কথা বলেন কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি আচরন করেন।
ভগবান উবাচঃ
প্রজহাতি যদা কামান সর্বান পার্থ মনোগতান ।
আত্মনি এব আত্মনা তুষ্টঃ স্থীতপ্রজ্ঞঃ তদা উচ্যতে ॥৫৫
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ মানুষ যখন মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন আত্মাতেই পুর্ন পরিতৃপ্তি লাভ করে তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞা বলা হয়।
দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ ।
বীত রাগ ভয় ক্রোধঃ স্থিতধীঃ মুনিঃ উচ্যতে ॥৫৬
অর্থ-ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যার মন উদ্বিগ্ন হয় না,সুখ উপস্থিত হলেও যার স্পৃহা হয়না এবং যিনি অনুরাগ ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত তিনিই স্থিতধী অর্থাত্ স্থিতপ্রজ্ঞ।