কার্পন্য দোশ উপহত স্বভাবঃ
পৃচ্ছামি ত্বাম ধর্ম সমূঢ় চেতাঃ ।
যত্ শ্রেয় স্যাত্ নিশ্চিতম্ ব্রুহি তত্ মে
শিষ্যঃ তে অহম্ শাধিমাম তাম প্রপন্নম ॥৭
অর্থ-কার্পন্য জনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়েছি আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর। এখন আমি তোমার শিষ্য, সর্বত ভাবে তোমার শ্বরনাগত, দয়াকরে তুমি আমাকে শিক্ষা দাও।
ন হি প্রপশ্যামি মম অপনুদ্যাত্
যত্ শোকম উচ্ছোষনম্ ইন্দ্রিয়ানাম্ ।
অবাপ্য ভূমৌ অসপত্বম ঋদ্ধম্
রাজ্যম্ সুরানাম্ অপি চ অধিপত্যম্ ॥৮
অর্থ-আমার ইন্দ্রিয় গুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা যে কিভাবে আমি দুর করব তা আমি জানি না।স্বর্গের দেবতাদের মত আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।
সঞ্জয় উবাচ
এবম্ উক্তা হৃষীকেশম্ গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ ।
ন য্যোত্স্য ইতি গোবিন্দম্ উক্তা তুঞ্চিম বভূবহ ॥৯
অর্থ-সঞ্জয় বললেন এই ভাবে তার মনোভাব ব্যাক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন,হে গবিন্দ,আমি যুদ্ধ করব না ,এই বলে তিনি মৌন হলেন।
তম্ উবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্ ইব ভারত ॥
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে বিষীদন্তম্ ইদম্ বচঃ ॥১০॥
অর্থ-হে ভারত বংশীয় ধৃতরাষ্ট্র সে সময় স্মিত হেসে শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষেও সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদ গ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন।
অশোচ্যান অন্বশোচঃ ত্বম প্রজ্ঞাবাদান চ ভাষসে ।
গত অসুন অগত অসুন চ ন অনুশোচন্তি পন্ডিতাঃ ॥১১
অর্থ-ভগবান বললেন তুমি প্রজ্ঞের মত কথা বলছ অথচ যে বিষয়ে শোককরা উচিত্ নয় সে বিষয় শোক করছ। যারা যথার্থই পন্ডিত তারা কখনো জিবীত বা মৃত কারোর জন্য শোক করে না।
ন তু এব অহম্ জাতু ন আসম ন ত্বম্ ইমে জনঅধিপা ।
ন চ এব ভবিষ্যাম্ সর্বে বয়ম্ অতঃ পরম্ ॥১২
অর্থ-এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি,তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।
দেহীনঃ অস্মিন যথা দেহে কৌমারম্ যৌবনম্ জরা ।
তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতি ॥১৩
অর্থ-দেহী যে ভাবে কৌমার যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রুপ পরিবর্তন করে চলে মৃত্যু কালে ঐ দেহী এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহন-রীত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হয় না ।
মাত্রা স্পর্শাঃ তু কৌন্তেয় শীত উষ্ণ সুখ দুঃখদাঃ ।
আগম অপায়িনঃ অনিত্যাঃ তান তিতিক্ষস্য ভারত ॥১৪
অর্থ-হে কৌন্তয় ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্ত সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় সেগুলি যেন শীত এবং গৃস্ম ঋতুর গমনা গমনের মত। হে ভরত কুল প্রদীপ সেই ইন্দ্রিযাত অনুভূতির দ্বরা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলির সহ্য করার চেষ্টা কর।
যম হি ন ব্যাথয়ন্তি এতে পুরুষম্ পুরুষ ঋৃষভ ।
সম দুঃখ সুখম্ ধীরম্ সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে ॥১৫
অর্থ-হে পুরুষ শ্রেষ্ট যে জ্ঞানি ব্যক্তি সুখ ও দুঃখ শীত উষ্ণ আদিদন্ধে বিচলিত হন না তিনি অমৃত তত্তের প্রকৃত অধিকারি হন।
ন অসতঃ বিদ্যতে ভাবঃ ন অভাবঃ বিদ্যতে সতঃ ।
উভয়ো অপি দৃষ্টাঃ অন্তঃ তু অনয়োঃ তত্ত দর্শিভিঃ ॥১৬
অর্থ-যারা তত্তদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্ত জড়বস্তুর স্থয়িত্ব নেই এবং নিত্তবস্তুর আত্মার কখন বিনাশ হয় না। তত্ত্ব দ্রষ্টাগন উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরুপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে।
অবিনাশি তু তত্ বিদ্ধি যেন সর্বম্ ইদম্ ততম্ ।
বিনাশম অব্যয়স্য তস্য ন কশ্চিত্ কর্তুম্ অর্হতি ॥১৭
অর্থ-সমস্ত শরিরে পরিব্যপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা যেনেরেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
অন্তবন্তঃ ইমে দেহাঃ নিত্যস্য উক্তাঃ শরীরিণ ।
অনাশিনঃ অপ্রমেয়স্য তস্মাত্ যুধ্যস্ব ভারত ॥১৮
অর্থ-এই সমস্ত শরির অনিত্ত কিন্তু শরীরী আত্মা অবিনাশী। সেই আত্মার অতি সুক্ষ্মত্ব হেতু অপরিমেয়। অতএব হে ভারত তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
যঃ এনম্ বেত্তি হন্তারম্ যঃ চ এনম মন্যতে হতম্ ।
উভৌ তৌ ন বিজানীত ন অয়ম্ হন্তি ন হন্যতে ॥১৯
অর্থ-যিনি জীব সত্তাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন তারা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরুপ জানেনা। কারন আত্মা কাউকে হত্মা করে না বা কারোর দ্বারা নিহত হন না।
ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিত্
ন অয়ম্ ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
অজঃ নিত্য শাশ্বতঃ অয়ম্ পুরানঃ
ন হন্যতে হন্যমানে শরিরে ॥২০
অর্থ-আত্মার কখনো জন্ম হয়না বা মৃত্যু হয় না। অথবা পুনঃ পুনঃ তার উত্পত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্ত এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্ম কখনো বিনষ্ট হয় না।
বেদ অবিনাশিনম্ নিত্যম যঃ এনম্ অজম্ অব্যয়ম্।
কথম্ সঃ পুরুষঃ পার্থকম্ ঘাতয়তি হন্তিকম্ ॥২১
অর্থ-হেপার্থ যিনি এই আত্মাকে অবিনাশি, নিত্য, শাশ্বত, জন্ম-রহিত ও অক্ষয় বলে জানেন তিনি ভাবে কাউকে বধ বা হত্যা করতে পারে।
বাসাংসি জীর্নানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরঃ অপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণানি
অন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২২
অর্থ-মানুষ যেমন জীর্ন বস্ত্র পরিত্যাগ করে নুতন বস্ত্র পরিধান করে দেহীও তেমনই জীর্ন শরির ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারন করে।