ভব অপ্যয়ৌ হি ভূতানাম্ শ্রুতৌ বিস্তরশঃ ময়া ।
ত্বত্তঃ কমলপত্রাক্ষ মাহাত্মম্ অপি চ অব্যয়ম্ ।।২
অর্থ-হে পদ্মপলাশ লোচন সর্বভূতের উত্পত্তি ও প্রলয় তোমার থেকেই হয়, তোমার কাছ থেকেই আমি তোমার অব্যয় মাহাত্ম অবগত হলাম।
এবম্ এতত্ যথাত্থ ত্বম্ আত্মানাম্ পরমেশ্বর ।
দ্রষ্টুম্ ইচ্ছামি তে রুপম্ ঐশ্বরম্ পুরুষোত্তম্ ।।৩
অর্থ-হে পুরুষত্তম তুমি যে আত্ত তত্ত্ব বলেছ তা যথার্থ। কিন্তু তা সত্তেও হে পরমেশ্বর তুমি যে ভাবে এই বিশ্বে প্রবেশ করেছ, আমি তেমার সেই ঐশ্বরীরুপ দেখতে ইচ্ছা করি।
মন্যতে যদি তত্ শক্যম্ ময়া দ্রষ্টুম্ ইতি প্রভো ।
যোগেশ্বরম্ ততঃ মে ত্বম্ দর্শয় আত্মানাম্ অব্যয় ।।৪
অর্থ-হে প্রভু, তুমি যদি মনে কর যে আমি তোমার এই বিশ্বরুপ দর্শন করার যোগ্য, তা হলে হে যোগেশ্বর আমাকে তেমার সেই জগতাত্ম রুপ দেখাও।
ভগবান উবাচ
পশ্য মে পার্থ রুপাণী শতশঃ অথ সহস্রশঃ ।
নানাবিধানি দিব্যানি নানা বর্ন আকৃতীনি চ ।।৫
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ নানা বর্ন ও নানা আকৃতি বিশিষ্ট শতশত এবং সহস্র সহস্র আমার বিভিন্ন দিব্য মূর্তি দর্শন কর।
পশ্য আদিত্যান্ বসুন রদ্রান অশ্নিনৌ মরুতঃ তথা ।
বহুনী অদৃষ্ট পুর্বানি পশ্য আশ্চর্যানি ভারত ।।৬
অর্থ-হে ভারত, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, অশ্বিনিকুমারদয়, উনপঞ্চাশ মরুত এবং অনেক অদৃষ্টপুর্ব আশ্চার্যরুপ দেখ।
ইহ একস্থম্ জগত্ কৃত্স্নম্ পশ্য অদ্য স চর অচরম্ ।
মম্ দেহে গুড়াকেশ যত্ চ অন্যত্ দ্রষ্টুম্ ইচ্ছসি ।।৭
অর্থ-হে-অর্জুন, আমার এই বিরাট শরিরে অবয়ব রুপে একত্রে অবস্থিত সমগ্র স্থাবর জঙ্গমাত্ম বিশ্ব এবং অন্য যা কিছু দেখতে ইচ্ছা কর আজ দর্শন কর।
ন তু মাম্ শক্যসে দ্রষ্টুম অনেন এব স্বচক্ষুষা ।
দিব্যম্ দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম ।।৮
অর্থ-তুমি তোমার চক্ষুদ্বারা আমার বিশ্বরুপ দর্শন করতে পারবে না। তাই আমি তোমাকে দিব্য চক্ষুদান করছি যার দ্বারা তুমি তোমার অচিন্ত যোগৈশ্বর্য্য দর্শন করতে পারবে।
সঞ্জয় উবাচ
এবম উক্তা ততঃ রাজন মহাযোগেশ্বরঃ হরিঃ ।
দর্শয়মাস পার্থায় পরমম্ রুপম ঐশ্বরম্ ।।৯
অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে রাজন এই ভাবে বলে, মহান যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার অলৌকিক বিশ্বরুপ দেখালেন।
অনেক বক্ত্র নয়নম্ অনেক অদ্ভুত দর্শনম্ ।
অনেক দিব্য আভরনম্ দিব্য অনেক উদ্যত আয়ুধম্ ।।১০
দিব্য মাল্য অম্বরধরম্ দিব্য গন্ধ অনুলেপনম্ ।
সর্ব আশ্চর্য্যময়ম্ দেবম্ অনন্তম্ বিশ্বতোমুখম্ ।।১১
অর্থ-অর্জুন দেখলেন সেই বিশ্বরুপ অনেক মুখ অনেক নেত্রযুক্ত, অনেক অদ্ভুত আকৃতি ও অসংখ্য দিব্য অলংঙ্কার বিশিষ্ট এবং অনেক উদ্যত দিব্য অস্ত্রে সজ্জিত। সেই বিশ্বরুপ দিব্য মালা ও দিব্য বস্ত্রে ভূষিত, দিব্য গন্ধদ্বারা অনুলিপ্ত, অত্যন্ত আশ্চর্য্যজনক জোর্তিময় অনন্ত ও সর্বতোমুখ বিশিষ্ট।
দিবি সুর্য্য সহস্রস্য ভবেত্ যুগপত্ উত্থিতা ।
যদি ভাঃ সদৃশী সা সাত্ ভাসঃ তস্য মহাত্মনঃ ।।১২
অর্থ-যদি আকাশে সহস্র সুর্য্যেও প্রভা উদিত হয় তা হলে সেই দীপ্তি বিশ্বরুপের প্রভাব কিঞ্চিত্ তুল্য হতে পারে।
তত্র একস্থম্ জগত্ কৃত্স্নম্ প্রবিভক্তম্ অনেকধা ।
অপশ্যত্ দেবদেবস্য শরীরে পান্ডব তদা ।।১৩
অর্থ-তখন অর্জুন পরমেশ্বর ভগবানের বিশ্বরুপে নানাভাবে বিভক্ত সমগ্র জগত্ একত্রে অবস্থিত দেখলেন।
ততঃ সঃ বিস্ময়াবিষ্টাঃ হৃষ্টরোমা ধনঞ্জয় ।
প্রণম্য শিরসা দেবম্ কৃতাঞ্জলিঃ অভাষত ।।১৪
অর্থ-অর্জুন সেই বিশ্বরুপ দর্শন করে আশ্চর্যান্বিত ও রোমাঞ্চিত হলেন এবং অবনত মস-কে ভগবানকে প্রনাম করে কর জোরে বললেন।
অর্জুন উবাচ
পশ্যামিদেবান তব দেহে
সর্বান তথা ভূত বিশেষ-সঙ্ঘান ।
ব্রহ্মানম্ ঈশম কমলাসনস্থম
ঋষীন চ সর্বান উরগান ন চ দিব্যম্ ।।১৫
অর্থ-অর্জুন বললেন হে দেব, তোমার এই বিশ্বরুপে সমস্ত দেবতা, চরাচর জগত্ ঋষীদের, সর্পসমুহ এবং সৃষ্টিকর্তা কমলাসনা ব্রহ্মকে দেখছি।
অনেক বাহু উদর বক্ত্র নেত্রম্
পশ্যামি ত্বাম সর্বতঃ অনন্তরূপম্ ।
ন অন্তম্ ন মধ্যম্ ন পুনঃ তব আদিম্
পশ্যামি বিশ্বেশর বিশ্বরূপ ।।১৬
অর্থ-হে জগত্ ঈশ্বও, সর্বত্র বহু বাহু, বহু উদও, বহু মুখ ও বহু নেত্রবিশিষ্ট তোমার বিশ্বরুপ আমি দেখছি। হে ভগবান তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত দেখছি না।
কিরীটিনম্ গদিনম্ চক্রিনম্ চ
তেজোরাশিম্ সর্বতঃ দীপ্তিমন্তম্ ।
পশ্যামি ত্বাম্ দুর্নিরীক্ষ্যম্ সমন্তাত্
দীপ্ত-অনল অর্ক দ্যুতিম্ অপ্রমেয় ।।১৭
অর্থ-কিরীট গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র দিপ্তীমান, তেজঃপুঞ্জ স্বরুপ দুনিরীক্ষ্য প্রদীপ্ত অগ্নি ও সুর্য্যের মত প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরুপ তোমাকে আমি সর্বত্র দেখছি।
ত্বম্ অক্ষরম্ পরমম্ বেদিত্যবম্
ত্বম অস্য বিশ্বস্য পরম্ নিধানম ।
ত্বম্ অব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্ত
সনাতনঃ ত্বম পুরুষঃ মতঃ মে ।।১৮
অর্থ-তুমি পরম ব্রহ্ম এবং এক মাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয় ও সনাতন ধর্মের রক্ষক, তুমিই সনাতন এই আমার অভিমত।
অনাদি মধ্যান্তম্ অনন্ত বীর্যম
অনন্ত বাহু শশিসুর্য নেত্রম্ ।
পশ্ব্যামি ত্বাম্ দীপ্ত হুতাশবক্ত্রম্
স্বতেজসা বিশ্ব্যম্ ইদম্ তপন্তম্ ।।১৯