সঃ ঘোষঃ ধার্তরাষ্ট্রাণাম্ হৃদয়ানি ব্যদারয়াত্ ।
নভঃ চ পৃথিবীম্ চ এব তুমুলঃ অভ্যনুনাদয়ন ।১৯।
অর্থ-শঙ্খ নিনাদের সেই শব্দে আকাশ বিদীর্ন হল। পৃথিবী কম্পিত হল এবং তার ফলে ধৃতরাষ্টের হৃদয় প্রবল ভয়ে বিধ্বস্ত হল।
অথ ব্যবস্তিতান্ দৃষ্টা ধার্তরাষ্ট্রান কপিধ্বজঃ ।
প্রবৃত্তে শস্ত্র সম্পাতে ধনুঃ উদ্যম্য পান্ডবঃ ।
হৃষীকেশম্ তদা বাক্যম্ ইদম আহ মহীপতে ।২০।
অর্থ-সেই সময় পান্ডু পুত্র অরজুন হনুমান চিহ্নিত পতকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে তার ধনুক তুলেনিয়ে শ্বরনিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সমর সজ্জায় বিন্স্ত দেখে হৃষীকেশকে অর্জুন তখন এই কথাগুলি বললেন
অর্জুন উবাচ
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে রথম্ স্থাপয় মে অচ্যুত ।
যাবত্ এতান নিরীক্ষে অহম্ যোদ্ধুকামান অবস্থিতান ।২১।
কৈঃ ময়া সহ যোদ্ধব্যম্ অস্মিন রন সমুদ্যমে ।২২।
অর্থ-অর্জুন বললেন হে অচ্যুত্ অভ্রান্ত বন্ধু, তুমি উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষি হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং আমাকে অস্ত্রধারন করে কাদের সঙ্গে এই মহা সংগ্রাম করতে হবে।
যোত্স্যমানান অবেক্ষে অহম্ যে এতে অত্র সমাগতাঃ ।
ধার্তরাষ্টস্য দুর্বুদ্ধেঃ যুদ্ধে প্রিয় চিকীর্ষবঃ ।২৩।
অর্থ-অমি দেখতে চাই ধৃতরাষ্টের দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন পুত্রদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে।
সঞ্জয় উবাচ
এবম্ উক্তঃ হৃষীকেশঃ গুড়াকেশেন ভারত ।
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে স্থাপয়িত্বা রথউত্তমম্ ।২৪।
অর্থ-সঞ্জয় বললেন হে ভারত বংশধর অর্জুন কতৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেই উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন।
ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখতঃ সর্বেষাম্ চ মহীক্ষিতাম্ ।
উবাচ পার্থ পশ্য এতান্ সমবেতান কুরূন্ ইতি ।২৫।
অর্থ-ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্থ নেতাদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন হে পর্থ এখন সমস্ত কৌরবদের দেখ।
তত্র অপশ্যত্ স্থিতান পার্থ পিতৃন্ অথ পিতামহান্ ।
আচার্যান্ মাতুলান ভ্রাতৃন পুত্রান্ পৌত্রান্ সখীন্ তথা ।
শ্বশুরান্ সুহৃদঃ চ এব সেনয়োঃ উভয়োঃ অপি ।২৬।
অর্থ-তখন অর্জুন উভয়ে দলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য মাতুল ভ্রাতা শ্বশুর মিত্র শুভকাঙ্খিদের উপস্থিত দেখতে পেলেন।
তান সমীক্ষ্য সঃ কৌন্তেয়ঃ সর্বান বন্ধুন অবস্থিতান।
কৃপয়া পরয়া আবিষ্টঃ বিষীদন্ ইদম্ অব্রবীত্ ।২৭।
অর্থ-যখন অর্জুন সকল রকমের বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন তখন তিনি অত্যন্ত কৃপায়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে বললেন।
অর্জুন উবাচ
দৃষ্টা ইমম্ স্বজনম্ কৃষ্ণ যুযুঃসুম সমুপস্থিতম্ ।
সীদন্তী মম্ গাত্রাণী মুখম্ চ পরিশুষ্যতি ।২৮। ।
অর্থ-অর্জুন বলিলেন হে প্রিয়বর কৃষ্ণ আমার সমস্ত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের এমন ভাবে যুদ্ধাভিলাষি হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ হয়ে আসছে এবং মুখ শুস্কহয়ে উঠছে।
বেপথুঃ চ শরীরে মে রোমহর্ষ চ জায়তে ।
গান্ডীবম্ স্রংসতে হস্তাত্ ত্বক চ এব পরিদহ্যতে ।২৯।
অর্থ-আমার সর্ব শরির কম্পিত ও কেশাগ্র রোমাচিত হচ্ছে। হাত থেকে গান্ডিব খসে পরছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যচ্ছে।
ন চ শক্লোমি অবস্থাতুম্ ভ্রমতী ইব চ মে মনঃ ।
নিমিত্তানি চ পশ্যামি বিপরীতানি কেশবঃ ।৩০।
অর্থ-হে কেশব আমি এখন স্থির থাকতে পারছি না। আমি বিভ্রান্তী বোধ করছি,আমার চিত্ত উত্ভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশীদৈত্যহন্তা শ্রীকৃষ্ণ আমি কেবলই অমঙ্গ সুচক লক্ষন দর্শন করছি।
ন চ শ্রেয় অনুপশ্যামি হত্বা স্বজনম্ আহবে ।
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ম্ কৃষ্ণ ন চ রাজ্যম্ সুখানি চ ।৩১।
অর্থ-হে কৃষ্ণ আত্মীয় স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইনা রাজ্যসুখ ভোগের কামনা করিনা।
কিম্ ন রাজ্যম্ গোবিন্দ কিম্ ভোগৈঃ জীবিতেন বা ।
যেষাম্ অর্থে কাঙ্খিতম্ নঃ রাজ্যম্ ভোগাঃ সুখানি চ ।৩২।।
তে ইমে অবস্থিতাঃ যুদ্ধে প্রানান ত্যাক্তা ধনানি চ ।
আচার্য্যাঃ পিতরঃ পুত্রাঃ তথা এব চ পিতামহাঃ ।৩৩।।
মাতুলা শ্বশুরাঃ পৌত্রাঃ শ্যালাঃ সম্বন্ধিনঃ তথা ।
এতান্ ন হন্তুম্ ইচ্ছামি ঘ্নতঃ অপি মধুসুদন ।৩৪।।
অপি ত্রৈলোক্য রাজ্যস্য হেতোঃ কিম্ নু মহীকৃতে ।
অর্থ-হে গবিন্দ আমাদের রাজ্যে কি প্রায়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারনেই বা কী প্রোয়োজন, যখন দেখছি যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগ সুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে উপস্থিত? হেমধুসুদন যখন আচার্য্য পিত্রিব্য পুত্র, মাতুল শ্বশুর পৌত্র শ্যালক আত্মীয়স্বজন ,প্রান ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে, তখন তারা আমাকে বধ করলেও আমি তাদের হত্যা করতে চাইব কেন? হে সর্বজীবসত্তার প্রতিপলক জনার্দন, পৃথিবীর তো কথাই নাই এমন কি ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্টের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?
পাপম্ এব আশ্রয়েত্ অস্মান্ হত্বা এতান আততায়িনঃ ।
তস্মাত্ ন অর্হা বয়ম্ হন্তুম্ ধার্তরাষ্ট্রান সবান্ধবান ।
স্বজনম্ হি কথম্ হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধবম্ ।৩৬।
অর্থ-এই ধরনের আততায়িদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সংহার করা আমাদের উচিত্ হবে না। হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কিলাভ হবে।এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব।