পুর্বাভ্যাসেন তেনৈব হ্রিয়তে হ্যবশোপি সঃ ।
জিজ্ঞাসুরপি যোগস্য শব্দব্রহ্মাতিবর্ততে ॥ ৪৪
অর্থ-তিনি পুর্ব জন্মের অভ্যাস বশে যেন অবশ হয়েও যোগ সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই প্রকার যোগশাস্ত্র জিজ্ঞাসু পুরুষ যোগ অনুশিলন করার সময়ই বেদোক্ত সকাম কর্ম মার্গকে অতিক্রম করেন, অর্থাৎ সকাম কর্ম মার্গে যে ফল নিদৃষ্ট আছে, তার থেকে উৎকৃষ্ট লাভ করেন।
প্রযত্নাদ্ যতমানস্তুু যোগী সংশুদ্ধকিল্বিষঃ ।
অনেকজন্মসংসিদ্ধস্ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥ ৪৫
অর্থ-যোগী ইহ জন্মে পুর্বজন্মকৃত যত্ন অপেক্ষা অধিকতর যত্নকরে পাপ মুক্তহয়, পুর্ব জন্মের সাধন সঞ্চিত সংস্কার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করে পরম গতী লাভ করেন।
তপস্বিভ্যোধিকো যোগীজ্ঞানিভ্যোপি মতোহধিকঃ ।
কর্মিভ্যশ্চাধিকো যোগী তস্মাদ্ যোগী ভবার্জুন ॥ ৪৬
অর্থ-যোগী তপস্বীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং সকাম কর্মিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ অতএব হে অর্জুন সর্ব অবস্থাতেই তুমি যোগী হও।
যোগিনামপি সর্বেষাং মদ্গতেনান্তরাত্মনা ।
শ্রদ্ধাবান্ ভজতে যো মাং স মে যুক্ততমো মতঃ ॥ ৪৭
অর্থ-যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন, তিনিই সব চেয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে আমার সঙ্গেযুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের খেকে শ্রেষ্ঠ।
ওঁ তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
আত্মসংযমযোগো নাম ষষ্ঠোঽধ্যাযঃ
০৭.জ্ঞানযোগ
ভগবান উবাচ
ময়ি আসক্তমনাঃ পার্থ যোগম্ যুঞ্জন মদাশ্রয় ।
অসংশয়ম্ সমগ্রম্ মাম্ যথা জ্ঞাস্যসি তত্ শৃনু ।।১
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ আমাতে আসক্ত চিত্ত হয়ে আমাতে মন নিবেশ করে যোগ অভ্যাস করলে,কিভাবে সমস্ত সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে তা শ্রবন কর।
জ্ঞানম্ তে অহম্ স বিজ্ঞানম্ ইদম্ বক্ষামি অশেষতঃ ।
যত্ জ্ঞাত্বা ন ইহ ভূয় অন্যত্ জ্ঞাতব্যম্ অবশিষ্যতে ।।২
অর্থ-আমি এখন তোমাকে পুর্নরুপে ঐশর্য্যময় এবং মাধুর্য্যময় জ্ঞানের কথা বলব যা জানা হলে আর কিছুই জানার থাকে না।
মনুষ্যানাম্ সহস্রেষু কশ্চিত্ যততি সিদ্ধয়ে ।
যততাম অপি সিদ্ধিনাম্ কশ্চিত্ মাম্ বেত্তি তত্ত্বতঃ ।।৩
অর্থ-হজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিত্ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন আর হাজার হাজার সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিত্ একজন আমাকে অর্থাত্ আমার ভগবত্ স্বরুপকে তত্ত্বত অবগত হন।
ভূমিঃ আপঃ অনলঃ বায়ু খমঃ মনঃ বুদ্ধিঃ এব চ ।
অহংঙ্কার ইতি ইয়ম্ মে ভিন্না প্রকৃতি অষ্টধা ৪।।
অর্থ-ভূমি জল বায়ু অগ্নি আকাশ মন বুদ্ধি এবং অহংঙ্কার এই অষ্টপ্রকরে আমার ভিন্নাজড়া প্রকৃতি বিভক্ত।
অপরা ইয়ম্ ইতঃ তু অন্যম্ প্রকৃতিম্ বিদ্ধি মে পরাম্ । জীবভূতাম্ মহাবাহো যয়া ইদম্ ধার্য্যতে জগত্ ।।৫
অর্থ-হে মহাবাহো এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতিত আমার আর একটি উত্কৃষ্ট প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য স্বরূপা ও জীবভূতা, সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জড় জগতকে ধারন করে আছে।
এতত্ যেনীনি ভূতানী সর্বানি ইতি উপধারয় ।
অহম্ কৃত্স্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয় তথা ।।৬
অর্থ-আমার উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উত্পন্ন হয়েছে।অতএব আমিই জগতের উত্পত্তি ও প্রলয়ের মুল কারন।
মত্তঃ পরতরম্ ন অন্যত্ কিঞ্চিত্ অস্তি ধনঞ্জয় ।
ময়ি সর্বম্ ইদম্ প্রোতম্ সুত্রে মনিগণা ইব ।।৭
অর্থ-হে অর্জুন আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নাই। সুত্রে যেমন মনি সমুহ গাথা থাকে তেমনিই সমস্ত বিশ্ব আমাতে ওতপ্রোত ভাবে অবস্থান করে।
রসঃ অহম্ অপ্সু কৌন্তেয় প্রভা অস্মি শশিসুর্য্যয় ।
প্রণবঃ সর্ব বেদেষু শব্দঃ খে খে পৌরুষম্ নৃষু ।।৮
অর্থ-হে কৌন্তেয় আমি জলের রস চন্দ্রসুর্য্রের প্রভা সর্ব বেদের প্রণব আকাশের শব্দ এবং মানুষের পৌরুষ।
পূন্য গন্ধঃ পৃথিব্যাম্ চ তেজ চ অস্মি বিভাবসৌ ।
জীবনম্ সর্বভূতেষূ তপঃ চ অস্মি তপস্বিষু ।।৯
অর্থ-আমি পৃথিবীর পবিত্র গন্ধ অগ্নির তেজ সর্বভূতের জীবন এবং তপস্বিদের তপ।
বীজম্ মাম্ সর্বভূতানাম্ বিদ্ধ পার্থ সনাতনম।
বুদ্ধি বুদ্ধিমতাম্ অস্ম তেজঃ তেস্মি নাম অহম্ ।।১০
অর্থ-হে পার্থ আমাকে স্থাবর জঙ্গম সর্বভূতের কারণ বলে জানবে। আমি বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবংতেজস্বির তেজ।
বলম্ বলবতাম্ চ অহম্ কাম রাগ বিবর্জিতম্ ।
ধর্মা বিরুদ্ধঃ ভূতেষু কামঃ অস্মি ভরতর্ষভ ।১১
অর্থ-হে ভরতর্ষভ আমি বলবানের বিবর্জিত বল। এবং ধর্মের অবিরোধি কামরুপে অমি প্রাণীগনের মধ্যে বিরাজমান।
যে চ এব সাত্তিকা ভাবাঃ রাজসাঃ তমসাঃ চ যে ।
মত্তঃ এব ইতি তান বিদ্ধি ন তু অহম্ তেষু তে ময়ি ।।১২
অর্থ-প্রাণীগনের যে সমস্থ সাত্তিক তামসিক ও রাজসিক ভাব উত্পন্ন হয় তা আমার থেকে উত্পন্ন হয় বলে জনবে। যদিও তারা আমার থেকে উত্পন্ন তথাপি আমি সে সমস্ত ভাবের অধিন নই। কিন্তু সে সমস্ত ভাব আমার অধিন।
ত্রিভিঃ গুনময়ৈঃ ভাবৈঃ এভিঃ সর্বম্ ইদম্ জগত্ ।
মোহিতম্ ন অভিজানাতি মাম্ এভ্যঃ পরম্ অব্যয়ম্ ।।১৩
অর্থ-তিনটি গুনের দ্বারা (সত্ত্ব রজ এবং তম) মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগত্ এই সমস্ত ভাবের অতিত এবং অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।
দৈবী হি এষা গুনময়ি মাম্ মায়া দুরত্যয়া ।
মাম্ এব প্রপদ্যন্তে মায়াম্ এতাম্ তরন্তি তে ।।১৪
অর্থ-আমার দৈবী মায়া ত্রিগুনাত্ত্বিকা এবং তা দুরতিক্রমনীয়া। কিন্তু যারা আমাতে প্রপত্তি করেন,তারাই এই মায়া উত্তীর্ন হতে পারেন।