তদ্বুদ্ধয় তদাত্মনঃ তন্নিষ্ঠাঃ তত্পরায়নাঃ ।
গচ্ছন্তি অপুনরা বৃত্তিম জ্ঞান নির্ধুত কল্মষাঃ ।।১৭
অর্থ-যার বুদ্ধি ভগবানের প্রতি উন্মুখ হয়েছে মন ভগবানের চিন্তায় একাগ্র হয়েছে, নিষ্টা ভগবানে দৃঢ় হয়েছে,এবং যিনি ভগবানকে তার একমাত্র আশ্রয় বলে গ্রহন করেছেন,জ্ঞানের দ্বারা তার সমস্ত কলুষ সম্পুর্নরুপে বিধৌত হয়েছে এবং তিনি জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছে।
বিদ্যা বিনয় সম্পন্নে ব্রহ্মনে গবি হস্তিনি ।
শুনি চ এব শ্বপাকে চ পন্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ।।১৮
অর্থ-যথার্থ জ্ঞানবান পন্ডিত বিদ্যাবিনয় সম্পন্ন ব্রাহ্মন গাভী হস্তি,কুকুর ও চন্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শি হয়।
ইহ এব তৈঃ জিতঃ সর্গ যেষাম্ সাম্যে স্থিতম্ মনঃ ।
নির্দোশম হি সমম ব্রহ্ম তস্মাত্ ব্রহ্মনি তে স্থিতাঃ ।।১৯
অর্থ-যাদের মন সাম্যে অবস্থিত হয়েছে তারা ইহ লোকেই সংসার জয় করেছেন।তারা ব্রহ্মের মতো নির্দোশ।তারা ব্রহ্মতেই অবস্থিত হয়ে আছে।
প্রহৃষ্যেত্ প্রিয়ম প্রাপ্য ন উদ্ধিজেত্ প্রাপ্য চ অপ্রিয়ম ।
স্থির বুদ্ধি অসংমুঢ় ব্রহ্মবিদ ব্রহ্মনি স্থিত ।।২০
অর্থ-যে ব্যক্তি প্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে উত্ফুল্য হয় না এবং অপ্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতেও বিচলিত হয় না,যিনি স্থিরবুদ্ধি মোহশুন্য এবং ভগবত্ তত্ত্ববেত্তা তিনি ব্রহ্মতেই অবস্থিত রয়েছে।
বাহ্যস্পর্শেষু অসক্তত্মা বিন্দতি আত্মনি যত্ সুখম্ ।
সঃ ব্রহ্ম যোগযুক্তত্মা সুখম্ অক্ষরম অশ্নুতে ।২১।
অর্থ-সেই ব্রহ্মবিদ পুরুষ কোন রকম জড় ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হন না, তিনি চিত্জগত্ সুখ লাভ করেন।ব্রহ্মে যোগযুক্ত হয়ে তিনি অক্ষয় সুখ ভোগ করেন।
যে হি সংস্পর্শেজাঃ ভোগাঃ দুঃখ যোনয়ঃ এব তে ।
আদি অন্তবন্তঃ কৌন্তেয় ন তেষু রমতে বুধঃ ।।২২
অর্থ-বিবেকবান পুরুষ ইন্দ্রিয়জাত দুঃখজনক বিষয় ভোগে আসক্ত হন না।হে কৌন্তেয় এই ধরনের সুখ-ভোগ উত্পত্তি হয় এবং বিনাশশীল।তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা তাতে প্রীতি লাভ করেন না।
শক্নোতি ইহৈব যঃ সোঢুম্ প্রাক শরির বিমোক্ষণাত্ ।
কাম ক্রোধ উদ্ভবম্ বেগম্ সঃ যুক্তঃ সঃ সুখী নরঃ ।।২৩
অর্থ-এই দেহ ত্যাগ করার পুর্বে যিনি কাম ক্রোধ ইত্যাতির বেগ সহ্য করতে সক্ষম হন, তিনিই যোগী এবং এই জগতে তিনিই সুখী হন।
যঃ অন্তঃ-সুখঃ অন্তরারামঃ তথা অন্তর্জোতিঃ এব যঃ ।
সঃযোগী ব্রহ্ম নির্বানম্ ব্রহ্মভূতঃ অধিগচ্ছতি ।।২৪
অর্থ-যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব করেন যিনি আত্মাতেই ক্রীড়াযুক্ত এবং আত্মজ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত তিনিই যোগী এবং তিনিই ব্রহ্ম নির্বান লাভ করেন।
লভন্তে ব্রহ্মনির্বানম ঋষয় ক্ষীন কল্মষাঃ ।
ছিন্ন দ্বৈধাঃ যতাত্মনঃ সর্বভূত হিতে রতাঃ ।।২৫
অর্থ-সংযত চিত্তে সমস্ত জীবের কল্যানেরত এবং সংশয় রহিত নিস্পাপ ঋষীগন ব্রহ্ম নির্বান লাভ করে।
কাম ক্রোধ বিমুক্তানাম্ যতীনাম্ যতচেতসাম্ ।
অভিতঃ ব্রহ্ম নির্বানম্ বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ ।।২৬
অর্থ-কাম ক্রোধ শুন্য সংযত চিত্ত আত্মতত্ত্ব সন্নাসিরা অচিরেই ব্রহ্ম লাভ করেন।
স্পর্শান কৃত্বা বহিঃ বাহ্যান চক্ষুঃ চ এব অন্তরে ভ্রুবোঃ ।
প্রাণাপাণৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তর চারিনৌ ।।২৭
যত ইন্দ্রিয় মনঃ বুদ্ধি মুনি মোক্ষ পরায়ণঃ ।
বিগত ইচ্ছা ভয় ক্রোধঃ যঃ সদা মুক্তঃ এব সঃ ।।২৮
অর্থ-মন থেকে বাহ্যজ্ঞান প্রত্যাহার করে,ভ্রুযুগলের মধ্যে দৃষ্টি স্থির করে, নাসিকার মধ্যে বিচরনশীল প্রান ও অপান বায়ুর উর্দ্ধ ও অধোগতি রোধ করে, ইন্দ্রিয় মন ও বুদ্ধি সংযম করে ভয় ও ক্রোধ শুন্য হয়ে যে মুনি সর্বদা বিরাজ করেন,তিনিই নিশ্চিতভাবে জীবন্মুক্ত।
ভোক্তারম যজ্ঞ তপষাম সর্বলোক মহেশ্বরম্ ।
সুহৃদম্ সর্বভূতানাম্ জ্ঞাত্বা মাম্ শান্তিম্ ঋচ্ছতি ।।২৯
অর্থ-আমাকে সমস্ত যজ্ঞ এবং তপস্যার পরম উদ্দেশ্যরুপে জেনে সর্বলোকের মহেশ্বর এবং সকলের উপকারি সুহৃদরুপে আমাকে জেনে যোগীরা জড়জগতের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করে।
ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
কর্মসংন্যাসযোগো নাম পঞ্চমোঽধ্যাযঃ ॥৫॥
০৬.ধ্যানযোগ
ভগবান উবাচ-
অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং করোতি যঃ ।
স সন্ন্যাসী চ যোগী চ নিরগ্নির্নচাক্রিয়ঃ ॥ ১
অর্থ-ভগবান বললেন-যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন তিনি সন্নাসী বা যোগীনন, যিনি কোন রকম ফলের আশা না করে তার কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্নাসী বা যোগী।
যং সন্ন্যাসমিতি প্রাহুর্যোগং তং বিদ্ধি পান্ডব ।
ন হ্যসংন্যস্তসঙ্কল্পো যোগী ভবতি কশ্চন ॥ ২
অর্থ-হে পান্ডব যাকে সন্নাস বলা যায় তাকেই যোগ বলা যায় কারন ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে কখনো যোগী হওয়া যায় না।
আরুরুক্ষোর্মুনের্যোগং কর্ম কারনমুচ্যতে ।
যোগারুঢ়স্য তস্যৈব শমঃ কারণমুচ্যতে ॥ ৩
অর্থ-অষ্টাংঙ্গ যোগ অনুষ্ঠানে যারা নবীন তাদের পক্ষে নিস্কাম কর্ম অনুষ্ঠান করাই উত্কৃষ্ট সাধন, আর যারা ইতিমধ্যে যোগরুঢ় হয়েছেন তাদেও পক্ষে সমস্ত কর্ম থেকে নিবৃত্তিই উত্কৃষ্ট সাধন।
যদা হি নেন্দ্রিয়ার্থেষু ন কর্মস্বনুষজ্যতে ।
সর্বসঙ্কল্প সন্নাসী যোগারুঢ়স্তদোচ্যতে ॥ ৪
অর্থ-যখন যোগীর জড়সুখ ভোগের সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে ইন্দ্রিয় ভোগ্য বিষয়ের প্রতি আসক্ত রহিত হন তখন তারে যোগরুর বলা হয়।