দৈবম্ এব অপরে যজ্ঞম্ যোগিনঃ পর্যুপাসতে ।
ব্রহ্ম অগ্নৌ অপরে যজ্ঞম্ যজ্ঞেন এব উপযুহ্বতী ।।২৫
অর্থ-কোন যোগী অধীদেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার মাধ্যমে তাদের উপসনা করেন।আবার ,অন্য অনেক পরম ব্রহ্মরুপ অগ্নিতে সব কিছু নিবেদন করার মাধ্যমে যজ্ঞ করেন।
শ্রোত্রাদীনি ইন্দ্রিয়ানি অন্যে সংযম্ অগ্নিষু জুহ্বতী ।
শব্দদীন্ বিষয়ান অন্যে ইন্দ্রিয় অগ্নিষু জুহ্বতী ।।২৬
অর্থ-কেউ কেউ মন সংযম রুপ অগ্নিতে শ্রবন আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দেন আবার অন্য অনেকে ( নিয়মনিষ্ঠ গৃহস্তেরা) শব্দাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয়কে ইন্দ্রিয়রুপ অগ্নিতে আহুতি দেন।
সর্বানি ইন্দ্রিয় কর্মানি প্রান কর্মানি চ অপরে ।
আত্ম সংযম্ যোগ অগ্নৌ জুহ্বতী জ্ঞান দীপিতে ।।২৭
অর্থ-মন এবংইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে যারা আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসী তারা তাদের ইন্দ্রিয় সমস্ত কার্য কলাপ এবং প্রান বায়ুর দ্বারা প্রদীপ্ত আত্মা সংযমরুপ অগ্নিতে আহুতী দেন।
দ্রব্যযজ্ঞঃ তপোযজ্ঞঃ যোগযজ্ঞঃ তথা অপরে ।
সাধ্যায় জ্ঞানযজ্ঞাঃ চ যতঃ সংশিত ব্রতাঃ ।।২৮
অর্থ-কেউ কেউ দ্রব্য দানরুপ যজ্ঞ করেন। কেউ কেউ তপস্যারুপ যজ্ঞ করেন কেউ কেউ অষ্টাঙ্গ যোগরুপ যজ্ঞ করেন এবং অন্য অনেকে পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য বেদ অধ্যায়নরুপ যজ্ঞ করেন।
অপানে জুহ্বতীপ্রাণম্ প্রাণে অপানম তথা অপরে ।
প্রাণ অপান গতী রুদ্ধা প্রাণায়াম্ পরায়ণাঃ ।
অপরে নিয়ত আহারাঃ প্রাণান প্রানেষু জুহ্বতী ।।২৯
অর্থ-আর যারা প্রাণায়াম চচ্চায় আগ্রহী তারা অপান বায়ুকে প্রাণবায়ুতে এবং প্রান বায়কে অপান বায়ুতে আহূতী দিয়ে অবশেষে প্রাাণ এবং অপান বয়ুর গতী রোধ করে সমাধিস্থ হন। কেউ আবার আহার সংযম করে প্রাণ বায়ুকে প্রাণবয়ুতেই আহুতী দেন।
সর্বে অপি এতে যজ্ঞবিদঃ যজ্ঞ ক্ষপিত কল্মষাঃ ।
যজ্ঞশিষ্ট অমৃতভূজঃ যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্ ।।৩০
অর্থ-তারা সকলে যজ্ঞ তত্তবিত্ এবং যজ্ঞের প্রভাবে পাপমুক্ত হয়ে তারা যজ্ঞশিষ্ট অমৃত আস্ব্বাদন করেন। তারপর সনাতন প্রকৃতিতে ফিরে যান।
ন অয়ম্ লোকাঃ অস্তি অযজ্ঞস্য কুতঃ অন্যঃ কুরুসত্তম্ ।।৩১
অর্থ-যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউ এই জগতে সুখে থাকতে পারে না, সুতরাং পরলোক প্রাপ্তির পরে তাদের কি হবে?
এবম্ বহুবিধাঃ যজ্ঞাঃ বিততাঃ ব্রাহ্মন মুখে ।
কর্মজান বিদ্ধি তান সর্বান এবম্ জ্ঞাত্বা বিমক্ষ্যসে ।।৩২
অর্থ-এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিগ শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়েছে এবংএই সমস্ত যজ্ঞ বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত। তা যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে তুমি মুক্তি লাভ করতে পারবে।
শ্রেয়ান দ্রব্যময়াত্ যজ্ঞাত্ জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ ।
সর্বম্ কর্ম অখিলম্ পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।।৩৩
অর্থ-হে পান্ডব দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়-হে পার্থ সমস্ত কর্মই চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।
তত্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া ।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানম্ জ্ঞানিনঃ তত্ত্বঃ দর্শিনঃ ।।৩৪
অর্থ-সদগুরু শরনাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃতিম সেবার দ্বারা তাকে সন্তুষ্ট কর তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষ তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবে।
যত্ জ্ঞাত্বা ন পুন মোহম এবম্ যাস্যসি পান্ডবা ।
যেন ভূতানি অশেষানি দ্রক্ষ্যসি আত্মনি অথো ময়ি ।।৩৫
অর্থ-হে পান্ডব এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না।যখন জানবে সমস্থ জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।
অপি চেত্ অসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপ কৃত্তমঃ ।
সর্বম জ্ঞানপ্ল্লাবেন এব বৃজিনম্ সন্তরিষ্যসি ।।৩৬
অর্থ-তুমি যদি পাপিদের চেয়েও পাপিষ্ট হয়ে বলে গন্য হয়ে থাক,তা হলে এই জ্ঞানরুপ তরনীতে আরেহন করে তুমি দুঃখ সমুদ্র পার হতে পারবে।
যথা এধাংসী সমিদ্ধঃ অগ্নিঃ ভস্মস্যাঃ কুরুতে অর্জুন ।
জ্ঞানাগ্নি সর্ব কর্মানি ভস্মস্যাত্ কুরুতে তথা ।।৩৭
অর্থ-প্রবল রুপে প্রজ্জলিত অগ্নি যেমন কাষ্টকে ভস্মস্যাত্ করে ,হে অর্জুন তেমনী জ্ঞানাগ্নি সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করে ফেলে।
ন হি জ্ঞানেন সদৃশম্ পবিত্রম্ ইহ বিদ্যতে ।
তত্ সময় যোগ সংসিদ্ধঃ কালেন আত্মনি বিন্দতি ।।৩৮
অর্থ-চিন্ময় তত্ত্ব জ্ঞানের মত পবিত্র পদার্থ এই জগতে আর নাই। এই জ্ঞান সমস্ত যোগের ফলশ্রুতি এবং ভক্তি চর্চ্চার মাধ্যমে যিনি সেই জ্ঞান আয়ত্ত করেন,তিনি কালক্রমে আত্মার পরাশক্তি লাভ করে।
শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্ তত্পরঃ সংযত ইন্দ্রিয়ঃ।
জ্ঞানম্ লব্ধা পরাম্ শান্তিম্ অচিরেন অধিগচ্ছতি ।।৩৯
অর্থ-সংযতেন্দ্রিয় ও তত্পর হয়ে চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি এইজ্ঞান লাভ করেন,সেই দিব্যজ্ঞান লাভ করে তিনি অচিরেই পরাশান্তি লাভ হন।
অজ্ঞঃ চ অশ্রদ্দধ্যানঃ চ সংশয় আত্মা বিনশ্যতি ।
ন অয়ম লোক অস্তি ন পরাঃ ন সুখম্ সংশয় আত্মম ।।৪০
অর্থ-মুর্খ এবং শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখন ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না।সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহ লোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।
যোগ সংন্যাস্ত কর্মনাম জ্ঞান সংছিন্ন সংশয়ম ।
আত্মবন্তম ন কর্মনি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।।৪১
অর্থ-অতএব হে ধনঞ্জয় যিনি নিস্কাম কর্ম যোগের দ্বারা কর্মত্যাগ করেন,জ্ঞনের দ্বারা সংশয় নাশ করেন এবং আত্মার চিন্ময় সরুপ অবগত হন তাকে কোন কর্মে আবদ্ধ করতে পারে না।