আমার মিলন লাগি তুমি
আমার মিলন লাগি তুমি আসছ কবে থেকে!
তোমার চন্দ্র সূর্য তোমায় রাখবে কোথায় ঢেকে?।
কতকালের সকাল-সাঁঝে তোমার চরণধ্বনি বাজে,
গোপনে দূত হৃদয়-মাঝে গেছে আমায় ডেকে ॥
ওগো পথিক, আজকে আমার সকল পরান ব্যেপে
থেকে থেকে হরষ যেন উঠছে কেঁপে কেঁপে।
যেন সময় এসেছে আজ ফুরালো মোর যা ছিল কাজ–
বাতাস আসে, হে মহারাজ, তোমার গন্ধ মেখে ॥
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ॥
দেহমনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে,
গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ॥
আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,
দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।
বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা–
জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।
আমার মুখের কথা তোমার
আমার মুখের কথা তোমার নাম দিয়ে দাও ধুয়ে,
আমার নীরবতায় তোমার নামটি রাখো থুয়ে।
রক্তধারার ছন্দে আমার দেহবীণার তার
বাজাক আনন্দে তোমার নামেরই ঝঙ্কার।
ঘুমের ‘পরে জেগে থাকুক নামের তারা তব,
জাগরণের ভালে আঁকুক অরুণলেখা নব।
সব আকাঙক্ষা আশায় তোমার নামটি জ্বলুক শিখা,
সকল ভালোবাসায় তোমার নামটি রহুক লিখা।
সকল কাজের শেষে তোমার নামটি উঠুক ফ’লে,
রাখব কেঁদে হেসে তোমার নামটি বুকে কোলে।
জীবনপদ্মে সঙ্গোপনে রবে নামের মধু,
তোমায় দিব মরণ-ক্ষণে তোমারি নাম বঁধু ॥
আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি তোমারে নাথ
আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারি নি তোমারে নাথ–
আমার লাজ ভয়, আমার মান অপমান, সুখ দুখ ভাবনা ॥
মাঝে রয়েছে আবরণ কত শত, কতমতো–
তাই কেঁদে ফিরি, তাই তোমারে না পাই,
মনে থেকে যায় তাই হে মনের বেদনা ॥
যাহা রেখেছি তাহে কী সুখ–
তাহে কেঁদে মরি, তাহে ভেবে মরি।
তাই দিয়ে যদি তোমারে পাই কেন তা দিতে পারি না?
আমার জগতের সব তোমারে দেব, দিয়ে তোমায় নেব– বাসনা ॥
আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি
আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি–
আমার যত বিত্ত, প্রভু, আমার যত বাণী ॥
আমার চোখের চেয়ে দেখা, আমার কানের শোনা,
আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা–
সব দিতে হবে ॥
আমার প্রভাত, আমার সন্ধ্যা হৃদয়পত্রপুটে
গোপন থেকে তোমার পানে উঠবে ফুটে ফুটে।
এখন সে যে আমার বীণা, হতেছে তার বাঁধা,
বাজবে যখন তোমার হবে তোমার সুরে সাধা–
সব দিতে হবে ॥
তোমারি আনন্দ আমার দুঃখে সুখে ভ’রে
আমার ক’রে নিয়ে তবে নাও যে তোমার ক’রে।
আমার ব’লে যা পেয়েছি শুভক্ষণে যবে
তোমার ক’রে দেব তখন তারা আমার হবে–
সব দিতে হবে ॥
আমার সকল রসের ধারা
আমার সকল রসের ধারা
তোমাতে আজ হোক-না হারা ॥
জীবন জুড়ে লাগুক পরশ, ভুবন ব্যেপে জাগুক হরষ,
তোমার রূপে মরুক ডুবে আমার দুটি আঁখিতারা ॥
হারিয়ে-যাওয়া মনটি আমার
ফিরিয়ে তুমি আনলে আবার ॥
ছড়িয়ে-পড়া আশাগুলি কুড়িয়ে তুমি লও গো তুলি,
গলার হারে দোলাও তারে গাঁথা তোমার ক’রে সারা ॥
আমার সুরে লাগে তোমার হাসি
আমার সুরে লাগে তোমার হাসি,
যেমন ঢেউয়ে ঢেউয়ে রবির কিরণ দোলে আসি ॥
দিবানিশি আমিও যে ফিরি তোমার সুরের খোঁজে,
হঠাৎ এ মন ভোলায় কখন তোমার বাঁশি ॥
আমার সকল কাজই রইল বাকি, সকল শিক্ষা দিলেম ফাঁকি।
আমার গানে তোমায় ধরব ব’লে উদাস হয়ে যাই যে চলে,
তোমার গানে ধরা দিতে ভালোবাসি ॥
আমারে কে নিবি ভাই, সঁপিতে চাই আপনারে
আমারে কে নিবি ভাই, সঁপিতে চাই আপনারে।
আমার এই মন গলিয়ে কাজ ভুলিয়ে সঙ্গে তোদের নিয়ে যা রে॥
তোরা কোন্ রুপের হাটে চলেছিস ভবের বাটে,
পিছিয়ে আছি আমি আপন ভারে–
তোদের ওই হাসিখুশি দিবানিশি দেখে মন কেমন করে॥
আমার এই বাঁধা টুটে নিয়ে যা লুটেপুটে–
পড়ে থাক্ মনের বোঝা ঘরের দ্বারে–
যেমন ওই এক নিমেষে বন্যা এসে
ভাসিয়ে নে যায় পারাবারে॥
এত যে আনাগোনা কে আছে জানাশোনা,
কে আছে নাম ধ’রে মোর ডাকতে পারে ?
যদি সে বারেক এসে দাঁড়ায় হেসে
চিনতে পারি দেখে তারে॥
আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন্ খ্যাপা সে
আমারে পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন্ খ্যাপা সে !
ওরে, আকাশ জুড়ে মোহন সুরে কী যে বাজে কোন্ বাতাসে॥
গেল রে, গেল বেলা, পাগলের কেমন খেলা–
ডেকে সে আকুল করে, দেয় না ধরা।
তারে কানন গিরি খুঁজে ফিরি, কেঁদে মরি কোন্ হুতাশে॥
আমারে তুমি অশেষ করেছ
আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব–
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব।
কত-যে গিরি কত-যে নদী-তীরে
বেড়ালে বহি ছোট এ বাঁশিটিরে,
কত যে তান বাজালে ফিরে ফিরে
কাহারে তাহা কব।।
তোমানি ঐ অমৃতপরশে আমার হিয়াখানি
হারালো সীমা বিপুল হরষে, উথলি’ উঠে বাণী।
আমার শুধু একটি মুঠি ভরি
দিতেছ দান দিবস-বিভাবরী–
হল না সারা কত-না যুগ ধরি,
কেবলি আমি লব।
আমারে তুমি কিসের ছলে পাঠাবে দূরে
আমারে তুমি কিসের ছলে পাঠাবে দূরে,
আবার আমি চরণতলে আসিব ঘুরে ॥
সোহাগ করে করিছ হেলা টানিব ব’লে দিতেছ ঠেলা–
হে রাজা, তব কেমন খেলা রাজ্য জুড়ে ॥
আমারে দিই তোমার হাতে
আমারে দিই তোমার হাতে
নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥
দিনে দিনেই ফুল যে ফোটে, তেমনি করেই ফুটে ওঠে
জীবন তোমার আঙিনাতে
নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥
বিচ্ছেদেরই ছন্দে লয়ে
মিলন ওঠে নবীন হয়ে।
আলো-অন্ধকারের তীরে হারায়ে পাই ফিরে ফিরে,
দেখা আমার তোমার সাথে
নূতন ক’রে নূতন প্রাতে॥